ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

অগ্নিকাণ্ড রোধে মহানবীর (সা.) ৫ নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৪
অগ্নিকাণ্ড রোধে মহানবীর (সা.) ৫ নির্দেশনা

মহান আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি আগুন। এতে আল্লাহ নানা ধরনের কল্যাণ ও উপকারিতা রেখেছেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যে আগুন প্রজ্বলিত করো তা লক্ষ্য করে দেখেছ কি? তোমরাই কি তার বৃক্ষ সৃষ্টি করো, না আমি সৃষ্টি করি? আমি একে করেছি নিদর্শন ও মরুচারীদের প্রয়োজনীয় বস্তু। ’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৭১-৭৩)

আগুন আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন

আগুন আল্লাহর সৃষ্টি এবং তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন।
তাঁর ইচ্ছায় তা প্রজ্বলিত এবং নির্বাপিত হয়। তিনি চাইলেই আগুনের ক্ষতিকর বৈশিষ্ট্য রোধ করতে পারেন। ইবরাহিম (আ.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি বললাম, হে আগুন! তুমি ইবরাহিমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। তারা তার ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করেছিল।
কিন্তু আমি তাদের করে দিলাম সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত। ’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৬৯-৭০)

আগুনের প্রকার

কোরআন ও হাদিসের বর্ণনা থেকে চার প্রকারের আগুনের বর্ণনা পাওয়া যায়। তা হলো :

১. এমন আগুন, যার ঔজ্জ্বল্য ও দহন ক্ষমতা আছে। এটা সাধারণ আগুন।

২. এমন আগুন, যার ঔজ্জ্বল্য নেই, তবে দহন ক্ষমতা আছে। এটা জাহান্নামের আগুন।

৩. এমন আগুন, যার ঔজ্জ্বল্য আছে, দহন ক্ষমতা নেই। সেই আগুন আল্লাহ যা গাছে সৃষ্টি করেছিলেন এবং মুসা (আ.) তার কাছে দাঁড়িয়ে কথা বলেছিলেন।

৪. এমন আগুন, যার ঔজ্জ্বল্য ও দহন ক্ষমতা কোনোটাই নেই।
এটা হলো লাকড়ির ভেতর থাকা সুপ্ত দাহ্য ক্ষমতা, যা আগুনের স্পর্শে ছড়িয়ে পড়ে।
(তাফসিরে রুহুল মাআনি : ৪/৭৯)

কল্যাণকর ব্যবহারই কাম্য

আগুনের দাহ্য ক্ষমতাকে কল্যাণ ও অকল্যাণ উভয় প্রকার কাজে ব্যবহারের সুযোগ আছে। তবে ইসলাম আগুনের কল্যাণকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলে। আগুনের কল্যাণকর ব্যবহার বর্ণনা করে কোরআনে সেই নির্দেশনাই দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তোমাদের জন্য সবুজ বৃক্ষ থেকে আগুন উৎপাদন করেন এবং তোমরা তা থেকে প্রজ্বলিত করো। ’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৮০)

কোরআনের শিক্ষা

আগুনের বহুল প্রচলিত আরবি প্রতিশব্দ ‘নার’। পবিত্র কোরআনে নার শব্দটি জাহান্নাম বা অগ্নিশাস্তির অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ ‘নার’ থেকে সতর্ক করেছেন। জাহান্নাম বা অগ্নিশাস্তি পরকালীন বিষয় হলেও সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলো থেকে এই শিক্ষা নেওয়া সম্ভব যে আগুন আল্লাহর শাস্তি দানের মাধ্যম, তার ধ্বংসাত্মক ও ক্ষতিকর দিকগুলো প্রবল। ফলে আগুন থেকে পরকালীন জীবনের মতো ইহকালীন জীবনেও সতর্কতা কাম্য। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সেই আগুনকে ভয় কোরো, মানুষ ও পাথর হবে যার ইন্ধন। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৪)

অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে করণীয়

রাসুলুল্লাহ (সা.) অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে একাধিক হাদিসে সতর্ক করেছেন। যার মূল বিষয় হলো সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। যেমন—

১. শত্রু বিবেচনা করা : নবীজি (সা.) আগুনকে শত্রুস্বরূপ বলেছেন। যেন মানুষ তা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। মহানবী (সা.) বলেন, এই আগুন নিঃসন্দেহে তোমাদের চরম শত্রু। সুতরাং যখন ঘুমাতে যাবে, তখন তা নিভিয়ে দেবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৯৪)

২. উদাসীনতা নয় : আগুনের বিষয়ে কোনো ধরনের উদাসীনতা কাম্য নয়, বরং মুমিন আগুনের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা ঘুমাবে তখন তোমাদের ঘরে আগুন রেখে ঘুমাবে না। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৯৩)

৩. পূর্ব-ব্যবস্থা গ্রহণ : দুর্ঘটনা ঘটার পর প্রতিবিধান নয়, বরং দুর্ঘটনা প্রতিরোধই ইসলামের নীতি। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে পূর্ব থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমাদের পানাহারের পাত্রগুলো ঢেকে রাখবে। আর ঘুমাবার সময় (ঘরের) দরজাগুলো বন্ধ করবে এবং বাতিগুলো নিভিয়ে ফেলবে। কেননা প্রায়ই দুষ্ট ইঁদুরগুলো জ্বালানো বাতির ফিতাগুলো টেনে নিয়ে যায় এবং ঘরের লোকজনকে পুড়িয়ে মারে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৯৫)

৪. সচেতনতা তৈরি : রাসুলুল্লাহ (সা.) অসংখ্য হাদিসে অগ্নিদুর্ঘটনার ব্যাপারে মুসলমানদের সতর্ক করেছেন। যার দ্বারা প্রমাণিত হয়, মুসলিম সমাজের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্ব হলো অগ্নিদুর্ঘটনার ব্যাপারে সমাজে সচেতনতা তৈরি করা।

৫. আল্লাহকে স্মরণ করা : অগ্নিদুর্ঘটনার সম্ভাবনা আছে এমন কাজগুলো করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করা উত্তম। মহানবী (সা.) বলেন, তুমি তোমার ঘরের দরজা বন্ধ করে দাও এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কোরো। তোমার ঘরের বাতি নিভিয়ে দাও এবং আল্লাহ‌র নাম স্মরণ কোরো। তোমার পানি রাখার পাত্রের মুখ ঢেকে রাখো এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কোরো। তোমার বাসনপত্র ঢেকে রাখো এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কোরো। সামান্য কিছু হলেও তার ওপর দিয়ে রেখে দাও। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩২৮০)

অগ্নিদগ্ধ হওয়া থেকে বাঁচার দোয়া

রাসুলুল্লাহ (সা.) অগ্নিদগ্ধ হওয়াসহ যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু থেকে বাঁচতে নিম্নোক্ত দোয়া শিখিয়েছেন। তিনি দোয়া করতেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি ওপর থেকে পড়ে যাওয়া, ঘরচাপা পড়া, পানিতে ডুবে যাওয়া এবং আগুনে দগ্ধীভূত হওয়া থেকে। আর আমি মৃত্যুকালে শয়তানের ছোঁ মারা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, আর আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি আপনার পথে পৃষ্ঠ প্রদর্শন অবস্থায় মারা যাওয়া থেকে এবং আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি সাপ-বিচ্ছুর দংশনে মৃত্যুবরণ করা থেকে। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫৫৩১)

অগ্নিকাণ্ড শুরু হলে করণীয়

অগ্নিকাণ্ড শুরু হলে প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে ‘তাকবির’ (আল্লাহু আকবার) বলা সুন্নত। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা যখন অগ্নিকাণ্ড দেখবে তাকবির দেবে। কেননা তাকবির আগুন নির্বাপিত করে। (জামিউস সগির, হাদিস : ৬৩৭)

আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) উল্লিখিত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, আগুন থেকে শয়তানকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই আগুনের ওপর শয়তানের প্রভাব আছে। আগুন ও শয়তান উভয়ে নিজের বড়ত্ব প্রকাশ করতে চায়। তাই বান্দা যখন আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করে তখন আগুন শয়তানের প্রতাপ কমে যায়। (জাদুল মাআদ : ৪/১৯৪)

অগ্নি-নাশকতার শাস্তি

ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো ব্যক্তি বা কারো ঘরবাড়ি বা সহায়-সম্পদ অগ্নিদগ্ধ করা গুরুতর অপরাধ। ইসলামী আইনে এর শাস্তি গুরুতর। রাসুলুল্লাহ (সা.) শরিয়ত অনুমোদিত প্রাণদণ্ড বাস্তবায়নেও অগ্নিদগ্ধ করার অনুমতি দেননি। তিনি বলেন, আল্লাহ ছাড়া কেউ আগুন দিয়ে শাস্তি দিতে পারবে না। কাজেই তোমরা যদি তাদের উভয়কে পাও, তবে তাদের হত্যা কোরো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩০১৬)

এখন কেউ যদি নাশকতার জন্য কোনো অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে থাকে, তবে হানাফি মাজহাব অনুসারে অগ্নিকাণ্ডের কারণে আর্থিক ক্ষতিপূরণ নেওয়া হবে। আর এতে কারো প্রাণ গেলে অপরাধীকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হবে। (বাদায়িউস সানায়ে : ৭/২৪৫)

শাফেয়ি ও মালেকি মাজহাব অনুসারে অগ্নিদগ্ধ হয়ে কেউ মারা গেলে অগ্নিদগ্ধ করে নাশকতাকারীর মৃত্যুদণ্ড বাস্তবায়ন করা হবে। (আল হাভি আল কাবির : ১২/১০৯, আল মুগনি লি-ইবনে কুদামা : ৮/৩০৪)

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৪
ইসলাম ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।