ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

পদ-পদবির লোভ যেভাবে পতন ডেকে আনে

ইসলাম ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৪
পদ-পদবির লোভ যেভাবে পতন ডেকে আনে

পদ-পদবির লোভ সম্পদের লোভের চেয়ে ভয়ংকর। মানুষ পদ-পদবির জন্য সম্পদ পানির মতো ব্যয় করে।

এজন্য হেন কাজ নেই, যা সে করতে পারে না। নিম্নে পদ-পদবির লোভ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো— 

নেতৃত্ব ও সম্পদ লাভের মাধ্যমে মর্যাদা অর্জন করা

সম্পদ ও নেতৃত্বের মোহ অত্যন্ত ক্ষতিকর বস্তু, যা মানুষকে আখিরাতের মর্যাদা ও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আখিরাতের এই গৃহ (অর্থাৎ জান্নাত) আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি সেসব মুমিনের জন্য, যারা দুনিয়াতে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে না এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর শুভ পরিণাম শুধু আল্লাহভীরুদের জন্য। ’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৮৩)

ইসলামের নীতি হলো, নেতৃত্ব চেয়ে নেওয়া যাবে না। রাসুল (সা.) আবদুর রহমান বিন সামুরা (রা.)-কে বলেন, ‘তুমি নেতৃত্ব চেয়ে নিয়ো না। কেননা যদি তুমি সেটা চাওয়ার মাধ্যমে প্রাপ্ত হও, তাহলে তোমাকে তার দিকে সোপর্দ করা হবে (আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত করা হবে)। আর যদি না চেয়ে পাও, তাহলে তুমি সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬২২)

পদমর্যাদা লাভ দুনিয়ায় আনন্দের বিষয়, কিন্তু আখিরাতে তা অনুতাপের বিষয় হবে। কেননা পদমর্যাদার যথাযথ হক বুঝিয়ে দেওয়া সেদিন খুবই কষ্টকর হবে।

আবু মুসা আশআরি (রা.)-এর দুজন সঙ্গী যখন রাসুল (সা.)-এর কাছে প্রশাসনিক পদ প্রার্থনা করে, তখন তিনি তাদের বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজে এমন কাউকে নিযুক্ত করি না, যে পদ চেয়ে নেয়। এবং এমন ব্যক্তিকেও নয়, যে পদের লোভ করে বা তার প্রত্যাশা করে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৭১৪৯)

নেতৃত্ব ও পদমর্যাদার লোভ মানুষকে ফিতনায় নিপতিত করে। কেননা পদপ্রার্থী হওয়ার জন্য সে আগ্রাসী হয়ে ওঠে এবং জীবন ও সম্পদ সবকিছু বিলিয়ে দেয়। আর পদপ্রাপ্তির পর সে একদিকে অহংকারী হয়।

রাসুল (সা.) বলেন, হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেছেন, ‘অহংকার আমার চাদর, বড়ত্ব আমার পাজামা। যে ব্যক্তি আমার উক্ত দুই বস্তু টানাটানি করবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৯০)

দ্বিনি কাজের মাধ্যমে মর্যাদা ও বড়ত্ব কামনা করা 

দ্বিনি কাজের মাধ্যমে মর্যাদা ও বড়ত্ব কামনা করার দুটি দিক—

এক. দ্বিনের বিনিময়ে সম্পদ উপার্জন করা। এটি সম্পদের লোভের চেয়ে অনেক বেশি মন্দ ও অনেক বেশি ক্ষতিকর। কেননা ইলম ও আমলের মাধ্যমে আখিরাত সন্ধান করা হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য তালাশ করা হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা গাঢ় অন্ধকার রাতের অংশসদৃশ ফিতনায় পতিত হওয়ার আগে দ্রুত সত্কর্মের দিকে ধাবিত হও। যখন মানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠবে মুমিন অবস্থায় আর সন্ধ্যা করবে কাফির অবস্থায়, আর সন্ধ্যা করবে মুমিন অবস্থায় এবং সকালে উঠবে কাফির অবস্থায়; সে দুনিয়ার বিনিময়ে তার দ্বিনকে বিক্রি করবে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৮)

দুই. ইলম, আমল ও দুনিয়া ত্যাগের মাধ্যমে মানুষের ওপর নেতৃত্ব করা ও শ্রেষ্ঠত্ব কামনা করা। যাতে মানুষ তাকে বড় আলেম মনে করে এবং সবাই তার দিকে তাকায়। এর পরিণাম জাহান্নাম ছাড়া কিছুই নয়। কাব বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইলম শিখে এজন্য যে এর মাধ্যমে সে আলেমদের সঙ্গে মোকাবিলা করবে অথবা বোকাদের সঙ্গে ঝগড়া করবে কিংবা লোকদের চেহারা তার দিকে ফিরিয়ে নেবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৫৪)

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৪
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।