ইসলাম মানুষকে কল্যাণকামী হতে শেখায়। অপরের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত করতে উৎসাহী করে।
শয়তান মানুষকে বিপদ ফেলতে সর্বদা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ মানবজাতিকে শয়তানের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক করতে গিয়ে বলেন, ‘হে বনি আদম, শয়তান যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করে, যেভাবে সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল; সে তাদের পোশাক টেনে নিচ্ছিল, যাতে সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাতে পারে। নিশ্চয় সে ও তার দলবল তোমাদের দেখে যেখানে তোমরা তাদেরকে দেখো না। নিশ্চয় আমি শয়তানদের তাদের জন্য অভিভাবক বানিয়েছি, যারা ঈমান গ্রহণ করে না। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৭)
পৃথিবীতেও শয়তানের কিছু অনুসারী আছে, যারা সারাক্ষণ অন্যের ক্ষতি করে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে। অন্যকে ফাঁসিয়ে দিতে জঘন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। অথচ প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের ক্ষতিসাধন করে অথবা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সে অভিশপ্ত। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪১)
কিছু মানুষ মিথ্যা নাটক সাজিয়ে অন্যকে জনসম্মুখে নিন্দিত করার জন্য চক্রান্তে লিপ্ত থাকে, তারা মূলত নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করে, যা তারা তাৎক্ষণিক অনুধাবন করতে পারে না।
পবিত্র কোরআনের ভাষ্য মতে, যারা চক্রান্ত করে, তাদের চক্রান্ত তাদেরই ঘিরে ধরে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ কিছু চক্রান্তকারী দুষ্ট লোকদের নিন্দা করতে গিয়ে বলেন, ‘আর তারা দৃঢ়তার সঙ্গে আল্লাহর নামে কসম করে বলত যে, যদি তাদের কাছে কোনো সতর্ককারী আসে, তাহলে তারা অবশ্যই অন্য যেকোনো জাতির চেয়ে অধিক হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে; কিন্তু যখন তাদের কাছে সতর্ককারী এলো, তখন তা কেবল তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি করল।
জমিনে উদ্ধত আচরণ আর কুচক্রান্ত। কুচক্রান্ত তাকেই ঘিরে ধরবে যে তা করবে। তাহলে তারা কি তাদের পূর্ববর্তীদের ওপর (আল্লাহর পক্ষ থেকে) যে বিধান প্রয়োগ করা হয়েছে তারই অপেক্ষা করছে? তুমি আল্লাহর বিধানে কখনো কোনো পরিবর্তন পাবে না। তুমি আল্লাহর বিধানে কখনো কোনো ব্যতিক্রম পাবে না। ’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৪২-৪৩)
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু সিরমা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্য কারো ক্ষতিসাধন করে, আল্লাহ তাআলা তা দিয়েই তার ক্ষতিসাধন করেন। যে ব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাকে কষ্টের মধ্যে ফেলেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪০)
কারো বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা, কাউকে কষ্টে ফেলে দেওয়া কল্যাণ বয়ে আনে না; বরং এগুলো মানুষকে তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। মহান আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে দেয়। যে অন্যের ক্ষতি করে, মহান আল্লাহ তার ক্ষতি করেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু সিরমাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, কেউ অন্যের ক্ষতি করলে আল্লাহ তার ক্ষতিসাধন করবেন। কেউ অযৌক্তিকভাবে কারো বিরোধিতা করলে আল্লাহ তার বিরোধী হবেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৩৫)
তাই অন্যকে ফাঁসিয়ে, অন্যের ক্ষতি করে স্বার্থ হাসিলে কোনো কল্যাণ নেই। কারো ক্ষতি করে হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করলেও নবীজির ভাষায় সে দেওলিয়া। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের প্রশ্ন করেন, তোমরা কি জানো, দেউলিয়া কে? তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আমাদের মধ্যে দেউলিয়া হচ্ছে ওই ব্যক্তি, যার দিরহামও (নগদ অর্থ) নেই, কোনো সম্পদও নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে ওই ব্যক্তি হচ্ছে দেউলিয়া যে কিয়ামত দিবসে নামাজ, রোজা, জাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে এবং এর সঙ্গে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত (হত্যা) করেছে, কাউকে মারধর করেছে ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল হতে এ ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে, ও ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে। এভাবে সম্পূর্ণ বদলা (বিনিময়) নেওয়ার আগেই তার সৎ আমল নিঃশেষ হয়ে গেলে তাদের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৮)
শুধু তা-ই নয়, যারা এ ধরনের কাজে লিপ্ত, তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। রাসুল (সা.) বলেন, ষড়যন্ত্রকারী ও ধোঁকাবাজের স্থান জাহান্নাম। (সুনানে বায়হাকি)
মহান আল্লাহ সবাইকে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২৪
এএটি