ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

বিশ্ব ইজতেমা কি ও কেন?

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৫
বিশ্ব ইজতেমা কি ও কেন? ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: এখন টঙ্গিতে চলছে বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমা শুধু বাংলাদেশেই হয়- তা নয়।

বরং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সময়ে সময়ে বেশ কিছু ইজতেমা হয়।

কোথাও পুরো দেশের হয়। কোথাও কয়েকটি দেশ মিলে হয়। কখনও কোনো দেশের একটা প্রদেশ বা অঞ্চলেরও ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে মূল ইজতেমা ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় (কয়েকটি জেলা মিলে) ইজতেমা আগেও হয়েছে এবং এখনও হয়। যেগুলোকে আঞ্চলিক ইজতেমা বলা হয়। সাধারণত ইজতেমা যে অঞ্চলে হয়, সেই এলাকার নামানুসারে ওই ইজতেমাটি পরিচিত পায়।

টঙ্গিসহ অন্যান্য স্থানে অনুষ্ঠিত ইজতেমাগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো, দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার লক্ষ্যে বেশি পরিমাণে জামাত আল্লাহর রাস্তায় বের করা। বর্তমান সময়ে কেউ শুধু কয়েকটা বয়ান শুনে ইসলাম পালন শুরু করবে- এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে জামাতে যেয়ে যখন কেউ একনাগাড়ে কিছুটা সময় দ্বীনি পরিবেশে থাকে; তখন তার জন্য ইসলাম মানা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। এজন্য শুধু ইজতেমা নয়, প্রায় সবক্ষেত্রেই দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে মানুষকে জামাতে বের করার চেষ্টা করা হয়। বেশি বেশি ইজতেমা হলে, ইজতেমাকে উপলক্ষ করে অনেকের জন্যই জামাতে বের হওয়া সহজ হয়। এজন্য ইজতেমায় বিশেষভাবে দ্বীনের দাওয়াতের গুরুত্ব এবং ঈমান-আমল সংক্রান্ত কথা বলা হয়। ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে নবী-রাসূল (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামদের (রা.)কষ্ট ও ত্যাগ-তিতীক্ষার বিভিন্ন ঘটনাবলী উল্লেখ করা হয়। এরফলে সাধারণ মানুষ দ্বীনের কাজে আত্মনিয়োগে উৎসাহী হয়। এ জন্য দেখা যায় যে, সারা বছর মিলে যে পরিমাণ জামাত বের হয়, ইজতেমা থেকেই তার অনেক বেশি জামাত আল্লাহর রাস্তার ঈমানের দাওয়াত নিয়ে বের হয়।

ইজতেমা তাবলিগের কাজের কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিধায় সবাইকে এখানে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়। ফলে প্রাসঙ্গিকভাবে তখন ইজতেমার ‘সওয়াবের’ কথা চলে আসে। বস্তুত ইজতেমার মূল আয়োজনে শুধু ঈমান-আমলের কথা বলা হয়, কোরআন তেলাওয়াত শিখানো হয়, নবীদের জীবনী পাঠ করে শোনানো হয়, নফল নামাজ পড়তে উৎসাহী করা হয়, অনেক বড় জামাতের সঙ্গে এসব আমল সম্মিলিতভাবে করা হয়, মূলত সেগুলোর সওয়াবের কারণেই ইজতেমার সওয়াবের কথা বলা হয়। তাছাড়া আলাদাভাবে ইজতেমার কোনো সওয়াব নাই। কেউ যদি বলে বা মনে করে যে, শুধু ইজতেমায় আসলেই সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, তিনবার ইজতেমায় গেলে একবার হজের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে- নিঃসন্দেহে এসব ভুল কথা। সবাইকে এসব থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে।

বস্তুত ইজতেমা বিশেষ উদ্দেশ্যে করা একটি অনুষ্ঠান মাত্র। প্রয়োজনে যার মধ্যে পরিবর্তন আসতে পারে। যেমন আগে পুরো বাংলাদেশের ইজতেমা একসাথে হত। এখন স্থান-সঙ্কুলান না হওয়ার কারণে ইজতেমা দুই বারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাধারণভাবে ইজতেমা সবার জন্য। যে কেউ এখানে আসতে পারেন। তবে ইজতেমাতে মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পর দেখা গেল, অনেকেই শুধু ইজতেমা দেখতে আসেন। কত মানুষ, কতবড় প্যান্ডেল, এসব দেখাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তখন মুরুব্বিদের থেকে নির্দেশনা আসে, যাদের ইজতেমায় আসার দাওয়াত দেওয়া হবে তাদেরকে যেন আসার আগে অন্তত তিন দিন জামাতে সময় দেওয়ানোর পর নিয়ে আসা হয়। যেন তারা একটা দ্বীনি মনোভাব নিয়ে ইজতেমায় আসে এবং ইজতেমার সময়টা সঠিকভাবে ব্যবহার করে। তবে জামাতে সময় না দিয়ে যদি কেউ চলে আসে বা একান্ত দেখার উদ্দেশ্যেও যদি কেউ আসে, তবে তাকে নিষেধ করা হয় না। ময়দানে নিজ এলাকার সাধীদের অবস্থান যেখানে আছে; সেখানে গেলে সবাইকেই হাসিমুখে জায়গা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

এখন প্রশ্ন হলো ইজতেমাতে আসলে কী হয়? কী শিখানো হয়? ইজতেমার দ্বারা সাধারণ মানুষের উপকারই বা কতটুকু হচ্ছে? এসব প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, ইজতেমার মূল আমল হলো- বয়ান। প্রতিদিন ফজর এবং মাগরিবের নামাজের পর লম্বা সময় নিয়ে বয়ান করা হয়। জোহর এবং আসরের পরেও ছোট্ট পরিসরে বয়ান হয়। সকাল সাড়ে দশটার দিকে বিশেষ শ্রেণী বা পেশার মানুষ যেমন ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবি, সাংবাদিক ও আলেমদের নিয়ে আলাদা আলাদা বয়ান হয়। এ সময় মাঠে থাকা অন্যরা তালিমের কাজে ব্যস্ত থাকেন। বয়ান সাধারণত ভারত-পাকিস্তানের বিজ্ঞ আলেম ও মুরুব্বিরা করে থাকেন। বয়ান উর্দুতেই বেশি হয়। পরে এটা সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে বাংলায় অনুবাদ হয়। তবে বাংলাদেশের কেউ বয়ান করলে সরাসরি বাংলাতেই করেন। বিদেশি মেহমানদের জন্য এসব বয়ান তাদের নিজ নিজ ভাষায় অনুবাদ করে শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়, এমনকি শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য বয়ানের মর্মার্থ বুঝানোর ব্যবস্থা রয়েছে।

এ সব বয়ানের মূল উদ্দেশ্য থাকে, মানুষের মধ্যে ঈমানি চেতনা বৃদ্ধি এবং দ্বীনের প্রচার-প্রসারের ভাবনা তৈরি করে তাদেরকে জামাতে বের হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা। এক্ষেত্রে শুধু বয়ানের দ্বারা সবাই তৈরি হয়ে যায় না। বরং পুরো ইজতেমার সময় জামাতে লোকজনকে বের করার জন্য আলাদাভাবে তাশকিল করা হয়। বস্তুত উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে প্রদেয় বয়ান ইজতেমার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর ইজতেমার মুনাজাত হলো, দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে রওয়ানাকারী জামাতের সদস্যদের জন্য। আসলে ইজতেমার আখেরি মুনাজাত ইজতেমা শেষ- এ জন্য করা হয় না। বরং ইজতেমা থেকে অনেক জামাত দেশের বিভিন্ন এলাকায় দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে বের হয়। এসব জামাত রওয়ানা হওয়ার সময় তাদের উদ্দেশ্য নির্দেশনামূলক একটি বয়ান হয়। যাকে হেদায়েতি বয়ান বলা হয়। বয়ান শেষে দ্বীনের রাস্তায় বের হওয়া সব জামাতের জন্য, সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য- বিশেষ মোনাজাত করা হয়। আর এই মুনাজাতের মাধ্যমে ইজতেমা শেষ হয়। দোয়ার পর জামাতগুলো তাদের গন্তব্য জেনে সে উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। হজরত নবী করিম (সা.) কোথাও কোনো জামাত পাঠালে এভাবে তাদেরকে হেদায়েত, নির্দেশনা ও তাদের জন্য আন্তরিক দোয়া দিয়ে বিদায় দিতেন। এ ধারা পরম্পরায় ইজতেমার মাঠে এই বিশেষ দোয়া করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।