ঢাকা: বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত শেষে ঘরমুখো লাখো মুসল্লি। মুসল্লিদের একটি বড় অংশই (যারা রাজধানীতে থাকেন) ইজতেমার মাঠ থেকে পায়ে হেঁটে ঘরে ফেরেন।
টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীর থেকে উত্তরা, বিমানবন্দর হয়ে পায়ে হেঁটে ঘরের উদ্দেশে রওনা হওয়া এসব মানুষের ঢল দেখা গেছে বসুন্ধরা গেট সংলগ্ন প্রগতি সরণিতে। কুড়িল বিশ্ব রোড থেকে হাজার হাজার মানুষের পায়ে হাঁটার এ মিছিল দুপুর আড়াইটার আগেই ছুঁয়ে ফেলে নতুন বাজার পর্যন্ত।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ হয় মানুষের এ পদযাত্রা। তবে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে আসলেও কোনো ক্লান্তির ছাপ পড়েনি মুসল্লিদের মধ্যে। এমনকি কারও চেহারায় কোনো বিরক্তিও দেখা যায়নি। প্রত্যেকেই যেন পায়ে হেঁটে অধিক সওয়াব পাওয়ার প্রত্যাশায় বিভোর।
একাধিক মুসল্লি জানান, মোনাজাতের স্থান থেকে ঘর পর্যন্ত পৌঁছাতে তারা যত কদম (পা) হাঁটবেন তত সওয়াব পাবেন। আর এ সওয়াবের পত্যাশায় তারা পায়ে হেঁটে ঘরে ফিরছেন।
মালিবাগের বসিন্দা মো. ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা হয় নতুন বাজার ওভারব্রিজের নীচে। তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছি। সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর কাছে পাপ মুক্তির কামনা করেছি। আল্লাহ মহান, তিনিই সকল পাপ থেকে মুক্তি দেওয়ার মালিক।
পায়ে হেঁটে ঘরে ফেরার বিষয়ে ইব্রাহিম বলেন, ইজতেমার ময়দান থেকে অনেক মুসল্লি পায়ে হেঁটে ঘরে ফিরছেন। আমিও তাদের সহযাত্রী হয়েছি। ইজতেমার ময়দান থেকে পায়ে হেঁটে আসার কারণে অধিক সওয়াবও পাওয়া যাবে। শুনেছি আল্লাহ্ প্রতি কদমের জন্য অতিরিক্ত সওয়াব দিবেন। এতো পথ পায়ে হেঁটে আসতে একটু কষ্ট হয়েছে, তবে অধিক সওয়াব পাওয়া যাবে এ আশায় সব কষ্ট ভুলে গেছি।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটের সামনে কথা হয় বাড্ডার বাসিন্দা মো. ইয়ানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি প্রতিবার বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করি। মোনাজাত শেষে গাড়ি পাওয়া বরাবরই খুব কঠিন হয়। আর এবার রাজনৈতিক দলের অবরোধ থাকায় গাড়ির সংখ্যা অন্যবারের থেকে অনেক কম। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে বাসায় ফিরছি।
তবে আমার মতো অসংখ্য মুসল্লি এক সঙ্গে পায়ে হেঁটে আসার কারণে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেও ক্লান্ত লাগছে না। তাছাড়া যারা পায়ে হেঁটে আসছেন তাদের অনেকের মুখেই শুনছি মোনাজাতের পর যত কদম হেঁটে বাসায় ফেরা হবে তত সওয়াব হবে।
বিশ্বশান্তি ও মুসলিম উম্মাহর সমৃদ্ধি কামনায় বিশ্ব ইজেতমার প্রথম পর্বের মোনাজাত শুরু হয় রোববার (১১ জানুয়ারি) সকাল ১১টা ২০ মিনিটে। লাখো মুসল্লির উপস্থিতিতে মোনাজাত শেষ হয় ১১টা ৪৮ মিনিটে। এর পরপরই ঘরে ফেরা শুরু করেন মোনাজাতে অংশ নেওয়া রাজধানী ঢাকা ও আশেপাশের বাসিন্দারা।
বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট শেখ নাসির হোসেন জানান, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি প্রগতি সরণীতে মুসল্লিদের দীর্ঘ লাইন দেখেছেন। অনেকে ট্রাকে, জ্বালানি তেলবাহী লরি, বাসে করেও ঘরে ফিরেছেন। অবরোধ ও স্বল্প পরিসরে পরিবহন চালার পরও মুসল্লিদের ঢলের কারণে প্রগতি সরণীতে বেশ যানজট দেখা গেছে।
এদিকে পায়ে হেঁটে ঘরে ফেরা অনেক মুসল্লি জানিয়েছেন, পথের বিভিন্ন স্থানে তাদের পানি ও খাবার সরবরাহ করেছেন স্থানীয় অনেকে। অনেকে পানি ও খাবার নিয়ে অস্থায়ী চৌকি তৈরি করেছেন। সেখান থেকে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিয়ে পায়ে হেঁটে ঘরে ফেরা মুসল্লিদের বিনামূল্যে পানি ও শুকনা খাবার দেওয়া হচ্ছে। রামপুরার মো. ইসমাইল হোসেন, মো. শুকুর আলী, মৌচাকের মো. জাকির হোসেন, বাড্ডার মো. রেজাউল ইসলাম এসব কথা জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫