ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

ইজতেমা শেষে শান্তির বার্তা নিয়ে ছুটছেন মুসল্লিরা

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫
ইজতেমা শেষে শান্তির বার্তা নিয়ে ছুটছেন মুসল্লিরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বিশ্ব ইজতেমার বহুল প্রতিক্ষিত আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শেষ হওয়ার পর বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তাবলিগের মুসল্লি আর ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ। তবে বাড়ি যাচ্ছেন না দুই পর্বে বিভিন্ন মেয়াদে জামাতে নাম লেখানো লক্ষাধিক লোক।

তারা বাড়ির পরিবর্তে চলে যাবেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে। তারা বিশ্বময় ছড়িয়ে দিবেন শান্তির বার্তা, ইসলামের কথা।

ইসলাম প্রচারের মতো এই মহতী কাজের মাধ্যমে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করে দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা অর্জনই তাদের লক্ষ্য। শুধু ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনেই নয়; তারা দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে চান সমাজ, রাষ্ট্র তথা বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে। শ্বাশত ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে জড়ো করতে চান পথহারা লক্ষ্যভ্রষ্ট বিপথগামী মানুষদের।

দেশের প্রতিটি মসজিদ থেকে অন্তত একটি করে জামাত বের করার লক্ষ্য নিয়ে এবারের ইজতেমা শুরু হয়। দুই পর্বের ইজতেমা শেষে জানা গেছে, এবার প্রায় সাত হাজারের মতো জামাত বের হয়েছে। প্রথম পর্বে ৪২৯৪টি, বাকিগুলো দ্বিতীয় পর্বে। গত বছরের চেয়ে এবার ১ হাজার জামাত বেশি বের হয়েছে আল্লাহর রাস্তায়। এর মধ্যে ৫ শতাধিক জামাত ৫ মহাদেশের বিভিন্ন দেশে চলে যাবে।

ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের মধ্য থেকে যারা এবার তাবলিগের কাজে বের হয়েছেন, তাদের নাম তালিকাভূক্তি করার পর, প্রথমে মাঠের উত্তর পার্শ্বে আলাদাভাবে নির্মাণ করা তাশকিলের কামরায় জড়ো করা হয়। পরে এখান থেকে তাদের জামাতবন্দী করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হবে। এসব জামাতে ৪০ দিন, ৩ মাস, ৬ মাস, ১ বছরসহ বিভিন্ন মেয়াদি চিল্লাধারী মুসল্লি রয়েছেন। প্রত্যেক জামাতে রয়েছেন একজন করে আমীর ও ১৫/১৬ জন করে সাধারণ মুসল্লি।

ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের আগে মূলতঃ তাদের উদ্দেশ্যেই করা হয় হেদায়েতি বয়ান। যে বয়ানে থাকে, তাদের জন্য করণীয় ও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা। বেশি বেশি জামাত বের হওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রথমতঃ জামাতের সাথীদের ইমান-আমল সহিহ-শুদ্ধ করা, প্রয়োজনীয় ইসলামী জ্ঞান অর্জন এবং আত্মশুদ্ধি লাভ। দ্বিতীয়তঃ দেশের প্রতিটি মসজিদ থেকে জামাত বের করা। তৃতীয়তঃ প্রতিটি মসজিদে পাঁচ কাজ পরিপূর্ণভাবে চালু করা (সপ্তাহে দুই দিন গাশত মানুষকে নামাজের দিকে ডাকা, সৎকাজ করতে বলা, তাবলিগে যেতে উদ্বুদ্ধ করা), প্রতিদিন মাশওয়ারা (পরামর্শ) করা, প্রতিদিন আড়াই ঘণ্টা দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া, প্রতিদিন মসজিদ ও বাড়িতে তালিম করা এবং মাসে তিন দিন তাবলিগে যাওয়া। প্রতিটি জামাত নির্ধারিত এলাকার মসজিদে দুই-তিন দিন করে অবস্থান করে ওই এলাকার সর্বস্তরের মানুষকে তাবলিগের কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার আহবান জানাবেন। তারা সাধারণ মানুষকে দ্বীনের মেহনতের লাভ, সহিহ-শুদ্ধভাবে নামাজ আদায়, প্রয়োজনীয় দোয়া-দরুদসহ ইসলামের নানা বিষয়ে প্রাথমিক ধারনা প্রদান করবেন। তাবলিগি সাথীরা সাধারণ মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করবেন আল্লাহর বিধানমতো চলতে, নবীর তরিকা মতো জীবনযাপন করতে।

উল্লেখ্য, আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা। উম্মতে মুহাম্মাদির সামগ্রিক কল্যাণ, দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা, জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ, নবী-রাসূল ও সত্যবাদীদের সঙ্গে হাশর-নাশর, জান্নাত কামনা, মুসলিম জাহানের পরস্পরে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি রক্ষা, মুসলমানদের ঈমানের মজবুতি, দ্বীনের মেহনতের প্রসার, সুন্নতি জীবন, নামাজে একাগ্রতা সৃষ্টি, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা, দ্বীন ইসলামের হেফাজত, ইজতেমাকে কবুল, দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় অকল্যাণ থেকে রক্ষা এবং কল্যাণ কামনা করে আল্লাহতায়ালার দরবারে মোনাজাত করেন তাবলিগের অন্যতম শীর্ষ মুরুব্বি ভারতের মাওলানা সাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫,২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।