যে সব মানুষ অন্য মানুষের প্রতি অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার করে তাদেরকে জালেম বা অত্যাচারী বলা হয়। পৃথিবীতে অত্যাচারীর সংখ্যা যত বেশিই হোক না কেন, কেউ নিজেকে কখনো অত্যাচারী বলে স্বীকার করে না।
এক. অত্যাচারী হলো, আত্ম অবিচারকারী (সূরা নামল : ৪৪)। সে নিজের প্রতি যে কোনোভাবে অবিচার করবে, সেই অত্যাচারী। এই আয়াতের আলোকে অঙ্গহানি ও আত্মহত্যাকে মহাপাপ বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
দুই. অত্যাচারী সে তো নিজের খেয়াল-খুশির অনুসরণকারী (সূরা বাকারা : ১৪৫)। এখানে নিজেদের খেয়াল-খুশির অনুসরণকারীকে অত্যাচারী বলে অভিহিত করা হয়েছে।
তিন. অত্যাচারী হলো, আল্লাহতায়ালার সাথে অংশীদার স্থাপনকারী (সূরা লুকমান : ১৩)। এই আয়াতে শিরককে বড় ধরনের অত্যাচার এবং ওই কারণেই শিরককারীকে অত্যাচারী বলা হয়েছে।
চার. অত্যাচারী হলো, আল্লাহতায়ালার বিধানের বিপরীত বিচার-ফায়সালাকারী (সূরা মায়েদা : ৪৫)। এখানে অত্যাচারী বলতে মনগড়া বিধানে সমাজ ও রাষ্ট্রে বিচার-ফায়সালাকারীকে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
পাঁচ. অত্যাচারী হলো, যারা সাক্ষ্য গোপনকারী তথা প্রত্যক্ষ বা চাক্ষুস বিষয়কে উল্টে মিথ্যার বেসাতি তৈরি করে (সূরা বাকারা : ১৪০)। এখানে মিথ্যা মামলার বাদী, সাক্ষী, তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বিচারকদের অত্যাচারী বলা হয়েছে।
ছয়. অত্যাচারী হলো, আল্লাহতায়ালার আদেশ অমান্যকারী (সূরা বাকারা : ৩৫)। এই আয়াত দ্বারা অত্যাচারী বলে আল্লাহর আদেশ অমান্যকারীকে বুঝানো হয়েছে।
সাত. অত্যাচারী হলো, অন্যের প্রতি উপহাসকারী, কাউকে অন্যায়ভাবে দোষারোপকারী এবং অন্যকে মন্দনামে আহ্বানকারী (সূরা হুজরাত : ১১)। এই আয়াতে অত্যাচারী বলে অন্যকে উপহাসকারী, কাউকে অন্যায়ভাবে দোষারোপকারী এবং অন্যকে মন্দ ও বিকৃত নামে আহ্বানকারীকে বুঝানো হয়েছে।
আট. অত্যাচারী হলো, আল্লাহতায়ালার প্রতি মিথ্যা আরোপকারী অথবা তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ কোরআনে কারিমকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী (সূরা আনকাবুত : ৬৮)। এই আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহর ওপর মিথ্যাচারকারীকে অত্যাচারী বলে অভিহিত করা হয়েছে।
নয়. অত্যাচারী হলো, আল্লাহতায়ালার ঘরে তারই নাম স্মরণে বাঁধা প্রদানকারী এবং তা ধ্বংস সাধনে প্রচেষ্টাকারী (সূরা বাকারা : ১১৪) এই আয়াতে আল্লাহর ঘর তথা মসজিদসমূহে যারা আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি, কোরআন তেলাওয়াত এবং জিকির-আজকারে বাধা প্রদান করে তাদেরকে অত্যাচারী বলা হয়েছে। এক কথায়, মসজিদে যারা ইবাদতের পরিবেশে বিঘ্ন ঘটায় তারা অত্যাচারী। এই আয়াতের আলোকে মসজিদে ইবাদত-বন্দেগি বাদে ভিন্ন কিছু করতে নিষেধ করা হয়েছে।
দশ. অত্যাচারী হলো, সুদভিত্তিক অর্থনীতি তথা ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন ইত্যাদি পরিচালনাকারী (সূরা বাকারা : ২৭৮-২৭৯)। এই আয়াতে সুদখোর এবং সুদের সাথে কোনো না কোনো উপায়ে জড়িতদেরকে অত্যাচারী বলা হয়েছে।
এগার. অত্যাচারী হলো, সে সব নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি- যারা মানুষকে ভয়াবহ আগুন তথা জাহান্নামের দিকে আহ্বান করে (সূরা কাসাস : ৪০-৪১)। এই আয়াতের আলোকে বলা যায়, যেসব নেতা-নেত্রী অন্যায় পথে, অনিষ্টের পথে, আল্লাহর মর্জির খেলাফ পথে মানুষকে আহ্বান করে ও পরিচালিত করে, তারা অত্যাচারী। তাদের অনুসরণ-অনুকরণ করা নিষেধ।
বার. অত্যাচারী হলো তারা— যারা মানুষকে আল্লাহর পথে চলতে বাঁধা প্রদান করে, তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করে এবং আখেরাতকে প্রত্যাখ্যান করে (সূরা হুদ : ১৯)। এই আয়াতের আলোকে যারা আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বাঁধা দেয়, তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করে এবং আখেরাতকে অস্বীকার করে তাদেরকে অত্যাচারী বলা হয়েছে।
তের. অত্যাচারী হলো, যারা ধর্মের ব্যাপারে মুমিনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনকারী ব্যক্তি (সূরা মুমতাহিনা : ৯)। এই আয়াতে যারা দ্বীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, ফ্যাসাদ এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালায় তাদের সাথে যারা সম্পর্ক রাখে, সমর্থন দেয় এবং সাহায্য-সহযোগিতা করে তাদেরকে অত্যাচারী বলা হয়েছে।
চৌদ্দ. ঈমানের মোকাবেলায় কুফরকে শ্রেয় জ্ঞান করে যে সব পিতা-মাতা, ভাই, আত্মীয়-স্বজনরা, মুমিন সন্তানের জন্য এই শ্রেণির লোকদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করাও অত্যাচারীর হুকুম রাখে। -সূরা তওবা : ২৩
সারকথা হলো, অত্যাচার ব্যাপক অর্থবোধক একটি শব্দ। সমাজের শৃঙ্খলা নষ্টকারী, মানুষের শন্তি হরণকারী, আল্লাহতায়ালার নাফরমানী, অবাধ্যতা, সীমাতিক্রম, কিংবা কারোর নিজের প্রতি অথবা অন্য কোনো মানুষের প্রতি অন্যায়-অবিচার, উৎপীড়ন, নিপীড়ন, দুর্ব্যবহার এবং যে কোনো সৃষ্টিজীবের প্রতি তার ন্যায্য অধিকার হরণ করাকে অত্যাচার এবং যে ব্যক্তি তা সম্পাদন করে তাকেই অত্যাচারী বলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘন্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫