ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

কানাডায় পালিত হচ্ছে কোরআন পরিচয় দিবস

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৫
কানাডায় পালিত হচ্ছে কোরআন পরিচয় দিবস

আয়তনের বিচারে কানাডা বিশ্বের ২য় বৃহত্তম রাষ্ট্র। এটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের প্রায় ৪১% এলাকা নিয়ে গঠিত।

কানাডা হচ্ছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং শীতলতম দেশ। কানাডা যেমন বহুজাতিক সাংস্কৃতিক দেশ, তেমনি ধর্মীয়ভাবেও উদার। কানাডায় স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত। কানাডায় সবচেয়ে বেশি মুসলমান বাস করেন অন্টারিওতে, আর সবচেয়ে কম হলো নোনাভাটে। কানাডায় রয়েছে প্রচুর ইসলামিক সংস্থা। সরকার এ সব সংস্থা বা সংগঠনের জন্য প্রচুর সাহায্য ও অনুদান দিয়ে থাকে।

কানাডার পরিসংখ্যান বিভাগের হিসাবমতে ইসলাম হচ্ছে সে দেশের দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম। অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের চেয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের সংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেক বেশি। গত এক দশকে কানাডার মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ৮২ শতাংশ। ২০০১ সালে যেখানে মুসলমানের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৭৯ হাজার, ২০১৪ সালে এর সংখ্যা ১৭ লাখ ছাড়িয়েছে। যা কানাডার মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০০১ সালে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ২ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানের আলোকে মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ ফোরাম বলছে, আগামী ২০ বছরে কানাডার মুসলিম জনসংখ্যা বেড়ে তিনগুণ হবে।

কানাডায় ধর্মীয় বিভেদ নেই বললেই চলে। এখানকার মুসলমানরা ধর্মেকর্মে বেশ শান্তিতেই আছেন বলা যায়। মুসলমানদের এই শান্তিপূর্ণ অবস্থানকে আরও সুসংহত করতে কানাডার মুসলিম নেতৃবৃন্দ নতুন একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। এ কর্মসূচির আওতায় আজ কানাডার মুসলিম সম্প্রদায়সহ সাধারণ জনগণকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে আসমানী কিতাব পবিত্র কোরআনে কারিমের সঙ্গে। এ উপলক্ষ্যে আজ কানাডায় ঘোষণা করা হয়েছে, ‘কোরআন পরিচয় দিবস’ পালনের।

এ দিবসের বিশেষ কর্মসূচির মাঝে রয়েছে, পবিত্র কোরআনে কারিমের মূল শিক্ষা এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা, কোরআনের বিধানের প্রয়োজনীয়তা, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্যাখ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনা।

অনুষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে অন্টারিও প্রদেশের বারনাটফ্রুড শহরের একটি লাইব্রেরিতে। ধর্ম বিশ্বাস নির্বিশেষে কানাডার জনগণকে পবিত্র কোরআনে কারিমের প্রকৃত শিক্ষার সাথে পরিচয় করানোই এ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য।

দিবসটি পালন প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানের আয়োজকরা গণমাধ্যমকে জানান, সম্প্রতি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নানাবিধ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মুসলমানেরা নিন্দা জানিয়েছে এবং সত্যিকারে ইসলাম ধর্মকে জনগণের সম্মুখে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। বিষয়টি আরও জোড়ালোভাবে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতেই আমাদের এই প্রয়াস। এর মাধ্যমে মূলত ইসলাম বিদ্বেষ কিংবা অহেতুক ইসলাম ভীতি বিষয়টি কমবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

কানাডার দুই তৃতীয়াংশ মুসলমান নিয়মিত মসজিদে যায়। সেখানে তারা নামাজ আদায় করে অথবা ধর্মীয় অন্য কোনো বিষয়ে অংশগ্রহণ করে। মসজিদে নিয়মিত যাতায়াতের ব্যাপারে এ হার অন্য যে কোনো ধর্মের লোকদের চেয়ে বেশি। টরেন্টো, মনট্রিল, ক্যালগেরি ও হ্যালিফ্যাক্সে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সুউচ্চ মিনার গম্বুজসহ অনেক মসজিদ। পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট নামাজের স্থান। এছাড়া বিভিন্ন শহরে অবস্থিত প্রায় শতাধিক মসজিদ প্রতি শুক্রবার কানায় কানায় পূর্ণ থাকে মুসল্লিদের উপস্থিতিতে। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি শহরে বিভিন্ন কমিউনিটিকেন্দ্রিক ইসলামিক সেন্টার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। শুধুমাত্র টরেন্টোতে এ ধরনের প্রায় ১৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

কানাডায় মুসলমানদের আগমন শতবর্ষ আগে। ১৮৭১ সালের কানাডিয়ান আদম শুমারিতে প্রথম মুসলমানদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। ওই শুমারিতে সংখ্যায় মাত্র ১৩ জন মুসলমানের উল্লেখ পাওয়া যায়। জানা যায়, কানাডিয়ান প্যাসিফিক রেলওয়ে স্থাপনের সময় অনেক মুসলমান এদেশে আগমন করেন। এছাড়া আলবার্টায় কৃষিকাজে এবং অন্যান্য প্রদেশে শিল্পকারখানায় কাজের সন্ধানে অনেকে এসেছেন। ১৯৩৮ সালে আলবার্টার রাজধানী এডমন্টনে প্রথম মসজিদ ‘আল রাশিদ’ স্থাপিত হয়।

১৯৬০ সালের পর থেকে কানাডায় মুসলমান ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর আগে ১৯৫২ সালে মনট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পাঠ্যক্রমে ইসলামিক স্টাডিজ অন্তর্ভুক্ত করলে অনেক মুসলমান শিক্ষার্থী কানাডায় আসে।

আরব দেশ ছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান এসেছে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ থেকে। শিক্ষাক্ষেত্রে মুসলমান ছেলেমেয়েরা অন্যান্য কমিউনিটির তুলনায় অনেক এগিয়ে আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘন্টা, মার্চ ২৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।