আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষস্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৬৩৬ সালে স্থাপিত এই বিদ্যাপীঠ ২২ হাজার গুণীর পদচারণায় মুখরিত।
২৫০ একর জমির ওপর স্থাপিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩টি স্যাটেলাইট হাউস ও রেডক্লিফ ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি রয়েছে। পৃথিবীর নানান দেশের ও নানান পেশার মানুষের সাথে মেশার, তাদেরকে জানার অন্যতম সুযোগ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। হার্ভার্ড তার শিক্ষাব্যবস্থার কারণে সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০টি আলাদা লাইব্রেরী শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনের অন্যতম পাথেয়। বলে রাখা ভালো, পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম বই সংগ্রহশালা এই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। হার্ভার্ডের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এখানকার বেশিরভাগ শিক্ষাই কর্মমুখী।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য ফ্যাকাল্টির মধ্যে রয়েছে বিজনেস, ডেন্টাল, ডিজাইন, এডুকেশন, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল, গভর্নমেন্ট, ল’, পাবলিক হেলথ এবং ফ্যাকাল্টি অফ আর্টস এন্ড সায়েন্স।
উপরোক্ত বিষয়গুলোর সঙ্গে এবার নতুন করে সংযুক্ত করা হচ্ছে ইসলামি কোর্স। ইসলামি স্টাডিজের আলোকে এ বিশেষ কোর্সটি আরবি, ফার্সি ও উর্দু ভাষায় অনুষ্ঠিত হবে।
এ কোর্সে ইসলামি স্টাডিজ ছাড়াও আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অন্যান্য কোর্স গ্রহণ করা হবে এবং ইসলাম ধর্মের বাণী ও ইসলাম পরিচিতির আলোকেও বিশেষ কোর্স গ্রহণ করা হবে।
এই কোর্স চালুর ফলে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব অনুষদের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের মতাদর্শের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করবে। অবশ্য আগে থেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামি অতীন্দ্রিয়বাদ ও দর্শনের আলোকে বিশেষ কোর্স চালু রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন দেশের ইসলামি লেখকদের বিভিন্ন গ্রন্থ, লেখা ও গবেষণা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
ইসলামি স্টাডিজ বিষয়ক এই নতুন কোর্স চালুর মাধ্যমে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এক নব অধ্যায়ের সূচনা করলো। অবশ্য এ কথা বলার কোনো কারণ নেই যে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম ও কিংবা ইসলামি বিষয়সমূহ নিষিদ্ধ ছিলো। বেশ কয়েক বঝর আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রবেশ পথে পবিত্র কোরআনে কারিমের একটি আয়াত সংযোজন যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
সূরা নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রবেশ মুখের দেয়ালে স্থাপন করা হয়েছে। সেই আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক, আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্য দান করো, তাতে তোমাদের নিজের পিতা-মাতার বা আত্মীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাংখী তোমাদের চাইতে বেশি। অতএব তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলো বা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ-কর্ম সম্পর্কে অবগত। ’-সূরা আন নিসা : ১৩৫
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের প্রবেশমুখে এই আয়াতটি লেখা হয়েছে ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠতম বাণী বিবেচনায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ১৫০ জন স্টাফ ও শিক্ষার্থীর মতামতের মাধ্যমে বাছাই করা হয়েছে ন্যায়বিচার সম্পর্কিত কোরআনের এই আয়াতটি। বাণী স্থাপন সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়, বিশ্বের মানুষ ন্যায়বিচার কিভাবে পাবে তার সুস্পষ্ট নিদের্শনা রয়েছে কোরআনের এই কথাগুলোতে। তাই আমরা এখানে তা প্রতিস্থাপন করলাম।
আমেরিকার মুসলমানদের সরকারি কোনো হিসাব না থাকলেও অনুমান করা হয় সেখানে বর্তমানে ৬০ থেকে ৮০ লাখ মুসলমানের বসবাস। এই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে ইসলাম সচেতনতার মাসও পালন করা হয়।
এর লক্ষ্য হচ্ছে ক্যাম্পাসের ভিতরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণ এবং ইসলাম ও আমেরিকান সংস্কৃতির প্রাসঙ্গিকতার ওপর আলোকপাত করা। এর ফলে মুসলিম ও অমুসলিম শিক্ষার্থীরা পরস্পর সম্পর্কে জানার পরিধিকে আরো সমৃদ্ধ করার সুযোগ পেয়ে থাকে। আর এসব কারণে দেখা যায় যে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণ বিদ্বেষ বিংবা ইসলাম নিয়ে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব হয় না। বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। আমাদের প্রত্যাশা এ ধারা চলুক অনন্তকাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘন্টা, এপ্রিল ০৫, ২৯১৫
এমএ