যে সব দেশে ইসলামের শুরুর দিকে ইসলাম প্রবেশ করেছে তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চীন। চীনে ইসলামের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সে দেশে বহু মসজিদ নির্মিত হয়েছে।
ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, ৭ম খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ ১৩০০ বছর পূর্বে তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান (রা.)-এর প্রতিনিধি হজরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.)-এর মাধ্যমে চীন দেশে ইসলাম প্রবেশ করেছে।
হজরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) চীন দেশের তৎকালীন বাদশা তাঙ্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ইসলাম ও মুসলমানদের আকিদা বিশ্বাস সম্পর্কে কথা বলেন। অনেকেই এই বছরকে চীনে ইসলামের প্রবেশের বছর বলে মনে করেন। ইসলাম নদী ও স্থল পথে চীনে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে একটি পথ হচ্ছে সিল্ক রোড।
চীনে ইসলামের প্রচারের পর মুসলমান বণিক ও ব্যবসায়ীরা এই পথে চীনে প্রবেশ করেন। তারা মালপত্রের সঙ্গে ইসলামি আকিদা ও আচার-আচরণকেও সেদেশে প্রবেশ করান। মূলত আরব ও ইরানের বাণিজ্যিকদের মাধ্যমে চীনে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছে যাদের সংখ্যা ছিল ৪ হাজারেরও বেশি। পরবর্তীতে সম্রাট চেঙ্গিস খান ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে ও তার ছেলে কাবিলা খান ১২৭১ খ্রিস্টাব্দে সেখানে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।
চীনের সর্বত্রই মুসলমান রয়েছে তবে তাদের অধিকাংশই সিন জিয়াংয়ে বসবাস করেন। হাজার বছর ধরে চীনের মুসলমানরা ছোট বড় বহু মসজিদ নির্মাণ করেছেন। এক তথ্যে জানা গেছে যে, বর্তমানে চীনের মসজিদের সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি। এসব মসজিদে ইমামের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে মিনার ও গম্বুজ শোভিত মসজিদগুলোর দিকে তাকিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছেন বলে বিভ্রান্তও হতে পারেন।
গণচীন আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এবং জনসংখ্যার দিক থেকে বৃহত্তম দেশ। চীনের হুই, উইগুর, কাজাক, উজবেক, তাজিক, তাতার, কিরগিজ, ডোংসিয়াং, সালার, এবং বোনান- এই দশটি সংখ্যালঘু জাতির মধ্যেই ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। চীনের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ঈদ উপলক্ষ্যে তারা ছুটি পান।
এতকিছুর পরও বিভিন্ন সময়ে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলমানদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এছাড়া বোরকা নিষিদ্ধ, দাড়ি নিষিদ্ধ, মাইকে আজান নিষিদ্ধসহ নানাবিধ অত্যাচার ও সহিংসতা মুসলমানদের ওপর চলে আসছে।
মুসলিমরা চীনা জনসংখ্যার ১.৫ শতাংশ। সাম্প্রতিক আদমশুমারি থেকে জানা যায়, চীনে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মুসলিম রয়েছে। ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী চীনের বর্তমান জনসংখ্যা ১৩৩ কোটি ৬৭ লাখ ১৮ হাজার।
চীনের ক্যান্টন নগরীতে প্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এই মসজিদটি ‘মেমোরিয়াল মসজিদ’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। চীনে কয়েকজন সাহাবির কবরও রয়েছে।
চীনের সর্ববৃহৎ মসজিদটি আরব আমিরাতের দাতব্য সংস্থা শায়খ জায়েদ বিন আল নাহিয়ানের উদ্যোগ ও আর্থিক সহায়তায় নির্মিত হয়েছে। মসজিদটি গত বছরের জানুয়ারি মাসে উদ্বোধন করা হয়। এ মসজিদে একসঙ্গে ৬ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবে।
মসজিদটি ইসলামি শিল্পকলা ও কারুকার্যে নির্মিত হয়েছে। দেখতে মসজিদটি বেশ ব্যতিক্রম ও ভিন্নধর্মী। চীনের মুসলমানদের নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে এবং এ অঞ্চলের মসজিদের অভাবের কথা বিবেচনা করে মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সংস্থাটি।
নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও চীনে প্রকৃত দ্বীনদার মুসলমানের সংখ্যা অনেক। ধর্মের প্রতি তাদের আন্তরিকতা অনেক বেশি। প্রতি বছর চীন থেকে অনেক লোক হজে যান। দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যারা চীনে যান তাদের সহযোগিতায়ও যথেষ্ট আন্তরিকতার প্রমাণ দেন চীনা মুসলমানরা। চীনে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা সবার সঙ্গে খুব বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘন্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৫
এমএ