ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

জার্মানিতে ১৪ শ’ বছরের পুরনো কোরআনের সন্ধান লাভ

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৫
জার্মানিতে ১৪ শ’ বছরের পুরনো কোরআনের সন্ধান লাভ

জার্মানির বার্লিন স্টেট লাইব্রেরিতে পবিত্র কোরআনে কারিমের একটি প্রাচীন কপির সন্ধান পাওয়া গেছে। কপিটি প্রায় ১৪০০ শত বছরের পুরনো।

অনেকে অবশ্য কোরআনের এই কপিটিকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সময়কালের লেখা বলে অভিমত দিয়েছেন। প্রায় শত বছর ধরে কোরআনের কপিটি এই লাইব্রেরিতে সবার অগোচরে পড়ে ছিল।

সুইজারল্যান্ডের ‘জুরিখ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে‍ গবেষণার পর হস্তলিখিত প্রাচীন কোরআনের কপিটি লেখার সময় নির্ধারণ করা হয়। লাইব্রেরিতে বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ৯৫ শতাংশ নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ষাট পৃষ্ঠার চর্ম কাগজে কুফি লিপিতে লেখা নমুনাটি ৬৪৯ থেকে ৬৭৫ সালের মধ্যে হাতে লেখা হয়েছিল। তুবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কুরানিকা প্রকল্পের’ পরিচালক মিখাইয়েল মার্কস এসব তথ্য জানান। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘MA VI 165’।

এ পর্যন্ত পাওয়া পবিত্র কোরআনে কারিমের এ ধরনের কপিগুলোর মধ্যে এটাই সবচেয়ে প্রাচীনতম এবং এটি ইসলামের ৪র্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)-এর সময়কালের।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন ও ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। কোরআন গবেষকরা ধারণা করছেন, কোরআনের এই কপিটি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকালের ২০-৪০ বছর পরে লেখা হয়েছে।

স্থানীয় একটি সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়, দীর্ঘমেয়াদী একটি প্রকল্পের আওতায় এটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। এ জন্য ইউরোপের সমগ্র কোরআনের কপি যাচাই করে দেখা হয়।

ধারণা করা হচ্ছে, মিশরীয় এক বিজ্ঞানী ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে অথবা বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এটি জার্মানিতে নিয়ে আসেন। বার্লিন জাতীয় গ্রন্থাগারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই কোরআন শরীফটি এক মরহুম মাওলানার নিকট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা তার পরিচয় জানতে পারিনি, এটা দুঃখজনক। এই মাওলানা উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে কায়রোয় জীবন যাপন করতেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।

মূল গ্রন্থের অংশবিশেষ এ গ্রন্থটি ১৫৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত। সূরা বনি ইসরাইলের ৩৫নং আয়াত থেকে সূরা ইয়াসিনের ৫৬নং আয়াত পর্যন্ত আছে। এর লিপি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ‘হেজাজি মায়েল কুফি’ লিপিতে এটি লেখা হয়েছে। মূল লেখায় নোকতা-জের-জবর-পেশ ছিল না। পরে এতে সংযোজন করার আভাস পাওয়া যায়। বিরামচিহ্ন হিসাবে গোলায়িত তিনটি নোকতা ত্রিকোণাকার আকারে দেয়া হয়েছে। কপিটির প্রতিটি পৃষ্ঠা আলাদা করে লিখে জুঝ বাধাই করে গ্রন্থবদ্ধ করা হয়েছে। এতে কোনো পৃষ্ঠা নম্বর নেই। বর্তমানে কলমকে ৪৫ ডিগ্রি কোনে কেটে লেখা হয় কিন্তু এই লিপির কলম ১৮০ ডিগ্রি কোনে কাটা হয়েছে এবং চাল পুড়িয়ে চিনি, নিশাত ও আরবি গাম (আঠা) মিশিয়ে হাতে তৈরি কালিতে এটি লেখা হয়েছে। তবে শব্দের মধ্যে কোথাও কোথাও যের-জবর বুঝানোর জন্য লাল কালির ফোটা হরফের ওপর-নিচ খুব কাছে ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও একই কালিতে হরফের নোকতা খুবই ছোট ও প্রায় অষ্পষ্টাকারে দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মহানবী (সা.)-এর সময়কার লেখা কোরআনের সন্ধান বিষয়ক খবর ও ছবি ছাপা হয়েছে। প্রকাশিত খবরটি সঠিক কিন্তু খবরের সঙ্গে প্রকাশিত ছবিটি নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা গেছে।

কারণ, প্রকাশিত ছবিগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এসব লেখায় জের-জবর-পেশ নোকতা ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ মহানবী (সা.)-এর সময়ে কোরআনের লিপিতে এগুলো ছিল না। উমাইয়া খলিফা মারওয়ানের সময়ে মক্কার প্রশাসক হাজ্জাজ বিন ইউসুফ (৬৬১-৭১৪ খ্রি.) অনারব ও আরবি ভাষায় অনভিজ্ঞ পাঠকদের সুবিধার্থে কোরআনে জের-জবর-পেশ প্রয়োগ করার ব্যবস্থা করেন। সে সময় বিখ্যাত ব্যাকরণবিদ খলিল ইবনে আহমদ সিরিয় লিপি থেকে স্বরচিহ্নগুলো সংগ্রহ করে কোরআনে প্রয়োগ করেন।

প্রাচীন কোরআনের এই কপিটি বার্লিন জাতীয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষণ করা হবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘন্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।