আগামীকাল মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল, ২০১৫) একযোগে তিন সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটাররা তাদের নিজ নিজ এলাকার প্রতিনিধিদের বেছে নিবেন।
আমরা জানি, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক অথবা দলীয় দায়িত্ব পালনের জন্য জনগণ, সদস্যবৃন্দ ও কর্মীবাহিনীর মতামতের ভিত্তিতে তাদের মধ্য হতে উপযুক্ত লোক বাছাই করার যে প্রক্রিয়া- তাকেই বলে নির্বাচন। নির্বাচনের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো ভোটারবৃন্দ।
ভোট একটি গুরুত্বপূর্ণ আমানত। এই আমানত প্রদানকালে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে আমি যাকে ভোট দিচ্ছি সে কেমন, তার দল কেমন, তাদের ঈমান, আমল, চরিত্র ও নীতি-চিন্তা কী রকম। যাদের ঈমান, ইসলাম, চরিত্র এবং চিন্তা-চেতনা দৃষ্টিভঙ্গি ও মতবাদ ইসলামবিরোধী, তাদেরকে ভোট দিয়ে সমাজে ইসলামবিরোধী ও আল্লাহর নাফরমানীর কাজ করার এবং সে পথে ক্ষমতাকে ব্যবহার করার সুযোগ করে দেয়া সম্পূর্ণ হারাম। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘যারা (ভোট) আমানত পাওয়ার, আমানত রক্ষা করার উপযুক্ত তাদেরকেই তোমরা আমানত (ভোট) প্রদান করো। ’
তাই নির্বাচন ও ভোট দেয়া-নেয়া এর ব্যবস্থা করা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি বড় ইবাদত ও আমানত। এর ওপর সমাজ, রাষ্ট্র, দেশ, ধর্ম, মানবতা ও প্রতিষ্ঠানের অনেক ভালো-মন্দ, উন্নতি-অবনতি, কল্যাণ-অকল্যাণ ও সওয়াব-গুনাহর ব্যাপার গভীরভাবে জড়িত।
সুতরাং কাউকে প্রার্থী করার সময়, প্রার্থী হওয়ার সময়, ভোট দেয়ার সময়, ভোট নেয়ার সময় এবং ভোটের ব্যবস্থা করার সময় সংশ্লিষ্ট সবাইকে আল্লাহর কাছে জওয়াব দেয়ার গভীর অনুভূতি নিয়ে এ দাযিত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে। যেন আল্লাহর দরবারে আমানত খেয়ানতকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে না যাই।
ইসলামে ভোটের গুরুত্ব অনেক। ইসলাম মনে করে ভোট দেয়া মানে মতামত দেয়া এবং রায় দেয়া ও সাক্ষী দেয়া। নিজের সমর্থন, শক্তি ও ক্ষমতা প্রদান করা। যাকে আমি ভোট দিলাম তার ব্যাপারে এই মত, সাক্ষ্য বা রায় দিলাম যে, এই লোকটি সৎ, চরিত্রবান, যোগ্য, মানবদরদী, দেশপ্রেমিক ও খোদাভীরু। এই লোক নির্বাচিত হলে সে সমাজে কোনো অন্যায়, মানবতাবিরোধী, দেশবিরোধী, ইসলামবিরোধী, আল্লাহ-রাসূলবিরোধী, সমাজ, প্রতিষ্ঠান ও দলবিরোধী কোনো কাজ করবে না। যাকে আমি ভোট দিলাম তাকে আমি শক্তি ক্ষমতা ও আমার সমর্থন প্রদান করলাম। সে আমার শক্তি, ক্ষমতা ও সমর্থনের ওপর নির্ভর করে সমাজে, প্রতিষ্ঠানে, দলে ও দেশে আমার পক্ষ হয়ে ভালো কাজ চালু করবে এবং খারাপ কাজ বন্ধ করবে। ফলে সে যত ভালো কাজ করবে তার সবটুকু সওয়াব, সমপরিমাণ সওয়াব ভোটার হিসেবে আমিও পাব। যদি আমি আমার ভোটটি কোনো খারাপ লোককে দিই; সে ওই ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয় এবং ক্ষমতা পেয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে, দেশ, ধর্ম ও মানবতার ক্ষতি করে, পাপের কাজ বাড়িয়ে দেয়, তাহলে সে নির্বাচিত হয়ে সুযোগ ও ক্ষমতা পেয়ে যত পাপ করবে- তার সমপরিমাণ পাপের ভাগ ভোটার হিসেবে আমাকেও নিতে হবে- নাউজুবিল্লাহ।
তাই ভোট দেয়ার সময় সবদিকে বিশেষ করে সওয়াব, গোনাহ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিকে হিসাব করে ভোট দিতে হবে। অপাত্রে, অসৎ কোনো ব্যক্তিকে ভোট দেয়া যেমন বড় পাপ তেমন কোনো সৎ ও তুলনামূলকভাবে ভালো মানুষকে ভোট না দেয়াও তেমন বড় পাপ।
প্রার্থীদের সম্পর্কে সব কিছু জানার ভোটার হিসেবে আপনাকে কোনো না কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। আপনি ইচ্ছে করলেই তা গোপন করতে পারবেন না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তার চেয়ে বড় জালেম কে? যে আল্লাহর পক্ষ হতে সত্য জানার (বা কাকে ভোট দিলে দেশ ধর্ম ও মানবতার উপকার হবে তা বুঝার) পরও সত্য গোপন করল বা উপযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে সাক্ষী বা ভোট দিল না। ’
সুতরাং আপনাকে ভোট অবশ্যই দিতে হবে। সেই সঙ্গে আপনার ভোট ভালো পাত্রে গেল কিনা সেটাও চিন্তা করতে হবে। আর এটাই আসল বিবেচ্য বিষয়। যাকে ভোট দিলাম তিনি ভালো কিনা, তিনি সমাজের ভালো কাজ চালু করার, মন্দ কাজ বন্ধ করার, মানবতার কল্যাণ, অমানবিক এবং আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ বন্ধ করার ইচ্ছা ও মানসিকতা পোষণ করে কিনা, এটাই দেখার বিষয়। এর ভিত্তিতেই আল্লাহ ভোটপ্রার্থী ও ভোটদাতার ফলাফল নির্ণয় করবেন। কে জয়ী হলো বা হলো না, তার ভিত্তিতে ভোট বা ভোটারের ফলাফল নির্ণয় হবে না। যদিও কিছু মানুষ অজ্ঞতার কারণে সেই হিসাবটাই বেশি করতে চায়।
ইসলাম ডেস্ক মেইল: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘন্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৫
এমএ