দুর্যোগ যেকোনো সময় হতে পারে বা আসতে পারে। এজন্য মানসিক প্রস্ততি থাকা দরকার।
আমরা জানি, যেদিন দুনিয়া ধ্বংস হবে বা কিয়ামত হবে সেদিনও মহাদুর্যোগ কিভাবে বা কোন প্রক্রিয়ায় হবে তার পুরোপুরি বর্ণনা আল্লাহতায়ালা আগাম বলে দিয়েছেন পবিত্র কোরআনে কারিমে। ঝড়-টর্নেডো ও ভূমিকম্প এসব কিছু সে তুলনায় অতি তুচ্ছ, এটা বলাবাহুল্য।
কিয়ামতের পূর্বাভাস বিষয়ে বলা হয়েছে, হজরত ইসরাফিল (আ.)-এর শিঙার ফুৎকারে পাহাড়-নদী, গাছ-পালা, বাড়ি-ঘর সবই বাতাসে উড়বে। ধুলিময় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে সমগ্র পৃথিবী। মাঝে-মধ্যে সংঘঠিত দুর্যোগ আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই সত্যতার কথা। বস্তুত দুনিয়ার এমনসব দুর্যোগ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের কোনো শক্তি ও ক্ষমতা নেই। অপার ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ, তিনিই আমাদের আশ্রয়। তাই শুধু দুর্যোগকালীন সময়ে নয়, সর্বদা তার আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে, সর্ব প্রকারের সাহায্য চাইতে হবে তারই কাছে।
দুর্যোগ এটা নতুন কিছু নয়। পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই দুর্যোগ এসেছে বিভিন্ন রূপে। বিভিন্ন নবী-রাসূলরাও দুর্যোগে পতিত হয়েছেন। দুর্যোগ শুধু পাপের কারণেই হয় এমনটি নয়। এটা মানুষের জন্য একটি পরীক্ষা। শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে নানা দুর্যোগ দেখা দিয়েছিল। এসব দুর্যোগে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে সতর্ক থেকেছেন ও উম্মতকে আগাম সতর্ক করে গেছেন। যেমন তিনি সূর্য্য ও চন্দ্রগ্রহণের সময় আহার গ্রহণ করতেন না। এ সময় তিনি সিজদায় নত হয়ে আল্লাহতায়ালার কাছে দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ চাইতেন। আশু বিপদ থেকে মুক্তি চেয়ে আশ্রয় কামনা করেতন।
দুর্যোগ প্রসঙ্গে বহু তথ্য-উপাত্ত দেয়া আছে কোরআন-হাদিসে। জীব-জন্তু বিশেষ করে পাখি, ইঁদুর, সাপ এবং মাছ দুর্যোগের আগাম বার্তা পায়। হুদহুদ পাখি, উট পাখি, চাতক পাখি আগাম ঝড়-বৃষ্টির বার্তা পায়। তাদের আচরণে এসব বোঝাও যায়। পশু-পাখি ও জীব-জন্তুরা কিন্তু এই ক্ষমতা পেয়েছেন আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে।
মেঘের আচরণ বা তার আকার ও রং এবং তার গতিবিধি সম্পর্কেও বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে কারিমে। কালো মেঘ এবং লাল মেঘের বর্ণনা এবং তাতে ক্ষতির বিবরণও আমরা এসব বর্ণনা থেকে জানতে পারি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও দুর্যোগ হয়। সেটি হয় মনুষ্য সৃষ্ট বা মানুষের কর্মকান্ডের ফলে। যেমন দুর্বল ইমারত ধ্বসে (সাভারের রানা প্লাজার মতো), অগ্নিকান্ডের ফলে। এছাড়া প্রতি বছর আমাদের দেশে গার্মেন্টস ভবনে আগুন লেগে বহু জীবনহানির ঘটনা ঘটছে। সুউচ্চ ইমারতে আগুন লেগে জান-মালের ক্ষতি হচ্ছে। আগুন লাগছে বাড়ি-ঘর, দোকান-পাটেও।
এর সবই হচ্ছে একেবারে অসাবধানতার কারণে। বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ অথবা তারের ক্রুটিজনিত কারণে বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। গ্রামাঞ্চলে অগ্নিকান্ড হয় চুলা অথবা বিড়ি-সিগারেটের আগুন থেকে। এ কথাটি সত্য যে, আগুনে পুড়ে খুব কম মানুষ মরেছে। তবে গার্মেন্টসে আগুন লাগার পর দ্রুত নামতে গিয়ে হুড়োহুড়ি করে একইসঙ্গে বেরুনোর সময় পদদলিত হয়ে বহু লোক মারা গেছে, অথবা ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে।
বিভিন্ন সময় দুর্যোগ আসবে এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। কারণ পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই তা চলে আসছে। তাই বলে হতাশ হয়ে বসে থাকলে চলবে না। দুর্যোগের সময় মনে সাহস রাখতে হবে। সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে আক্রান্তদের জন্য। কারো বিপদে তার পাশে দাঁড়ানো সওয়াবের কাজ। এটা ঈমানি দায়িত্বও বটে। সে হিসেবে বলা যায়, দুর্যোগকালীন সময় কোনো মুমিন হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না।
এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হলে যেসব প্রস্তুতি থাকা দরকার সেসব কৌশল আমাদের শিখতে হবে, জানতে হবে। বিশেষ করে আমাদের সন্তানদের শেখাতে হবে।
বিজ্ঞান আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে। কিন্তু আমরা বিজ্ঞানের সব ভালো এখনও করায়াত্ব করতে পারিনি। আমাদের সেই সামর্থ্য নেই। তবে সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে যে সব বাধা অতিক্রম করা যায় তা আমরা বিভিন্ন সময় প্রমাণ করেছি। বস্তুত দুর্যোগ মোকাবেলায় দরকার সাহস, ধৈর্য এবং সম্মিলিত শক্তি। আমরা যেন তা অর্জন করতে পারি। বিপদে যেন না পাই ভয়। থাকি যেন সাহসে অটল।
ইসলাম ডেস্ক মেইল: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘন্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৫
এমএ