ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মায়ের প্রতি অবহেলা নয়

তাযকিরা খাতুন, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৫
মায়ের প্রতি অবহেলা নয়

আমাদের দেশে এমন অনেক মা আছেন, যারা নিরাপদহীন মাতৃত্বে ভুগে মারা যান। একজন মায়ের মৃত্যুর প্রভাব সুদূর প্রসারী।

মাতৃমৃত্যুর কারণে প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যক শিশু হয় মাতৃহারা। ফলে মায়ের দুধ, আদর, স্নেহ, ভালোবাসা ও যত্নের অভাবে অনেক শিশু নানাবিধ রোগের শিকার হয়। এ শিশুদের অনেকেই আবার মানসিক ও শারীরিকভাবে বেশ অবহেলিত হয়; যার ফলে তাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটে।

পরবর্তীতে এ শিশুটি উন্নয়নমূলক কোনো কাজে লাগে না বলে জাতির জন্য একটি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমরা দেখতে পাই, একজন মায়ের মৃত্যু শুধু একটি শিশুর স্বাভাবিক জীবনের মৃত্যুই ঘটায় না। সেই সঙ্গে একটি জাতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এতে মানব জীবনের সকল বিধি-বিধান ও অবস্থার সমাধান দেয়া হয়েছে। নিরাপদ মাতৃত্ব বা মায়ের সুরক্ষার বিষয় সম্পর্কেও দিক-নির্দেশনা রয়েছে।

এবার দেখা যাক ইসলাম এ ব্যাপারে কি বলে?

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের জীবন রক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সওয়াবের কাজ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমে বলেন, ‘আর কেউ কারো প্রাণ বাঁচালে সে যেন গোটা মানবজাতিকে বাঁচালো। ’- সূরা মায়িদা : ৩২

সন্তান সম্ভবা একজন মায়ের জীবন গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ের যেকোনো মুহূর্তে সংকটে পড়ে। সুতরাং তার জীবন রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ইসলাম কারো জীবন রক্ষায় অবহেলাকে বরদাশত করে না। এ প্রসঙ্গে হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার অবহেলা ও গাফলতির কারণে কোনো জীবন নষ্ট হলো বা ক্ষতিগ্রস্ত হলো এর দায়-দায়িত্ব তার। ’

অন্যদিকে কোনো মায়ের ক্ষতি ও কষ্ট কাম্য নয়। কারণ এটা নবী করিম (সা.) পছন্দ করেননি। হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি শিশুর মাকে কষ্ট দেয়া পছন্দ করি না। ’ -সুনানে তিরমিজি

সন্তান সম্ভবা কোনো মায়ের বিষয়ে অবহেলা করা যাবে না। এ বিষয়ে যথাযথ দায়িত্বশীলের কোনো উপায় নেই মুখ ফিরিয়ে থাকার। কারণ হাদিসে বলা হয়েছে প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল (কিয়ামতের মাঠে) তোমাদের দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। ’

এছাড়াও পবিত্র কোরআনে কারিমে মায়ের গর্ভধারণ ও প্রসবজনিত কষ্টের কথা উল্লেখ করে তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভেধারণ করে। এরপর পর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। ’ -সূরা লুকমান : ১৪

সেবা পওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার মা। কারণ, প্রত্যেক মা এমন তিনটি কাজ করেন যা কোনো পিতা করেন না। এ জন্য সেবা পাওয়ার বেশি হকদার মা। ক. তিনি গর্ভধারণ করেন, খ. প্রসব বেদনা সহ্য করেন ও গ. দুগ্ধদান করেন। এ জন্যই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মায়ের সেবাপ্রপ্তিকে বাবার ওপর তিন গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

দেখুন, ইসলামি শরিয়ত গর্ভবতী মায়ের রোজা মওকূফ করে তার কষ্টের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। এটা ইসলামি শরিয়ার বিধান। এমনকি শরিয়ত দুগ্ধবতী মায়ের রোজাও মওকূফ করেছে। এর পরও গর্ভবতী কিংবা দুগ্ধবতী কোনো মায়ের প্রতি সামান্যও অবহেলার সুযোগ নেই। আরেকটি বিষয় দেখুন, উপরোক্ত মাসআলা দু’টোতে ইসলামি শরিয়ত আল্লাহর হকের ওপর বান্দার হককে প্রাধান্য দিয়েছে। কারণ পরবর্তীতে মা ও সন্তান সুস্থভাবে বিকশিত হয়ে যেন আল্লাহর হক ও বান্দার হক আদায় করতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘন্টা, মে ২৮, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।