হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতিত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। -ইবনে হিব্বান, হাদিস- ৫৬৬৫
আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত আলা ইবনুল হারিছ (রহ.) থেকে বর্ণিত, উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রাতে নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে, আমার আশঙ্কা হলো- তার হয়তো ইন্তেকাল হয়ে গেছে।
এ রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মতো মনে করা এবং এ রাতের ফজিলতের ব্যাপারে যত হাদিস এসেছে তার সবগুলোকে ‘মওজু’, ‘যয়িফ’- দূর্বল মনে করা যেমন ভুল; তেমনি এ রাতকে শবেকদরের মতো বা তার চেয়েও বেশি ফজিলতপূর্ণ মনে করাও একটি ভিত্তিহীন ধারণা। শবেবরাত নিয়ে বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি কোনোটিই উচিত নয়। যতটুকু ফজিলত প্রমাণিত এ রাতকে ততটুকুই গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং এ কেন্দ্রিক সকল রসম-রেওয়াজ পরিহার করা উচিত।
শবেবরাতে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে মোমিন-মুসলমানরা বিভিন্ন আমল করে থাকেন। আলেমরা শবেবরাতে যে সব আমলের কথা বিশেষভাবে বলেছেন, সেগুলো হলো—
নফল নামাজ : শবেবরাতের অন্যতম আমল হলো নফল নামাজ আদায় করা। তবে শবেবরাতের নফল নামাজের কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। অন্য সময়ের মতোই নফল নামাজ দুই রাকাত দুই রাকাত করে যত রাকাত ইচ্ছা এবং যে কোনো সূরা দ্বারা আদায় করতে পারবেন।
কোরআন তেলাওয়াত : শবেবরাতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা। হাদিসে বলা হয়েছে কোরআন তেলাওয়াত হচ্ছে সর্বোত্তম জিকির। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, লোহায় পানি লাগলে যেমন মরিচা পড়ে, তেমনি গুনাহ করতে করতে মানুষের অন্তরে কালো কাল দাগ পড়ে যায়। নবী (সা.)-এর এ উক্তি শ্রবণ করে সাহাবাদের মধ্য থেকে একজন আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল। কীভাবে অন্তরের সে দাগগুলো বিদূরিত করা হবে? উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, মৃত্যুকে খুব বেশি করে স্মরণ করা আর কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা। এছাড়া কোরআন শরিফ তেলাওয়াতের সওয়াবও অসীম।
তওবা-ইস্তেগফার : শবেবরাতে জীবনের কৃত গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, নফসের প্রলোভনে ও শয়তানের ধোঁকায় পড়ে কোনো বান্দাহ গোনাহের কাজ করে ফেলার পর যদি আল্লাহর দরবারে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। ফলে সে এরূপ হয়ে যায়, যেন সে আদৌ কোনো পাপ করেনি। পবিত্র এ রাতে তাই আমাদের বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার পড়তে হবে।
কবর জিয়ারত : কবরস্থানে গিয়ে মৃত আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করা এবং তাদের পরকালীন কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বয়ং এ আমল করেছেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে আমরা পাই যে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শবেবরাতে জান্নাতুল বাকি নামক কবরস্থানে তাশরিফ নিয়ে মৃতদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেছেন।
হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) ও হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তারা উভয় বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যদি এমন কোনো ব্যক্তি মৃতের কবরের পাশে উপস্থিত হয় (যার সঙ্গে মৃতের জীবিত থাকা অবস্থায় পরিচয় ছিল) এবং তাকে সালাম জানায় তাহলে মৃত ব্যক্তি তখনও তাকে চিনতে পারে এবং তার সালামের উত্তর দিয়ে থাকে। এমনকি দুনিয়ায় তার সঙ্গে পরিচয় না থেকে থাকলেও তার এ জিয়ারতে মৃত সন্তুষ্ট হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘন্টা, জুন ০২, ২০১৫
এমএ/