সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্কৃষ্ট মাস মাহে রমজান, হাজার মাসের সেরা। শান্তির বারতা নিয়ে উদ্বেলিত ও উচ্ছ্বসিত করে তুলেছিল মুমিনের হৃদয়।
ইবাদতের বসন্তকাল হচ্ছে মাহে রমজান। ইবাদতের এক লোভনীয় ও জমজমাট অফার নিয়ে প্রতিবছর মুমিনের দুয়ারে এসে হাজির হয় এই পবিত্র মাস। মহান রাব্বুল আলামিন এ মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। হাদিসের ভাষায় তা সত্তর গুণ করে দেয়া হয়। ছোট-বড় প্রতিটি কাজের প্রতিদান সমহারে বৃদ্ধি পায়। মুমিন মাত্রই রমজানে অধিক ইবাদতে প্রয়াসী ও আগ্রহী হয়ে থাকেন। সবাই নিজ-নিজ সাধ্যমতো ইবাদত করে থাকেন। এজন্যই তো রমজানের দিনগুলোতে মসজিদগুলো কানায় কানায় ভরে ওঠে, লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। সারা বছরেও যাদের মসজিদের চৌকাঠ মাড়ানোর সুযোগ হয়নি রমজানে, সারাদিন সিয়াম পালনের পরও ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর নিয়ে তারা ইশার নামাজসহ বিশ রাকাত তারাবির নামাজ পড়ার মতো বিশাল কষ্ট স্বীকার করে থাকেন অনায়াসেই।
এজন্যই আল্লাহ রোজার প্রতিদান স্বহস্তে দান করবেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, বনি আদমের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি হতে থাকে- ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ এমনকি আল্লাহ চাইলে তার চেয়েও অনেক বেশি দেন। আর রোজার ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, রোজা আমারই জন্য আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। -সহিহ মুসলিম শরীফ
এমন আরও কত-শত ফজিলত ও গুরুত্বের কথা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সারাদিন সিয়াম সাধনার পর ইফতারের সময় রোজাদারের মনে কী এক অনাবিল সুখ-শান্তি ও আনন্দের ঝড় সঞ্চালিত হয়, তা কেবল রোজাদারই ভালো জানে। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দঘন মুহূর্ত রয়েছে- এক হচ্ছে ইফতারের সময়। আরেক হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। -সহিহ মুসলিম শরীফ
এই অর্জনের মহা সুযোগের মেয়াদ হাঁটি হাঁটি পা পা করে এসে পৌঁছেছে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে। হাতে গোনা মাত্র কয়েকদিন বাদেই বিদায় নিতে যাচ্ছে রহমতের বাণী, মাগফিরাতের বারতা আর নাজাতের ঘোষক পবিত্র মাহে রমজান। লোভনীয় অফার কখনোই স্থায়ী হয় না। আর হলে এর মূল্যায়ন থাকে না। তাই রমজানের জমজমাট অফারও আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে যাবে। তাই ইচ্ছা না থাকলেও বলতে হয়, ‘আল-বিদা মাহে রমজান। ’ তবে যাওয়ার আগে সুন্দর একটি মহোত্সব আমাদের অবশ্যই উপহার দিয়ে যাবে।
আর মাত্র কদিন বাদেই অস্তমিত হবে রমজানের চাঁদ। চাঁদ দেখা গেলেই শুরু হয়ে যাবে ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ সঙ্গীত। অপরিমেয় আনন্দ ও নির্মল খুশির বার্তা নিয়ে হাজির হবে আকাশের কোলজুড়ে। চাঁদ দেখা মাত্র ছোট-বড়, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব মুসলমানের অন্তর আনন্দে ভরে উঠবে। এই আনন্দোত্সবটি মূলত আত্মসংযমের উত্সব, সংযমীদের উত্সব। যথাযোগ্য ভাব-গাম্ভীর্য ও উত্সাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হবে খুশির ঈদ পবিত্র ঈদুল ফিতর। এক মাসের শারীরিক ক্লান্তি কাটিয়ে তুলতে আমাদের সুযোগ করে দেবে এই ঈদ। দিবালোকে খেতে থাকবে না কোনো বাধা। এদিন হালাল খাবার খেতে সবাই বাধ্য। কেউ খেতে না চাইলে ইসলাম তাকে মোটেও সমর্থন দেয় না। এজন্যই এই দিনে রোজা রাখার ব্যাপারে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদের কঠোরভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন। ইসলামি শরিয়তে ঈদের দিন রোজা রাখাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং ঈদগাহে যাওয়ার আগে মিষ্টিমুখ করে নিতে উত্সাহিত করা হয়েছে, সুন্নত আখ্যা দেয়া হয়েছে।
এই দিনটিকে উত্যাপনের জন্য মাসব্যাপী চলতে থাকে নানা আয়োজন। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে মানুষ ছুটে চলে নাড়ির টানে। অনিন্দ্য সুন্দরের আজন্ম আকাঙ্ক্ষা পূরণে আপনার জীবনে ঈদ বয়ে আনুক অনাবিল সুখ-শান্তি আর কল্যাণে ভরে উঠুক জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, এটাই আমার প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘন্টা, জুলাই ০৯, ২০১৫
এমএ/