রোজার বৈশিষ্ট্য এই যে, এটা মুসলমানকে দীর্ঘকাল শরীয়তের হুকুম ধারাবাহিকভাবে পালন করতে বাধ্য করে। আর তা প্রত্যেক বছর পূর্ণ একটি মাস ধরে দিন-রাত প্রত্যেকে (সমর্থ) মুসলমানকে ইসলামি শরিয়ত পালনে অভ্যাস করায়।
যে কারণে রমজান মাস বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত
ক. এই মাসে কোরআনে কারিম নাজিল হয়েছে।
খ. এই মাসে লাইলাতুল কদর আছে।
গ. এই মাসে ইসলামের প্রথম জিহাদ বদর যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয়ী হয়েছে।
ঘ. এই মাসে মক্কা বিজয় হয়েছে।
ঙ. রমজান মাসে বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়।
চ. রমজান মাসে শয়তানকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়।
ছ. রমজান মাসে নফল ইবাদতের ফরজ ইবাদতের মর্যাদা আর ফরজ ইবাদতে সত্তর গুণ অধিক মর্যাদা।
রোজার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুত্তাকির গুণাবলী অর্জন করা। মুত্তাকির সার কথা হচ্ছে সর্ব অবস্থায় আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত রাখা। অর্থাৎ সে হচ্ছে মুত্তাকি যে প্রতিটি কথা ও কাজে আল্লাহর আদেশ মেনে চলে। মানুষ যে কাজই করে না কেন তাতে দু’টি জিনিস অবশ্যই থাকবে- একটি তার উদ্দেশ্য অন্যটি সেই উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য গৃহীত পন্থা।
শুধু রমজানের আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে তাকওয়ার গুণ অর্জিত হবে না। তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে হলে যে আল্লাহকে ভয় করে সাধ ও সাধ্য থাকার পরও দিনের বেলায় কোন খাবার খায় না, পানীয় পান করে না সেই আল্লাহকে ভয় করে বাকী সকল কাজ পরিচালনা করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় কোনো ব্যক্তি রমজান মাসে দিনের বেলায় রোজা রাখলো রাতে মিথ্যা কথা বললো, ওজনে কম দিলো, ঘুষ বা সুদ খেল তাহলে সে সত্যিকারের রোজার সুফল থেকে বঞ্চিত হবে। সত্যিকারের রোজার সুফল পেতে হলে সব কথায় কাজে সর্ব অবস্থায় আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালন করতে হবে। আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ দুনিয়াতে যত লাভের হোক তা বর্জন করতে হবে আবার আল্লাহর আদেশ পালন দুনিয়ার জন্য যত ক্ষতির কারণ হোক না কেন তা পালন করতে হবে।
সাহাবি হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, শাবান মাসের শেষ দিন রাসূল (সা.) আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণদান কালে বলেন, ‘হে লোক সকল তোমাদের নিকট সমুপস্থিত একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং বরকতপূর্ণ মাস। এতে রয়েছে এমন একটি রাত যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ মাসে আল্লাহ সাওম ফরজ করেছেন এবং রাতে দীর্ঘ সালাত নফল করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে ১টি ফরজ আদায় করলো সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করলো। যে ব্যক্তি এ মাসে ১টি নফল কাজ করলো সে যেন অন্য কোন মাসের ফরজ কাজ করলো। এ মাস ধৈর্যের মাস। ধৈর্যের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। এ মাস সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। -মিশকাত শরিফ
রমজানের শিক্ষা
১. নিজেকে আল্লাহর একজন একনিষ্ঠ বান্দা হিসেবে গণ্য করার চেষ্টা করা।
২. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ছাড়া জীবনের দ্বিতীয় কোনো লক্ষ্য থাকবে না।
৩. যে কোনো পরিস্থিতিতে যে কোনো সময় আল্লাহর হুকুম মেনে চলার জন্য প্রস্তুত থাকা।
৪. আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। তিনি সবকিছু শুনেন, দেখেন ও জানেন এই অনুভূতি সর্বদাই অন্তরে জাগ্রত রাখা।
৫. আল্লাহ ছাড়া দুনিয়ার সবকিছুর কৃতিত্ব অস্বীকার করা এবং নিজের ও আশেপাশের সবকিছুর ওপর আল্লাহর হুকুমের কৃতিত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
৬. বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে একটি একনিষ্ঠ সম্পর্কের সূত্রপাত হয়।
তাই আসুন, আমরা যারা নিজেদেরকে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল (সা.)-এর উম্মত দাবি করি আমাদের উচিত রোজার মাসে যেভাবে আল্লাহকে ভয় করে দিনের বেলায় সকল খাবার ও পানীয় থেকে বিরত ছিলাম। আগামী এগারটি মাসও সেই আল্লাহকে ভয় করে জীবন অতিবাহিত করি। সকল কাজে ও কথায় আল্লাহর আদেশ ও নিষেধকে প্রাধান্য দেই এবং নিজেকে সমাজে মুত্তাকি হিসেবে পেশ করি তাহলে এই রোজা থেকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র উপকৃত হবে এবং মোবারক হবে এই রমজান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘন্টা, জুলাই ১০, ২০১৫
এমএ/