অনেকেই ভুলে গেছে ওয়ানডে ক্রিকেটের ১৯৪ রান করা রেকর্ডধারী ওপেনার সাঈদ আনোয়ারকে। ক্রিকেট মাঠে বাইশ গজের এই শাসক এখন আর সম্পৃক্ত নয় ক্রিকেটের সঙ্গে।
একটা ঘটনা তথা মৃত্যু বদলে দিয়েছিল পাকিস্তানের সর্বকালের অন্যতম ওপেনিং ব্যাটসম্যান সাঈদ আনোয়ারের জীবন। ওই ঘটনার জের ধরে তিনি এখন ক্রিকেট মাঠে নয়, বরং মসজিদে মসজিদে, লোকালয়ে ছুটে চলেছেন ইসলামের সুমহান বাণী প্রচারে। ক্রিকেট কিংবদন্তি স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে অনুসরণ করতে গিয়ে যে পবিত্র কোরআনকে তাকের ওপর রেখে দিয়েছিলেন, সেই পবিত্র গ্রন্থটি পাঠ করে, ব্যাখ্যা করে তার জীবন কাটছে।
ঘনিষ্ঠভাবে তিনি জড়িত তাবলিগ জামাতের সাথে। তাবলিগি কাজে সাঈদ আনোয়ার বাংলাদেশেও এসেছেন বেশ কয়েকবার।
পাকিস্তানি এই গ্রেট ওপেনারের জীবনকে বদলে দেয়া ওই ঘটনাটি ছিল প্রাণপ্রিয় মেয়ে বিসমা’র মৃত্যু। মুলতানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকালেন, দলও জয় পেল। আনন্দঘন ওই দিনটাতেই তার কাছে মেয়ের মৃত্যুর খবর আসে। তিনি সহ্য করতে পারেননি। ধর্মের মধ্যেই তিনি নিজেকে ফিরে পেলেন। আত্মপ্রকাশ ঘটে নতুন সাঈদ আনোয়ারের।
ক্রিকেট মানেই তো উদ্দাম জীবনকে অনুসরণ করা। ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া মানে পাশ্চাত্যের অভিজাত জীবনধারা অনুসরণ করা। জয়ের পর মাঠে শ্যাম্পেনের বুদবুদ ছড়ানো, হোটেলে হইহুল্লোড়, নাইটক্লাবে যাওয়া ইত্যাদিকে ক্রিকেটের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।
সাঈদ আনোয়ার ওই অবস্থা থেকে বের হয়ে এসেছেন। পাকিস্তান ক্রিকেটে বর্তমানে নামাজ পড়া, দাড়ি রাখার যে প্রবণতা দেখা যায়, সেটার সূচনাও করেছিলেন তিনি। এখন অনেক ক্রিকেটার তাকে অনুসরণ করছেন। ইউসুফ ইউহানার মোহাম্মদ ইউসুফ হওয়ার কাজটি সাঈদ আনোয়ারই করেছিলেন।
বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান কিন্তু ক্রিকেট ছাড়ার আগে অনেক রেকর্ড গড়েছিলেন। বিশেষ করে ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি ছিলেন দলের স্তম্ভ। তিনি ক্রিজে থাকা মানে দলের এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিত হওয়া। একাই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখতেন।
তার জীবনে কিন্তু বেশ কিছু আশ্চর্য ঘটনা রয়েছে। তার বাবা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। সেই সুবাদে তিনি ইরানের তেহরানেও কাটিয়েছেন কিছু সময়। তবে ক্রিকেটটা পেয়েছিলেন বাবার সূত্রে। তার বাবাও ছিলেন ক্রিকেটার, খেলতেন ক্লাব পর্যায়ে। আর সাঈদ আনোয়ার নিজেও ইঞ্জিনিয়ার, কম্পিউটার সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার।
তার একটি গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড হলো ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৯৪ রানের ইনিংস। ১৯৯৭ সালে চেন্নাইতে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে ওই ইনিংসটি খেলেছিলেন। সেটি তখন ছিল একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। তার ওই রেকর্ডটি ভেঙেছিলেন শচিন টেন্ডুলকার। যদিও এখন আর শচিনের দখলে নেই সেই রেকর্ডটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘন্টা জুলাই ১১, ২০১৫
এমএ/