ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

মানবিক বিশ্ব গড়তে রমজানের ভূমিকা

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৫
মানবিক বিশ্ব গড়তে রমজানের ভূমিকা

মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত মর্যাদাময় ও গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে রমজান মাস। পবিত্র কোরআনে কারিমের সূরা আল বাকারার ১৮৩-১৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘রমজান মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে আল কোরআন, যা মানবজাতির জন্য সঠিক পথপ্রদর্শনকারী।

সঠিক পথে চলার জন্য সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী, হক-সত্য ও বাতিল-মিথ্যাকে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপনকারী। তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে পুরো মাসটিতে রোজা রাখবে। ’

পবিত্র কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী, মানুষের মধ্যে ‘তাকওয়া’র গুণ সৃষ্টির লক্ষ্যে রোজা পালনকে অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘তাকওয়া’র অর্থ হলো, আল্লাহতায়ালার প্রতি ভালোবাসা ও ভয়ের অনুভূতি। আল্লাহতায়ালার প্রতি ঈমান বা পূর্ণ বিশ্বাস এবং তার সীমাহীন অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা জাগ্রত হয়। আর তার অন্যান্য গুণাবলী; যেমন রাগ-ক্ষোভ ও শাস্তি দানের ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস লালনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে তার প্রতি ভয়ের ও মান্যতার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। ভালোবাসা ও ভয়ের এ মিলিত মানসিক অবস্থার নাম ‘তাকওয়া। ’

বস্তুতপক্ষে, ‘তাকওয়া’ হলো সব ভালো কাজের উৎস; সব মন্দ কাজ থেকে বাঁচার সত্যিকার উপায়। ‘তাকওয়া’র গুণাবলী অর্জনকারী ‘মুত্তাকি’ নামে অভিহিত, যে নিজে সৎ কর্মশীল থেকে আপামর মানুষকে সৎ কাজের প্রতি আদেশে দিতে পারঙ্গম আর নিজে সর্বপ্রকার অসৎ থেকে বিরত থেকে তাবৎ মানব-প্রজন্মকে অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকবার কাজে নিষেধ প্রদান করতে সক্ষম এবং তিনি মানুষকে আহ্বান জানাবেন কল্যাণের পথে। আর এ কথা তো সবারই জানা যে, প্রকৃত প্রস্তাবে মুসলমানদের সৃজন করাই হয়েছে মানবজাতিকে সর্বপ্রকার অকল্যাণ থেকে বিরত রেখে কল্যাণের পথ দেখানোর জন্য। এ মহান কাজেই পুরোটা জীবন উৎসর্গ করে গেছেন নবী মুহাম্মদ (সা.)। জাগতিক ধন-সম্পদ আহরণ বা পদ-পদবী গ্রহণের বদলে তিনি জীবন উৎসর্গ করে গেছেন আল্লাহতায়ালা কর্তৃক একমাত্র মনোনীত পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা ইসলামকে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণকামী কাঠামোতে উপস্থাপনের ঐশী দায়িত্ব পালনের কাজে।

পবিত্র মাহে রমজান প্রতিটি মুসলমানকে প্রশিক্ষিত ও পরিশীলিত করার মধ্য দিয়ে আরও কতিপয় বিষয়ে পারঙ্গম করে তুলে। এর মধ্যে যেসব বিষয় রয়েছে, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা কোনোভাবেই ভুলে গেলে হবে না যে, পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালার স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, ‘তোমাদের পাঠানো হয়েছে কল্যাণের জন্য। কারণ তোমরা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে। সৎ কাজের আদেশ করবে আর অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে। ’ অন্য আরেক স্থানে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে মানুষকে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দিকে, কল্যাণের দিকে ডাকে উত্তম ভাষা ও সদুপদেশের মাধ্যমে। ’

অতএব মুসলমান যদি তার ওপর অর্পিত বিশ্বব্যাপী সর্বজনীন কল্যাণকামিতার দায়িত্ব বিস্মৃত হয়, তাহলে পুরো বিশ্বের মতো তারাও অকল্যাণে নিপতিত হবে। আর যদি কল্যাণকামিতার প্রচার ও প্রসারে কোরআন-সুন্নাহর প্রদর্শিত পথে চলে, তাহলে নিজেদের কল্যাণের সঙ্গে সঙ্গে সারা দুনিয়ার কল্যাণও নিশ্চিত করতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘন্টা, জুলাই ১৩, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।