রমজানের বিশেষ একটি নেয়ামত হলো লাইলাতুল কদর। মহান আল্লাহতায়ালা এ নেয়ামত অন্য কোনো নবীর উম্মতকে দান করেননি।
হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আলী (রা.) ও হজরত ওরওয়াহ (রা.) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের সামনে বনি ইসরাঈলের চার মহান ব্যক্তি তথা হজরত আইয়ুব (আ.), হজরত জাকারিয়া (আ.), হজরত হিজকিল (আ.) ও হজরত ইউশা ইবনে নুন প্রমুখ সম্পর্কে আলোচনা করে বললেন, তারা দীর্ঘ হায়াত লাভ করার কারণে দীর্ঘকাল ধরে আল্লাহর ইবাদত করার সুযোগ পেয়েছেন। তাদের প্রত্যেকে ৮০ বছর করে আল্লাহতায়ালার ইবাদত করেছেন। এ সময়ের মধ্যে তারা একটিও নাফরমানি করেননি। এসব কথা শুনে সাহাবিরা অত্যন্ত বিস্মিত হলেন এবং নিজেদের ব্যাপারে আফসোস করলেন। এমন সময় হজরত জিবরাঈল (আ.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, আপনার উম্মত এ সব ব্যক্তির ৮০ বছর ইবাদত করার কারণে আশ্চর্যবোধ করছে, অথচ আল্লাহতায়ালা এর চেয়ে উত্তম ও বরকতময় বিষয় আপনার উম্মতকে দান করেছেন। অতঃপর তিনি সূরা কদর পাঠ করে শোনালেন। এতে রাসূলে কারিম (সা.) ও সাহাবিরা আনন্দিত হলেন। -দুরের মানছুর: ৬/৩৭১
লাইলাতুল কদর অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ রাত। এ রাতের মর্যাদার কারণেই মূলত তাকে লাইলাতুল কদর বলা হয়। আমাদের কাছে তা শবেকদর নামে পরিচিত। শবেকদরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো- এ রাতের মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল কোরআন লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আসমানে নাজিল করা হয়েছে। এরপর দীর্ঘ ২৩ বছর বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন সময়ের তা রাসূলে কারিমের (সা.) ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। শবেকদরের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আমি কোরআন মাজিদকে লাইলাতুল কদরে নাজিল করেছি। হে নবী আপনি কি জানেন লাইলাইতুল কদর কী?
লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ রাতে ফেরেশতা ও জিবরাঈল (আ.) তাদের পরওয়ারদেগারের হুকুমে সব (মঙ্গলময়) বিষয় নিয়ে অবতরণ করেন। এ রাত আগা-গোড়াই শান্তি। তা থাকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত (সূরা কদর)। এই আয়াতে বলা হয়েছে, শবেকদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এক হাজার মাসে ৮৩ বছর ৪ মাস হয়। শবেকদরকে হাজার মাসের সমান বলা হয়নি। বরং হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে। তবে এই উত্কৃষ্টতার সীমা-পরিসীমা নির্ধারণ করা হয়নি। তা একশ’ গুণ বেশি হতে পারে, এক হাজার গুণ বেশি হতে পারে বা তার চেয়েও বেশি হতে পারে। সঠিক পরিমাণ আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন।
শবেকদরে ইবাদত-বন্দেগি করার গুরুত্ব অপরিসীম। এ রাতে অধিক পরিমাণে নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আজকারে মশগুল থাকা আমাদের সবার কর্তব্য। একাধিক হাদিসে এর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাপ করে দেয়া হবে। -মেশকাত
অন্য হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি ইবাদতের মাধ্যমে শবেকদর লাভ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তার মর্যাদা বুলন্দ করবেন। মোট কথা, শবেকদর আমাদের জন্য ইবাদতের অপূর্ব সুযোগ। এতে কষ্ট কম, কিন্তু সওয়ার অনেক বেশি। দু’এক রাত জাগ্রত থেকে মনকে বুঝিয়ে ইবাদত করে নেয়া তেমন কষ্টের কাজ নয়। অথচ এতে সওয়াব অনেক বেশি। এটা আমাদের ওপর মহান আল্লাহর অনেক বড় কৃপা। কেউ যদি পূর্ণ অর্জনের এমন বড় সুযোগ পেয়েও গাফেল ও অমনোযোগী থাকে তবে তার মতো হতভাগা আর কে হবে? অতএব রমজানের কোনো মুহূর্তকে নষ্ট করা উচিত নয়। বিশেষত রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের প্রতি বেশি যত্নবান হওয়া উচিত এবং অধিক পরিমাণে রাত জাগরণ করা উচিত। যাতে শবেকদরের ফজিলত অর্জন হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘন্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
এমএ/