আজ পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার, জুমাতুল বিদা। মুসলমানদের কাছে জুমার গুরুত্ব ও মর্যাদা এমনিতেই অপরিসীম।
পরের তথা দশম আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা আয়-রোজগারের জন্য পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। ’
জুমার নামাজে অংশ নেয়ার জন্য এত বেশি জোর ও তাগিদ দেয়ার কারণ জানাতে গিয়ে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সূর্যোদয় হওয়া দিনগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ও শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা ও তাকে পৃথিবীতে পাঠানোর মতো কয়েকটি বিশেষ কারণেরও উল্লেখ করেছেন রাসূলুল্লাহ (সা.)। তিনি সেইসঙ্গে জুমার নামাজে ইমামের যত কাছাকাছি সম্ভব দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার তাগিদ দিয়েছেন। কারণ যে ইমামের যত পেছনে দাঁড়াবে সে বেহেশতেও তত দেরিতে প্রবেশ করবে।
এভাবে কোরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যায় দেখা যাবে, সব দিক থেকেই জুমার নামাজ মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই প্রতি ওয়াক্তে জামাতে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে না পারলেও অন্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জুমার নামাজ আদায়ের জন্য মুসলমানরা সপ্তাহের এই একটি দিনে মসজিদে যাওয়ার চেষ্টা করেন। রমজানের শেষ জুমা হওয়ায় জুমাতুল বিদার নামাজে মুসল্লিদের ভিড় অনেক বেড়ে যায়। গুনাহ থেকে মাগফিরাত এবং আল্লাহর রহমত পাওয়ার আশায় তারা মসজিদে যান।
মুসলমানরা অবশ্য কেবলই পরকালে বেহেশত পাওয়ার আশায় মসজিদে যান না। এক মাস ধরে রোজা রাখার মাধ্যমে সংযম পালনের পেছনেও মুসলমানদের জন্য রয়েছে নানামুখী কল্যাণ। এ সময় পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি চিন্তা ও কার্যক্রমের প্রতিটি ক্ষেত্রেও নিজেদের তারা পরিশীলিত ও পরিচ্ছন্ন রাখেন। কোনো অন্যায় কাজে অংশ নেন না, কারও সঙ্গে বিবাদে জড়ান না, অন্যের ক্ষতির চিন্তা এড়িয়ে চলেন। সব মিলিয়েই রমজানের দিনগুলোতে মুসলমানরা আত্মশুদ্ধির এবং আল্লাহতায়ালার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টায় নিয়োজিত থাকেন। এ চেষ্টারই প্রধান একটি সমাপনী উপলক্ষ হিসেবে আসে জুমাতুল বিদা।
বাংলাদেশেও জুমাতুল বিদা পালিত হয় যথেষ্ট ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে। আমরা মনে করি, দিনটিকে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে পালনের পাশাপাশি সামগ্রিক বাস্তবতার আলোকেও চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে।
নামাজ মানুষকে যাবতীয় অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরদ রাখে। সে হিসেবে বলা চলে, জুমাতুল বিদা মানুষকে সব ধরনের অন্যায়, অপরাধ ও গুনাহ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার শিক্ষা দেয়, মানুষের মনে আল্লাহর ভীতি সৃষ্টি করে। এটা কোরআনে কারিমেরই শিক্ষার নামান্তর।
তাই প্রত্যেকের উচিত কোরআনে কারিমের সেই কালাম স্মরণ করা, যেখানে ব্যবসাসহ সব কাজ বাদ দিয়ে জুমার নামাজে অংশ নিতে এবং নামাজশেষে আল্লাহর অনুগ্রহ ও সাফল্যের সন্ধানে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে বলা হয়েছে।
আজকের পবিত্র দিনে আমরা অন্যায়, দুর্নীতি, মুনাফাখোরি, মিথ্যাচার ও মানুষকে কষ্ট দেয়ার কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘন্টা, জুলাই ১৭, ২০১৫
এমএ/