ইসলামের প্রথম কেবলা ‘মসজিদুল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস’ সুপ্রাচীন শহর জেরুজালেমে অবস্থিত। মহানবী (সা.) মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদুন্নবী ও মসজিদুল আকসার উদ্দেশে সফরকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, যা অন্য কোনো মসজিদ সম্পর্কে করেননি।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও ষড়যন্ত্র
হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক কাবাঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর হজরত ইয়াকুব (আ.) জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন। অতঃপর হজরত সোলায়মান (আ.) জিনদের মাধ্যমে এই পবিত্র মসজিদের পুনর্নির্মাণ করেন। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে পুরো বাইতুল মুকাদ্দাস এলাকা মুসলমানদের অধীনে আসে। ১০৯৯ সালের ১৫ জুলাই খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা নামধারী মুসলিম শাসকদের সহায়তায় সমগ্র সিরিয়া ও ফিলিস্তিন দখল করে। এরপর তারা ১০৯৯ সালের ৭ জুন বাইতুল মুকাদ্দাস অবরোধ করে এবং ১৫ জুলাই মসজিদের ভেতর প্রবেশ করে ব্যাপক পরিবর্তন করে একে গির্জায় পরিণত করে।
১১৬৯ সালের ২৩ মার্চ। ফাতেমি খিলাফতের কেন্দ্রীয় খলিফার নির্দেশে সালাহউদ্দিন আইয়ুবী গভর্নর ও সেনাপ্রধান হয়ে মিসরে আগমন করেন। এরপর ১১৮৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলিম বীর সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী জেরুজালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন। অতঃপর ১১৮৭ সালের ২ অক্টোবর শুক্রবার সালাহউদ্দিন আইয়ুবী বিজয়ীর বেশে বাইতুল মুকাদ্দাস প্রবেশ করেন। বাইতুল মুকাদ্দাস মুক্ত হওয়ার পর সেখানকার মুসলিমরা প্রায় ৯০ বছর পর ক্রুসেডারদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেয়েছিল।
মহানবী (সা.) ও মসজিদুল আকসা
হিজরতের এক বছর আগে ২৭ রজব মিরাজের রাতে মহানবী (সা.) প্রথমে তারা বাইতুল আকসায় উপনীত হন। বোরাককে বাইরে বেঁধে মহানবী (সা.) মসজিদে প্রবেশ করেন এবং সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তার বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য। ’ -সূরা বনি ইসরাইল:১
মহানবী (সা.) মিরাজ শেষে পুনরায় মসজিদুল আকসায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং ইমাম হয়ে নবী-রাসূলদের নিয়ে নামাজ আদায় করেন।
মসজিদুল কিবলাতাইন ও মসজিদুল আকসা
মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর প্রায় ১৬ মাস মসজিদুল আকসার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হিজরি দ্বিতীয় সনের শাবান মাসে মতান্তরে রজব মাসের মাঝামাঝি মহানবী (সা.) কিছু সাহাবায়ে কিরামসহ মদিনার অদূরে মসজিদে বনু সালামায় জোহর মতান্তরে আসর নামাজ আদায় করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাকাতের মাঝামাঝি আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের দুই রাকাত কাবা শরিফের দিকে ফিরে আদায় করেছিলেন বিধায় ইসলামের ইতিহাসে মসজিদটি মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলা হিসেবে সুপরিচিত ও সমাদৃত।
আল কুদস দিবস
অভিশপ্ত ইহুদিদের হীন ষড়যন্ত্রে মসজিদুল আকসা ও জেরুজালেম নগরীতে মুসলমানদের পদচারণা আজ নিষিদ্ধ। ইমাম খোমেনি ১৯৭০ সালের আগস্টে পবিত্র রমজানের শেষ শুক্রবারকে বিশ্ব আল কুদস দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিশ্ববাসী বিশেষ করে মুসলমানেরা প্রতি বছর এ দিনটি বিশ্ব আল কুদস দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘন্টা, জুলাই ১৫, ২০১৫
এমএ
** অন্যায় থেকে নিবৃত্ত থাকার অঙ্গীকার করুন