মাসয়ালা : ঈদের দিন রোজা রাখা নিষেধ। হাদিসে আছে, প্রখ্যাত সাহাবি আবু সাঈদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা এ দু’দিন রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।
মাসয়ালা : ঈদ উপলক্ষে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানানো শরিয়ত অনুমোদিত একটি বিষয়। বিভিন্ন বাক্য দ্বারা এ শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। যেমন-
ক. হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেছেন, ‘জোবায়ের ইবনে নফীর থেকে সঠিক সূত্রে বর্ণিত যে, রাসূলে কারিম (সা.)-এর সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন সাক্ষাৎকালে একে অপরকে বলতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ অর্থ- আল্লাহতায়ালা আমাদের ও আপনার ভালো কাজগুলো (ইবাদত-বন্দেগি) কবুল করুন। ’ -বায়হাকি: ২/৩১৯; ফতহুল বারি
খ. ‘ঈদ মোবারক’ বলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। তবে প্রথমে উল্লেখিত বাক্য দ্বারা শুভেচ্ছা বিনিময় করা উত্তম। কারণ সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এ বাক্য ব্যবহার করতেন ও এতে পরস্পরের জন্য কল্যাণ কামনা ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া রয়েছে।
মাসয়ালা : ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা একান্ত প্রয়োজন। কেননা এদিনে সকল মানুষ নামাজ আদায়ের জন্য মিলিত হয়। ইবনে উমর (রা.) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত যে, তিনি ঈদুল-ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। ইবনে উমর (রা.) থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত যে, তিনি দুই ঈদের দিনে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। -বায়হাকি
ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, আমি আলেমদের কাছ থেকে শুনেছি তারা প্রত্যেক ঈদে সুগন্ধি ব্যবহার ও সাজ-সজ্জাকে মোস্তাহাব বলেছেন। -আল মুগনি: ইবনে কুদামাহ ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেছেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) দু’ ঈদেই ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। -যাদুল মায়াদ
এ দিনে সকল মানুষ একত্রে জমায়েত হয়, তাই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত হল তার প্রতি আল্লাহর যে নিয়ামত তা প্রকাশ করণার্থে ও আল্লাহর শোকরিয়া আদায়স্বরূপ নিজেকে সর্বোত্তম সাজে সজ্জিত করা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা তার বান্দার ওপর তার প্রদত্ত নিয়ামতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন। ’ -সহিহ আল জামে
ঈদ উপলক্ষে যথাসম্ভব পরিবারের সদস্যদেরকে ভালো খাবার ও সুন্দর পোশাক দেয়ার ব্যবস্থা করা উত্তম। তবে অপচয় যাতে না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। অনুরূপভাবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করা কর্তব্য। সেই সঙ্গে প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর রাখতে হবে। দরিদ্রদের যথাসম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে। যাতে ঈদের আনন্দ থেকে তারা বঞ্চিত না হয়।
মাসয়ালা : পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করা এবং ভিন্ন পথে ঈদগাহ থেকে ফিরে আসা সুন্নত। -সহিহ বোখারি: হাদিস নং ৯৩৩
ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য তাড়াতাড়ি ঈদগাহে যাওয়া। হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত। হাদিসে এসেছে, হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুন্নত হল ইদগাহে হেঁটে যাওয়া। ইমাম তিরমিজি হাদিসটি বর্ণনা করে বলেন, হাদিসটি হাসান।
মাসয়ালা : ঈদগাহে এক পথে গিয়ে অন্য পথে ফিরে আসা সুন্নত। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন। -সহিহ বোখারি
অর্থাৎ যে পথে ঈদগাহে যেতেন সে পথে ফিরে না এসে অন্য পথে আসতেন। এটা এ জন্য যে, যাতে উভয় পথের লোকদেরকে সালাম দেয়া ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। -যাদুল মায়াদ
মাসয়ালা : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন গোসল করতেন। ’ -ইবনে মাজা
একাধিক বর্ণনামতে রাসূল (সা.)-এর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাতে গোসল করার বিষয়টি প্রমাণিত রয়েছে। দুই ঈদের দিন পুরুষ ও মহিলাদের জন্য গোসল করা এবং উত্তম পোষাক পরিধান করা মোস্তাহাব। কেননা এ দু 'টি দিনই হলো প্রত্যেকের জন্য আনন্দ ও সৌন্দর্যর দিন। -কাবিরি: ৫২৪
মাসয়ালা : ঈদগাহ শহরের বাইরে হওয়া সুন্নতে মোয়াক্কাদা। কেননা রাসূল (সা.) সর্বদা ঈদের নামাজ শহরের বাইরে আদায় করতেন; বরং যারা অক্ষম তাদেরকে মাঠে নিয়ে যেতেন। কেবলমাত্র একবার অতি বৃষ্টির কারণে শহরের বাহিরে যেতে পারেননি। -আবু দাঊদ
তাই মূল বিধান হলো, দুই ঈদের নামাজ শহরের বাইরে একই স্থানে বড় সমাবেশের মাধ্যমে আদায় করা। এতে করে ইসলামের শান-শওকত ও মর্যাদা প্রকাশ পায়। কিন্তু বড় বড় শহরে বাইরে যাওয়া কষ্টকর। বিধায় শহরের ভিতরে কোনো মাঠে অথবা প্রয়োজনে মসজিদে আদায় করবে। তবে এতে করে মাকরুহ হবে না। কিন্তু যথা সম্ভব চেষ্টা করবে- প্রত্যেক মহল্লায় মহল্লায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জামাত করার চেয়ে একটি বড় জায়গায় বিশাল জামাত করা। -আহসানুল ফাতওয়া: ৪/১১৯, ফাতওয়ায়ে শামি: ১/৭৭৬
মাসয়ালা : ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে যাওয়া সুন্নতে মোয়াক্কাদা। বিনা ওজরে ত্যাগ করা শাস্তির উপযুক্ত অপরাধ। অসুস্থ ও দুর্বলদের জন্য শহরের বাইরে যাওয়া কষ্টকর হয় তাই তাদের জন্য মসজিদে ঈদের নামাজের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম অনুমতি দিয়েছেন । -ফাতওয়ায়ে রহিমিয়া
ঈদের দিনের আরো কিছু আমল
জামাতে ফজর নামাজ আদায় করা : ঈদের দিন ভোর বেলা ফজর নামাজ জামাতে আদায় করার মাধ্যমে দিনটি শুরু করতে হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি তারা ইশা ও ফজর নামাজের মধ্যে কী আছে তা জানতে পারতো তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এ দুটি নামাজের জামাতে শামিল হতো। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
ঈদের নামাজের পূর্বে খাবার গ্রহণ : ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের নামাজ আদায়ের পূর্বে খাবার গ্রহণ করা এবং ঈদুল আজহার দিন ঈদের নামাজের পূর্বে কিছু না খেয়ে নামাজ আদায়ের পর কোরবানির গোশত খাওয়া সুন্নত। বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের নামাজের পূর্বে খেতেন না। নামাজ থেকে ফিরে এসে কোরবানির গোশত খেতেন। -আহমদ
বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৫
এমএ/