জিহ্বার হেফাজত ও সদ্ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জিহ্বা বিভিন্ন অনিষ্টের মূল।
এই যে আমরা কথা বলি, এর মূলে কিন্তু রয়েছে জিহ্বার অবদান। কাজেই এই জিহ্বা মানুষের যেমন বন্ধু, তেমনি দুশমনও। রাজনীতিতেও যে নেতা-নেত্রী যত সুন্দর করে কথা বলেন, জিহ্বা সংযত রাখতে পারেন, তিনি তত জনপ্রিয়। আবার যার জিহ্বা যত কর্কষ বা যত অপ্রিয় কথা বলেন, তিনি ততটাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাই নেতা-নেত্রী হিসেবে জনগণের কাছে গ্রহণীয় ও বর্জনীয় হবার ক্ষেত্রে জিহ্বার অবদান অনেক। এতো গেল রাজনীতির কথা।
রাজনীতি ছাড়াও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যও জিহ্বা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। মুখগহ্বরে থাকা ছোট এই অঙ্গটি কতো গুরুত্বপূর্ণ আমাদের দেহ ও জীবনরক্ষার ক্ষেত্রে তা ভাবলে বিস্মিত হতে হয় বৈকি! এই জিহবা দিয়ে আমরা খাবারের গুণ পরখ করেই তবে খাই। জিহবা দিয়ে খাবারের স্বাদ অনুভব করি, বিস্বাদ কোনো কিছু গ্রহণ করি না। কম-বেশি অন্য প্রাণি তথা জীবজন্তুরও জিহ্বা রয়েছে। তবে মানুষের জিহ্বার মতো কিনা তা এখনও জানা যায়নি পুরোপুরি। সেটা বিজ্ঞানীরা হয়তো একদিন বের করবেন!
যাহোক, মানুষের মুখগহ্বরে থাকা এ অঙ্গটিও কিন্তু নানা অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়। কোনো বাড়ির দারোয়ান যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে বাড়ির অধিবাসীরা যেমন নিরাপদ থাকে না; তেমনই মানবদেহের বডিগার্ড জিহ্বা অসুস্থ হলেও এর ভেতরের অনেক অঙ্গই অনিরাপদ হয়ে পড়তে পারে। তাই এই জিহ্বারও সুস্থতা জরুরি। কাজেই এর ব্যবহার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও আমাদের যত্নবান থাকা দরকার।
আমরা জানি, কথা বলা একজন মানুষের জন্মগত অধিকার। মুখের ব্যবহারে কথা বলে মানুষ। প্রকাশ করে তার মনের ভাব-অভিব্যক্তি। কিন্তু মানুষের এই বাক-শক্তির অপব্যবহার পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে। বিপর্যয়ের কারণ ঘটাতে পারে জিহ্বার অবিবেচনাপ্রসূত ব্যবহার। এ জন্য ইসলাম এ বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব প্রদান করেছে। কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মুখের হেফাজত ও কথাবার্তায় সংযমী হওয়ার ব্যাপারে বেশ গুরুত্ব প্রদান করেছেন। তিনি নিজেও এ ব্যাপারে বেশ সতর্ক থাকতেন।
হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে তার জিহ্বা ও লজ্জা স্থানের সঠিক ব্যবহারের নিশ্চয়তা দিতে পারবে, আমি তাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দিতে পারব। ’ -সহিহ বোখারি
মুখের হেফাজত ও সতর্ক-সংযমীভাবে কথা বলার ব্যাপারে হাদিসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট নয়, সে যা শুনে তাই (সত্যতা যাচাই না করে) বলে বেড়ায়। ’ -সহিহ মুসলিম
কথাবার্তায় সংযমী হওয়াটা কেবল ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকেই ভালো এমনটি নয়, যারা কথা কম বলে এবং কথাবার্তায় সংযমী, সমাজের মানুষও তাদের শ্রদ্ধা করে। কথাবার্তায় সামান্য অসতর্ক অবস্থানকে পুঁজি করে শয়তান অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ শয়তান সবসময়ই চায় মানুষের মাঝে সমস্যা সৃষ্টি করতে। তাই আমাদের উচিত কথাবার্তায় সংযমী হওয়া এবং শয়তানের কুপ্ররোচনা থেকে মুক্ত থাকা।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, ‘শয়তান মানুষের রূপ ধরে তাদের কাছে আসে এবং তাদের মিথ্যা কথা (গুজব) শোনায়। অতঃপর লোকজন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের কেউ বলে, আমি এমন এক ব্যক্তিকে এ কথা বলতে শুনেছি যার চেহারা চিনি, কিন্তু নাম জানি না। ’ -সহিহ মুসলিম
এ হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, গুজব ছড়ানো এবং গুজবে কান দেয়া একেবারেই অনুচিত। সেই সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, মন্দ কথা, খারাপ উক্তি ও গালি-গালাজ থেকেও বিরত থাকা কর্তব্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘন্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৫
এমএ/