উদ্বেগ, অস্থিরতা ও উৎকণ্ঠা মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে যার অন্তরকে আল্লাহতায়ালা ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন, ঈমান দ্বারা যার হৃদয়কে আলোকিত করেন, তার অন্তর প্রশান্ত হয়ে যায়।
পবিত্র কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ হচ্ছে, 'যে ব্যক্তি আমার হেদায়েত অনুসারে চলবে, তাদের ওপর কোনো ভয় নেই, তারা চিন্তাগ্রস্ত ও সন্তপ্ত হবে না। ' -সূরা বাকারা: ৩৮
পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছেন, বিভিন্ন কারণে নানাবিধ দুশ্চিন্তা ও বিষন্নতা তাদের ওপর চেপে বসেছে, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার ভেতর দিনাতিপাত করছে এবং দুঃখ ভারাক্রান্ত অবস্থায় দিনযাপন করছে। তাদের প্রতি চিন্তাবিদ আলেমদের পরামর্শ হলো, ‘অজু করে ঘরের কোণে অথবা মসজিদে গিয়ে কোরআন তেলাওয়াতে মশগুল হও, পরওয়ারদিগার আল্লাহর দরবারে বিনম্রচিত্তে নামাজ আদায় করো, দেখবে আল্লাহর রহমতে সব ধরনের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও বিষন্নতা দূর হয়ে গেছে। ’
দুশ্চিন্তা মানুষের অভ্যন্তরীণ একটি অস্থিরতা। মানুষ যখন বর্তমান বা ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত থাকে তখন সে দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হয়। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষ অন্ধকারে বসবাস করে। সে তার পাশের মানুষকে খারাপভাবে দেখতে থাকে। সংকীর্ণতা ও অস্থিরতার পরিস্থিতি তার ওপর ভর করে। অবিশ্বাসের রোগ সৃষ্টি হয়। তার বিশ্বাসভাজন ব্যক্তিদেরও অবিশ্বাস করতে থাকে। তাদের শত্রু ও হিংসুক বোধ করে। দুশ্চিন্তা প্রসঙ্গে গবেষকরা বলেছেন, 'প্রত্যেক অপরাধের পেছনে একটি উৎকণ্ঠা কাজ করে, যা অপরাধীকে অপরাধে লিপ্ত হতে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। সেটা হতে পারে মৃত্যুর ভয় বা আর্থিক অসচ্ছলতার আশঙ্কা বা রোগব্যাধির শঙ্কা। '
মানুষের দুশ্চিন্তার পেছনে প্রধান কারণ হলো দুনিয়া অর্জনের পেছনে অত্যধিক আগ্রহী হওয়া। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, 'দুনিয়াই যার প্রধান উদ্দেশ্য হয়, তার সামনে অভাব-অনটন এসে হাজির হয়, সে দুনিয়ার শুধু সেই অংশটুকুই পায়, যা তার জন্য লিখে রাখা হয়েছে। ' এরপর রাসূল (সা.) বললেন, 'হে আল্লাহ, দুনিয়া হাসিল করাকে আমাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য করো না। '
আসলে ওই ব্যক্তির সুখ কীভাবে আসতে পারে, যার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য দুনিয়া উপার্জন, যার চেষ্টা-পরিশ্রমের প্রধান কামনা দুনিয়া অর্জন!
বস্তুত আত্মার প্রশান্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে বিরাট নেয়ামত। এ নেয়ামত হাতছাড়া করা ছাড়া কেউ এর মর্যাদা বোঝে না। দুঃখ-দুর্দশা যাকে আক্রান্ত করে ফেলে, সেই এ নেয়ামতের মূল্য বোঝে। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, 'আল্লাহর একটি নিদর্শন হলো দিন-রাতে তোমাদের ঘুম এবং তার অনুগ্রহ অনুসন্ধান করা। ' -সূরা আর রুম: ২৩
মনে রাখবেন, দুশ্চিন্তা দূর করার একমাত্র ওষুধ হচ্ছে ঈমান। আল্লাহর ওপর ঈমান ও হেদায়েতের রাস্তায় চলা ছাড়া আত্মার প্রশান্তি ও সমাজের নিরাপত্তার জন্য বিকল্প কোনো কার্যকরী ও দ্রুততর রাস্তা নেই। ঈমান সমাজের নিরাপত্তা বিস্তার করে। আশা-প্রত্যাশার প্রসার ঘটায়। আল্লাহর ওপর ঈমানদার, সুন্দরভাবে ইবাদতকারী, প্রকৃত তাওয়াক্কুলকারী কখনোই অতীত নিয়ে আফসোস করে না, ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয় না।
আল্লামা ইবনে কায়্যিম (রহ.) বলেন, 'দুশ্চিন্তা দ্বারা তোমার আনন্দকে নিঃশেষ করো না। দুঃখ দ্বারা তোমার জ্ঞানকে নষ্ট করো না। তুমি যদি তোমার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করো, তাহলে দেখতে পাবে যে, আল্লাহ তোমাকে এমন কিছু জিনিস দান করেছেন যা তুমি আল্লাহ তায়ালার কাছে চাওনি। সুতরাং একথা বিশ্বাস করো যে, আল্লাহ তায়ালা তোমার কাঙ্ক্ষিত প্রয়োজন পূরণ না করলে অবশ্যই তাতে তোমার জন্য মঙ্গল রয়েছে। '
মোমিন আল্লাহর ইচ্ছায়ই ঈমানদার থাকে। আল্লাহ যা চান, তা হয়। তিনি যা চান না, তা হয় না। এরশাদ হয়েছে, 'পৃথিবীতে ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর কোনো বিপদ আসে না; কিন্তু তা জগৎ সৃষ্টির আগেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। এটা এজন্য বলা হয়, যাতে তোমরা যা হারাও তজ্জন্য দুঃখিত না হও এবং তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন তার জন্য উল্লসিত না হও। আল্লাহ কোনো উদ্ধত অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না। '-সূরা আল হাদিদ: ২২-২৩
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, 'তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুন্দরভাবে রিজিক অনুসন্ধান করো। কেননা কোনো ব্যক্তি তার জন্য নির্ধারিত রিজিক শেষ করার আগে মৃত্যুবরণ করবে না। '
সুতরাং দুনিয়ার কোনো জিনিসের জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া উচিত নয়; তকদিরে যা লেখা রয়েছে, তা আসবেই।
বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘন্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৫
এমএ