ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৫
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ

জার্মানি আয়তনের দিক দিয়ে ইউরোপের সপ্তম বৃহৎ রাষ্ট্র। ১৬টি অঙ্গ রাজ্য নিয়ে জার্মান ফেডারেল ইউনিয়ন গঠিত।

৩,৫৬,৯৭১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের জার্মান রাষ্ট্রের রাজধানী বার্লিন।

জার্মানির ৯ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ৪০ লাখ মুসলমান। এর অধিকাংশই তুরস্ক হতে আগত। বর্তমানে বিভিন্ন শহরে ২৫ লাখ তুর্কি বংশোদ্ভূত মুসলমান বসবাস করেন। জার্মান বংশোদ্ভূত মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ২ লাখের মতো। বার্লিন, কোলন, ফ্রাংকফুট, মিউনিখ, আচেন এবং মুলহেইমে মুসলমানের অবস্থান ৫ হতে ৬ শতাংশ। অবশ্য সব শহরে এ সংখ্যার অনুপাত সমান নয়।

পুরো জার্মানিতে ২ হাজারের মতো মসজিদ গড়ে উঠেছে। রাষ্ট্র পরিচালিত জার্মানির স্কুলগুলোতে মুসলমানদের ধর্মশিক্ষার কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারে আরবি ভাষা, কোরআন, হাদিস, ইসলামের ইতিহাস ও সংষ্কৃতি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা রয়েছে।

জার্মানির অন্যতম বাণিজ্যিক শহর ডুইসবুর্গ। জার্মানদের পাশাপাশি এই শহরের একটি বড় অংশ জুড়ে তুর্কি বংশোদ্ভুত মুসলমানরা বসবাস করেন। এই শহরে ২০০৮ সালের ২৬ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয় জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদের।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ জড়ো হয়েছিলো নয়নাভিরাম মসজিদটি দেখতে। হাতে লাল গোলাপ, পরনে বোরখা, কেউবা আধুনিক জিন্স সঙ্গে হিজাব। শুভেচ্ছার লাল গোলাপ দেখা গেছে অধিকাংশ তুর্কি নারীর হাতে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরু করা হয় যথারীতি পবিত্র কোরআনে কারিম তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি। ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে আমন্ত্রিত ছিলেন তুরস্কের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের সভাপতি আলি বার্দাকোগলু। ছিলেন জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইয়ুর্গেন রুটগার্স।

রুটগার্স ওই অনুষ্ঠানে বলেন, আমাদের গণতন্ত্র এবং আমাদের দেশের জন্য কে খ্র্রিস্টান, কে মুসলমান বা কে ইহুদি- এটা মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আমাদের ভবিষ্যত কী হবে, আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি কী হবে, নাগরিক হিসেবে আমাদের পরস্পরের মধ্যে যোগসূত্র কী হবে। আমাদের সংবিধান এক্ষেত্রে সবার জন্য সুন্দর এক পথ খুলে দিয়েছে।

ডুইসবুর্গের এই মসজিদে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন ১২শ’ মুসল্লি। শুধু পুরুষ নয় এই মসজিদে মহিলাদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থাও রয়েছে। মসজিদের একটি মিনারের উচ্চতা ৩৪ মিটার। আর ভেতরে নানান কারুকার্য দিয়ে লেখা রয়েছে আল্লাহর নাম ও পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন বাণী। কারুকার্যে ব্যবহার করা হয়েছে স্বর্ণসহ বিভিন্ন দামী উপাদান। এছাড়া রয়েছে ঝাড়বাতি আর কারুকার্যগুলোকে ফুটিয়ে তুলতে বিশেষ আলোকসজ্জা।

মসজিদটি নির্মাণে সময় লেগেছে তিন বছরের মতো। খরচ হয়েছে ৭৫ লাখে ইউরো। নামাজ আদায়ের স্থানের পাশাপাশি মসজিদটিতে রয়েছে তথ্যকেন্দ্র, হলরুম, আবাসন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যবস্থা।

নয়নাভিরাম এই মসজিদটি দেখতে সাধারণ জার্মানরাও ভীড় করেন। এটা শুধু জার্মানির নয় বারং এটা ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ একটি মসজিদ।

জার্মানির বিভিন্ন শহরে মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা গেলেও কিন্তু ডুইসবুর্গের এই মসজিদ উদ্বোধনের সময় কোনো ধরনের প্রতিবাদ দেখা যায়নি। বরং অনেক জার্মান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। এটা যেন মসজিদের প্রতি তাদের সমর্থনেরই প্রকাশ।

ডুইসবুর্গের যে এলাকায় মসজিদটি তৈরি হয়েছে, সেখানকার জার্মান নাগরিকরা চমৎকার এই মসজিদ দেখে বেশ খুশিই।

এই নতুন মসজিদ পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বাসিত তুর্কি বংশোদ্ভুতরা।

ইসলাম বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা, নতুন এই মসজিদ ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জার্মানদের সঠিক জ্ঞানদানে সহায়তা করবে। একইসঙ্গে তুর্কিদের সঙ্গে জার্মানদের বিভাজনের রেখা অনেকটাই কমে আসবে।

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পর এখন জার্মানি হচ্ছে ইসলামের সবচেয়ে উর্বর ভূমি। দেশটিতে ইসলামের দ্রুত প্রসার ঘটছে। মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে উল্লেখযোগ্যভাবে। শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনে তাদের অংশগ্রহণ প্রশংসাযোগ্য।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।