ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

হজ কবুলের জন্য পালনীয় বিষয়সমূহ

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৫
হজ কবুলের জন্য পালনীয় বিষয়সমূহ

পবিত্র হজ পালনের জন্য নিজ ঘর-বাড়ি ছেড়ে, পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বহু শহর-নগর, সাগর-নদী অতিক্রম করে মক্কায় পৌঁছতে হয়। ইহরাম বেঁধে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতাগুলো পালন করার মধ্য দিয়ে মূলত হাশরের মাঠের দৃশ্য ফুটে ওঠে।



হজ আসলে সারা জীবনের জন্যে একটি প্রশিক্ষণ। তার মানে হলো হজের সময়কার অর্জিত শিক্ষাগুলো একজন হজযাত্রীকে সারাজীবন ধরে পালন করে যেতে হয়। কেননা এসব শিক্ষা হলো মানবীয় পূর্ণতায় পৌঁছার সহজ-সরল পথ, সফলতার পথ।

সুতরাং কেউ যদি হজ পরবর্তী সময়ে হজের সময়ে অর্জিত প্রশিক্ষণসমূহের চর্চা না করে, তাহলে মনে করতে হবে, সে তাকওয়া অর্জনের সিঁড়ি থেকে নিজেকে দূরে রেখেছে। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় সে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ ওই হজ পালনকারী ইহরাম পরিধান করে তালবিয়া পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিল।

হজ বিষয়ে বলা হয়, মাবরূর হজের প্রতিদান জান্নাত। মাবরূর আরবি শব্দ। অর্থ মকবুল বা যা গ্রহণ করা হয়েছে। মাবরূর হজ অর্থ মকবুল হজ বা কবুল হজ। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আর মাবরূর হজের প্রতিদান জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম

ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলোম মকবুল হওয়ার জন্য একজন হজ পালনকারীকে বেশ কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা আবশ্যক।

এক. লোক দেখানো কিংবা সুনাম অর্জনের মানসিকতা বর্জন। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস ইবন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! এমন হজের তওফিক দান করুন, যা হবে লোক দেখানো ও সুনাম কুড়ানোর মানসিকতা মুক্ত। ’ -সুনানে ইবন মাজা

দুই. বৈধ উপার্জন দ্বারা হজ পালন করা। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অবৈধ উপার্জন নিয়ে কোনো ব্যক্তি যখন হজের উদ্দেশ্যে বের হয় এবং বাহনের পা-দানিতে পা রেখে ঘোষণা দেয়- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক...’, তখন আসমান থেকে একজন ঘোষক তার ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তোমার জন্য কোনো লাব্বাইক নেই, তোমার জন্য কোনো সৌভাগ্যবার্তা নেই। তোমার পাথেয় হারাম। তোমার ব্যয়-খরচা হারাম। তোমার হজ কবুল করা হয়নি। ’ –মুয়াত্তা

তিন. ধৈর্য, তাকওয়া ও সদাচার। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত ছাওর ইবন ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যে এই কাবা ঘরের ইচ্ছা করল অথচ তার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য নেই, তার হজ নিরাপদ নয়। ধৈর্য, যা দিয়ে সে তার মূর্খতাকে নিয়ন্ত্রণ করবে; তাকওয়া, যা তাকে আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখবে এবং সঙ্গী-সাথীর সঙ্গে সদাচার। ’ –আল ইসতিজকার

চার. দুনিয়ার প্রতি অনাগ্রহ এবং আখেরাতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি। এক ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ তাপস হজরত হাসান বসরিকে বললেন, হে আবু সাঈদ! মাবরূর হজ কোনটি? তিনি বললেন, ‘যে হজ দুনিয়ার প্রতি অনাগ্রহী এবং আখেরাতের প্রতি আগ্রহী বানায়। ’ –আল ইসতিজকার

পাঁচ. হজের আগের অবস্থা থেকে পরের অবস্থার উন্নতি হওয়া। বিষয়টি একান্তই নিজের অনুভূতির বিষয়। হজপালনকারী ব্যক্তি যখন হজের সফরে বের হবেন। পবিত্র ভূমিতে পদার্পণ করবেন। তারপর হজ সম্পন্ন করে নিজ দেশে ফিরে আসবেন, তখন বাহ্যিক কিছু আচার-আচরণের মাধ্যমে বুঝা যায়- তার আধ্যাত্মিক অবস্থার উন্নতি হয়েছ কি-না? যদি সে অন্যের সঙ্গে আচার-আচরণ, লেনদেন, আমানতদারি, অন্যের হক আদায় এবং ইবাদতের ওপর অবিচলতায় তার অবস্থার উন্নতি হয়, তবে বুঝতে হবে, তার হজ মাবরূর হয়েছে।

এছাড়া হজপালনকারীকে সর্বদা ভালো কথায় অভ্যস্থ হওয়া, অন্যকে আহার করানো, পরস্পরে সালাম বিনিময় করা, বেশি বেশি তালবিয়া পাঠ করা, পশু কোরবানি করা ও অন্যদের সঙ্গে স‍ৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করা।

মোট কথা, হজপালন করার সৌভাগ্য আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ অনুগ্রহ। শুধু অর্থ-সম্পদ ও শারিরীক সামর্থ্য থাকলেই হজপালনের সৌভাগ্য হয় না। তার পরও যাদের সৌভাগ্যে হজের সুযোগ ঘটে তাদের উচিৎ মাবরূর হজ পালনের চেষ্টা করা।

** ১২০ কেজি স্বর্ণ দিয়ে কাবার নতুন গিলাফ
** এক হাজার ফিলিস্তিনিকে হজ করাবেন সৌদি বাদশাহ সালমান
** হজ : তাওহিদবাদী বিশ্বমানবের ঐক্য
** পবিত্র কাবা শরিফের ক্যালিগ্রাফি
** পবিত্র কাবা নির্মাণের সময় যেসব দোয়া কবুল হয়েছিল
** ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি কী হজপালন করতে পারবেন?
** প্রিয়নবীর হাতেগড়া যে মসজিদ
** হজ পালনের সময় সেলফি তোলা হারাম
** এবার মাত্র ২ লাখ সৌদি বাসিন্দা হজের সুযোগ পাচ্ছেন
** তিন মিটার উঁচুতে ভাঁজ করে রাখা হলো কাবার গিলাফ
** হাজিদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে মসজিদে হারামের দুই শতাধিক দরজা
** পৃথিবীর বড় ঘড়ি মক্কা ঘড়ি
** হজের সময় দোয়া কবুলের স্থানসমূহ
** হজের কোরবানির পশুর দাম নির্ধারণ
** শারীরিকভাবে সামর্থ্য থাকা অবস্থায়ই হজে যাওয়া উচিত
** কবুল হজের বিনিময় নিশ্চিত জান্নাত
** রিকশা চালিয়ে হজের টাকা জোগাড়
** পবিত্র কাবা শরিফের মর্যাদা
** হজে যাওয়ার আগে বান্দার হক পূরণ করে যেতে হবে
** হজের সফরে মৃত্যুবরণকারীর মর্যাদা
** পকেটমারতে হজে যাওয়া, এ লজ্জা রাখি কোথায়?
** হারাম শরিফে নামাজ ও তাওয়াফের ফজিলত
** হজের সফরে খরচের প্রতিদান ব্যয় অনুপাতে প্রদান করা হবে
** হজযাত্রীদের জন্য যা জানা জরুরি
 
** মক্কা শরিফের দর্শনীয় কিছু স্থান
** কবুল হজের জন্য যে আমল বেশি বেশি করা দরকার
** হজ ফরজ হওয়ার শর্ত ও প্রকারসমূহ
** বদলি হজ আসলে কী?

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।