ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

নারী স্থপতির নকশায় নির্মিত মসজিদ

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৫
নারী স্থপতির নকশায় নির্মিত মসজিদ

মানবীয় মর্যাদার দিক থেকে নারী এবং পুরুষ সমান। একইভাবে একজন পুরুষের যতটুকু দায়-দায়িত্ব রয়েছে ঠিক ততটুকু দায়িত্ব রয়েছে একজন নারীরও।

ইসলামি মানবাধিকার ঘোষণায় নারী-পুরুষ এক আল্লাহর সৃষ্টি। এদিক থেকে তারা সবাই এক এবং অভিন্ন। একইভাবে আধ্যাত্মিক মহিমা অর্জনের ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষের মাঝে কোনো তফাৎ নেই।

ইসলামের এ মহান শিক্ষার আলোকে মসজিদ নকশার দায়িত্ব দেওয়া হয় তুরস্কের এক নারী স্থপতিকে। ওই স্থপতির নাম জায়নাব ফাদিলিউগু। তিনি তুরস্কের একটি মসজিদের নকশার কাজ বেশ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছেন। ২০০৯ সালের শেষ দিকে তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে ওই নারী স্থপতির ডিজাইন করা ‘সাকিরিন’ মসজিদের উদ্বোধন করা হয়।

একটি তুর্কি-সৌদি পরিবার বাবা-মায়ের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে মসজিদটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মসজিদটি নির্মাণে চীন এবং ব্রিটেন থেকেও স্থপতিরা এসে কাজ করেছেন। তুরস্কের অন্যান্য মসজিদ থেকে ওই মসজিদটি দেখতে অনেকটাই আলাদা। সাকিরিন মসজিদের মূল আকর্ষণ হলো- কাঁচের ঝাড়বাতি।

নিত্য-নতুন ও আকর্ষণীয় ডিজাইন বা উপাদান ব্যবহার করে নতুন কিছুর নকশা করা স্থপতি জায়নাবের কাছে খুব সহজ বিষয়। তার এ গুণের কারণে স্থপতি হিসেবে তিনি বেশ সুনামও কুড়িয়েছেন। ফলে দুবাই, লন্ডন, মুম্বাইসহ বিশ্বের অনেক শহরেই তাকে কাজের জন্য যাতায়াত করতে হয়।

তবে মুসলমানদের ইবাদতের ঘর মসজিদের জন্য কাজ করা জায়নাবের জন্য ছিল এক সুবর্ণ সুযোগ। এ কাজের প্রস্তাব পেয়ে প্রথমে তিনি বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, প্রস্তাবটি শুনেই আমি কেঁদেছিলাম। আমি বোধহয় খুব সহজেই কাঁদি। আমার মনে হয় একজন মহিলা হওয়া সত্ত্বেও আমাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেই আনন্দে আমি অভিভূত ছিলাম। বিশেষ করে এমন একটি সময়, যখন ইসলাম মেয়েদের কী করতে দেয় আর কী করতে দেয় না- তা নিয়ে চলছিল প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা। ঠিক সেই সময়েই একজন মহিলাকে বলা হলো একটি মসজিদ তৈরি করো। বিষয়টি কিন্তু খুব সাধারণ নয়।

সাকিরিন মসজিদের চত্বরে এবং ভেতরে অনেকাংশে জুড়ে রয়েছে ইস্পাত। সঙ্গে কাঁচের অসংখ্য ঝাড়বাতি। কাঁচের এই সুদৃশ্য ঝাড়বাতিগুলোই এ মসজিদের মূল আকর্ষণ। অনেকেই বলছেন, নতুন ধরনের যুগোপযোগী ডিজাইন দ্বারা মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে।

কিন্তু জায়নাব ফাদিলিউগু বলেন, ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে পুরনো কবরস্থানের কাছে তুরস্কের মতোই নতুন এবং পুরনোর সংমিশ্রণে নির্মাণ করা হয়েছে এই মসজিদ। মসজিদটি নির্মাণে সময় লেগেছে সাড়ে চার বছর।

যখন কেউ মসজিদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবে, চোখে পড়বে স্থপতি হিসেবে বড় বড় অক্ষরে লেখা জয়নাব ফাদিলিউগুর নাম। প্রকল্পের প্রধান তিনিই।

দশ হাজার বর্গফুট আয়তনের মসজিদটিতে একটি গম্বুজ ও প্রতিটি ৩৫ ফুট উঁচু দুটি মিনার রয়েছে। মসজিদের ভেতরে আল্লাহর ৯৯ নামসহ ক্যালিওগ্রাফি লিখেছেন স্মিথ আইরিস। মূল নামাজ ঘরের তিনদিকে ঘেরা সবচেয়ে বড় জানালাটির ডিজাইন করেছেন ওরহান কোকান। জানালাটির ডিজাইন করা হয়েছে কাঁচ দিয়ে। আর মিম্বরের ডিজাইন করেছেন তাইফুন এরদুগমাস। পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে মসজিদটিতে। মসজিদটিকে বাইরে থেকে দেখলে খুবই সাধারণ মনে হবে। তবে ভেতরটাকে সাধারণ কল্পনার বাইরে রেখে নির্মাণ করা হয়েছে। এর কোনো তুলনা সহজে দেওয়া একটু কঠিনই বটে!



বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।