ঢাকা: শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আমরা কোরবানির ঈদ উদযাপন করেছি। শনিবার কোরবানির দ্বিতীয় দিন।
আমাদের এই কোরবানি আল্লাহ গ্রহণ করেছেন কি-না তা তিনিই ভালো জানেন। তবে প্রত্যেক মুসলমানই আল্লাহকে খুশি করার জন্য কোরবানি দিয়ে থাকেন, এটি সত্য। এখানে আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতীকী পশু কোরবানির পাশাপাশি এর শিক্ষণীয় দিকগুলো জীবনের সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়নে সর্বাবস্থায় আন্তরিক থাকতে হবে। তবেই কোরবানির উদ্দেশ্য সফল হবে মানব জীবনে। যার প্রদীপ্ত প্রমাণ হজরত ইবরাহিম (আ.)। তিনি আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে আপন সন্তানকে কোরবানি করেছেন। আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মুসলমানকে শিক্ষা দিয়েছেন কোরবানি করার এবং তা সারাজীবন কাজে লাগানোর। হজরত ইবরাহিম (আ.) আরও শিক্ষা দিয়েছেন যে, যদি মুসলমানরা দুনিয়াতে আল্লাহর রহমত ও পরকালে তার দিদার লাভ করে চিরস্থায়ী সুখের স্থান জান্নাতে যেতে চায় তাহলে আল্লাহর কাছে নিঃসংকোচে আত্মসমর্পণ কর। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর ওপর ভরসা কর। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। ’ সূরা তালাক : ৩

কোরবানির মূল শিক্ষা তাকওয়া অর্জন ও আত্মার সংশোধন। বাহ্যিকভাবে কোরবানিদাতার মনের এই অবস্থা অনুধাবন করা যায় না। এটি যার যার অন্তরের ব্যাপার। অন্তর যদি মানুষের বিশুদ্ধ হয় তাহলে গোটা দেহই বিশুদ্ধ হয়ে যায়। আল্লাহ অন্তর দেখেই বান্দার বিচার করবেন। কার অন্তর কতটা স্বচ্ছ ও সুন্দর আল্লাহর কাছে তা পরীক্ষা দেওয়ার উপযুক্ত সময় কোরবানি। কোরবানি আসে আবার চলে যায়; কিন্তু আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে এর ফলাফলটা কী। জীবনে বহুবার পশু জবেহ করার মাধ্যমে কোরবানির ঈদ পালন করেছি; কিন্তু আমার কোরবানি কবুল হয়েছে কি? কেন হয়নি তা কি ভেবে দেখেছি? এর থেকে কী শিক্ষা গ্রহণ করেছি। অথচ কোরবানি ছাড়া মুসলমানের জীবন মূল্যহীন। কোরবানি ছাড়া পরিপূর্ণ মুমিন হওয়া যায় না। জীবনের সব কোরবানি খালেস দিলে করতে না পারলেও অন্ততপক্ষে জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত আনুষ্ঠানিক কোরবানি যেন সব মুমিন-মুসলমান স্বচ্ছ অন্তরে করতে পারেন, সে চিন্তাই সর্বদা করা উচিত। তা না পারলে বাকশক্তিহীন এই পশু কিয়ামতের কঠিন ময়দানে কোরবানিদাতার বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে নালিশ করবে। আল্লাহতায়ালা সে নালিশ কবুল করতে বিন্দুমাত্র সময় নেবেন না।
কোরবানি ঈদের আরেকটি শিক্ষা হলো একা একা ঈদ উপভোগ না করা। ঈদ মানে আনন্দ। নিজের আনন্দে গরিবদেরও শরিক করা। সাধ্যমতো তাদের মুখে একটু সুখের নির্মল হাসি ফোটাতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করা; কিন্তু সমাজের বিত্তশালীরা গরিবদের দিকে ফিরেও তাকান না। ঈদ আসে, ঈদ চলে যায়। দুঃখের বিষয়, গরিবরা ঈদ উপভোগ করতে পারে না। ফলে শান্তির জন্য সবকিছু বিসর্জন দিলেও প্রকৃত শান্তি আর মিলছে না। অথচ আমাদের নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ কতই না সুন্দর। তিনি গরিব ও অসহায়কে কাছে টেনে নিতেন। তাদের আদর করতেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন। গরিবদের সাহায্যের জন্য সর্বদাই তিনি ব্যাকুল থাকতেন।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র জীবনেও ঈদুল আজহা তথা কোরবানি ঈদ এসেছিল। তিনিও কোরবানি করেছিলেন। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ১০ বছর মদিনায় অবস্থান করেন এবং প্রতি বছর তিনি কোরবানি করতেন। ’ -তিরমিজি ও মিশকাত
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) জীবনে কখনও একা ঈদ উপভোগ করেননি; বরং গরিব-দুঃখীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি কোরবানি করেছেন। কোরবানির শিক্ষাকে বাস্তবায়ন করেছেন জীবনব্যাপী। এক মুহূর্তের জন্যও তা ভুলে যাননি। আমাদের উচিত পশু কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে নিজের পাশবিক চরিত্রকেও জবেহ করা এবং জীবন চলে গেলেও যেন আমরা কোরবানির শিক্ষা ভুলে না যাই সে অঙ্গীকার করা। পাশাপাশি কোরবানির শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে সুন্দর ও সুখময় করে গড়ে তোলা।
বাংলাদেশ সময়: ০১০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৫
এমএ/