কারো মর্যাদা বেড়ে গেলে তার দায়িত্বও বেড়ে যায়। যারা পবিত্র কাবা তওয়াফ করার, আরাফার ময়দানে অবস্থান করা এবং প্রিয় নবীজী (সা.)-এর রওজায়ে আতহারের সামনে উপস্থিত হয়ে সালাম নিবেদন করার সুবর্ণ সুযোগ লাভ করেছেন- তারা সত্যই খোশনসিব।
হজের সফর থেকে বাড়ি ফেরার পথেই একজন হাজি সাহেবকে নিজের ভবিষ্যত জীবন সম্পর্কে কাঙ্খিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে হাজি সাহেবের জীবনের গতিধারা বদলে যাবে। হজ পরবর্তী জীবনে প্রত্যেক হাজি সাহেবকে নিতে হবে, বাকি জীবনে আল্লাহর কোনো হুকুম অমান্য না করার, কোনো কাজ নবী করিম (সা.)-এর সুন্নতের বিপরীত না করার।
প্রত্যেক হাজি সাহেবকে অবশ্য অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, তিনি আল্লাহর খাস মেহমান হয়েছিলেন। নবী করিম (সা.)-এর খাস মেহমান হয়েছিলেন। এখন হজ পরবর্তী জীবনের কার্যকলাপ দ্বারা যদি আল্লাহর বিধান অমান্য হয়, নবীজীর সুন্নত লংঘন হয়- তবে প্রমাণিত হবে আল্লাহ ও রাসূল হাজি সাহেবকে যে সম্মাননা দিয়েছেন; হাজি সাজেব তার অবমূল্যায়ন করছেন।
একজন হাজি সাহেব তার কষ্টে উপার্জিত টাকা ব্যয় করে হজ করে এসেছেন। কেন? কেন এত বড় অংকের অর্থ এখানে খরচ করলেন? দুনিয়ার খ্যাতির জন্য, না পরকালের সওয়াবের জন্য? নিশ্চয়ই দুনিয়ার খ্যাতির জন্য নয়। হাজি সাহেবরা অবশ্য অবশ্যই আল্লাহকে খুশি করার জন্য, সওয়াবের আশায় হজ করেন। তো কিভাবে বুঝবেন, আপনার হজ কবুল হয়েছে? আপনি আল্লাহকে খুশি করতে পেরেছেন? আপনি হজের দ্বারা সওয়াব পাবেন?
বিষয়টি একদম সহজ। আপনার হজ পরবর্তী কার্যকলাপ আপনাকে বলে দিবে আপনার হজ কবুল হয়েছে কি-না? যদি দেখেন হজের পর আপনার ইবাদত-বন্দেগির প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেছে, আপনার দ্বারা গুনাহর কাজ কমে গেছে, দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ হ্রাস পেয়েছে ও আখেরাতের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে- তবেই বুঝবেন আপনার হজ কবুল হয়েছে।
তাই আল্লাহর দেওয়া সম্মাননা অক্ষুন্ন রাখতে এবং নিজের হজকে স্বার্থক করতে জীবন বদলে ফেলুন। জীবন বদলে ফেলা বলতে যা বুঝায় তা করুন। যেন আপনার পরিচিত যে কেউ মন্তব্য করতে বাধ্য হয়, লোকটা হজ থেকে এসে একেবারে পালটে গেছে। তবে এ পালটে যাওয়া লোকের বাহ্বা পাওয়ার জন্য নয়। এ পালটে যাওয়া আল্লাহ ও রাসূলের ভালোবাসায়।
পাল্টে যাওয়া জীবনের ক্ষেত্রে দু’টো দিককে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রাধান্য দিন। এক. রিজিক হালাল রাখুন। এমন কোনো পথে সম্পদ উপার্জন করবেন না- যে পথ ইসলামে স্বীকৃত ও অনুমোদিত নয়। হারাম কামাই নিজে ভোগ করবেন না, পোষ্যদের দিবেন না।
দুই. কোনো মানুষের অধিকার হরণ করবেন না। ভিন্নভাবে বলা যায়, কাউকেই কোনোভাবে কষ্ট দিবেন না। কারো ক্ষতি করবেন না। আপনার পেশি শক্তি বা জনবলের দাপটে কোনো অসহায়কে তটস্থ রাখবেন না।
আর মনে রাখবেন, জীবন বদলাতে চাইলে পরিবেশও বদলাতে হয়। নেককার হতে চাইলে নেককারদের সঙ্গে সমাজ ও বন্ধুত্ব করতে হয়। তাই আপনি হজ থেকে বাড়িতে যেয়ে নিজেকে বদলে ফেলার পাশাপাশি আপনার পরিবেশ বদলে ফেলার মেহনতও শুরু করুন। নিজের সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের দ্বীনি তালীম দানের উদ্যোগ গ্রহণ করুন। পরিবারের সবার জন্য কোরআন-হাদিস ও মাসআলা শিখার ব্যবস্থা করুন। বাড়ির ভেতর থেকে গুনাহর উপকরণগুলো দূর করুন। সবসময় সচেষ্ট থাকুন কাবা দেখে যে অনুভূতি হয়েছিল সে অনুভূতি নিয়ে যেন কবরে যেতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৫
এমএ