ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মহররম ও আশুরার ইবাদত

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৫
মহররম ও আশুরার ইবাদত

মহররম মাস প্রসঙ্গে কোরআনে কারিম ও হাদিস শরিফে যা এসেছে তা হলো, এ মাস অত্যন্ত  ফজিলতপূর্ণ মাস। পবিত্র কোরআনে কারিমের ভাষায় এটি ‘আরবাআতুন হুরুম’-অর্থাৎ চার সম্মানিত মাসের অন্যতম।



এ মাসে রোজা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ। ’ -সহিহ মুসলিম: ২/৩৬৮; জামে তিরমিজি: ১/১৫৭

মহররম মাসের রোজাসমূহের মাঝে আশুরার রোজার ফজিলত আরও বেশি। আশুরার রোজা প্রসঙ্গে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি। ’ -সহিহ বোখারি: ১/২১৮

হজরত আলী (রা.) কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমজানের পর আর কোন মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তার খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখ। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহতায়ালা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন। ’-জামে তিরমিজি: ১/১৫৭

অন্য এক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহতায়ালা অতীতের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। ’ -সহিহ মুসলিম: ১/৩৬৭; জামে তিরমিজি: ১/১৫৮

আশুরার রোজা সম্পর্কে আরেক হাদিসে আছে যে, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে; আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন রোজা রাখ। ’ -মুসনাদে আহমদ: ১/২৪১

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ তারিখেও অবশ্যই রোজা রাখব। ’-সহিহ মুসলিম: ১/৩৫৯

মহররম ও আশুরাকেন্দ্রিক নানা কুসংস্কার
এ মাসে পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এদিনে আল্লাহতায়ালা তার কুদরত প্রকাশ করেছেন। বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদেরকে ডুবিয়ে মেরেছেন। -সহিহ বোখারি: ১/৪৮১

তবে এ দিনের গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকে নানা ভিত্তিহীন কথাও বলে থাকেন। যেমন, এদিন হজরত ইউসুফ (আ.) জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হজরত ইয়াকুব (আ.) চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন। হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হজরত ইদরিস (আ.) কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়। অনেকে বলে, এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। -আল আসারুল মারফূয়া/ আবদুল হাই লাখনবি: ৬৪-১০০

এ মাসের একটি ঘটনা শাহাদাতে হজরত হুসাইন (রা.)। বলাবাহুল্য যে, উম্মতের জন্য এই শোক সহজ নয়। কিন্তু  নবী করিম (সা.)-এরই তো শিক্ষা-‘নিশ্চয়ই চোখ অশ্রুসজল হয়, হৃদয় ব্যথিত হয়, তবে আমরা মুখে এমন কিছু উচ্চারণ করি না যা আমাদের রবের কাছে অপছন্দনীয়। ’

অন্য এক হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই যারা (শোক প্রকাশ করতে যেয়ে) মুখ চাপড়ায়, কাপড় ছিড়ে এবং জাহেলি যুগের কথাবার্তা বলে। ’

অতএব শাহাদাতে হুসাইন (রা.) কে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হওয়া এবং সব ধরনের জাহেলি রসম-রেওয়াজ থেকে দূরে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য।

এ মাসে আরও যেসব অনৈসলামিক কাজকর্ম ঘটতে দেখা যায় সেগুলো হলো- তাজিয়া মিছিল, শোকগাঁথা পাঠ, শোক পালন, মিছিল বের করা, শোক প্রকাশার্থে শরীরকে রক্তাক্ত করা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।

এসব রসম-রেওয়াজের কারণে এ মাসটিকেই অশুভ মাস মনে করার একটা প্রবণতা অনেকের মাঝে লক্ষ করা যায়। এজন্য অনেকে এ মাসে বিয়ে-শাদী থেকে বিরত থাকেন। বলাবাহুল্য এগুলো অনৈসলামিক ধারণা ও কুসংস্কার। এসব অবশ্যই বর্জনীয়।

এ মাসের করণীয় বিষয়গুলো হলো- বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করা, দান-খয়রাত করা, নফল রোজা পালন করা এবং অন্যান্য নেক আমল করা। এর অন্যথা কাম্য নয়।



বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৫
এমএ

** মহররম মাস: তাৎপর্য, করণীয় ও বর্জনীয়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।