পবিত্র কোরআনে কারিম সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ আসমানি গ্রন্থ। যা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে।
বস্তুত কোরআন মজিদে মানব কিংবা জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত যে বৈজ্ঞানিক সূত্র-তত্ত্ব ও জ্ঞান রয়েছে তা মানুষ সাম্প্রতিক সময়ে আবিষ্কার করার সুযোগ পেয়েছে। এটা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর একটি জীবন্ত মুজিযাও বটে। কারণ, আল্লাহতায়ালা নবীর মাধ্যমে এমন একটি গ্রন্থ মানব জাতিকে দান করেছেন। যাতে মানবিক এমন সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয় রয়েছে তা ভাবতে অবাক লাগে। এটা পবিত্র কোরআনের আলাদা বৈশিষ্ট্য ছাড়া অন্যকিছু নয়। যেমন, মানুষের অধিক উচ্চতায় অবস্থানকালে শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া, আঙ্গুলের ছাপের বিশেষত্ব, চামড়ায় সংবেদনশীলতার উপস্থিতি, পাকস্থলীতে সংবেদনশীলতার অস্তিত্ব, মানববীর্যের গঠন, পুরুষ কর্তৃক লিঙ্গ নির্ধারণ এবং শ্রবণেন্দ্রীয়ের বিশেষত্ব ইত্যাদির বর্ণনা।
এ বিষয়গুলো প্রত্যেক বিবেচক ও চিন্তাশীল ব্যক্তিকে কোরআন মজিদ নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে। কোরআনকে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ নির্দেশনা গ্রন্থ বলে স্বীকার করবে। গ্রহণ করবে এবং এর আদেশের সামনে মাথা নত করবে। এবার আসা যাক মূল অালোচনায়।
শিরোনামে বলা হয়েছে মিথ্যার সঙ্গে কপালের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু আসলে বিষয়টি কী?
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমে বলেন, ‘কখনো নয়, যদি সে বিরত না হয়, তবে আমি তাকে নাসিয়া (কপালের সম্মুখভাগের চুল) ধরে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাব, মিথ্যাবাদী, পাপিষ্ঠ কপাল। ’ -সূরা আলাক: ১৫-১৬
ড. মাজহার ইউ কাজী বলেন, এই আয়াতগুলোতে মক্কায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ঘোরতর শত্রু আবু জেহেলের কথা বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, সে মিথ্যা বলত এবং তাকে এ মর্মে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, তাকে ‘নাসিয়া’ ধরে নিয়ে যাওয়া হবে, যার অর্থ হলো কপাল। এবার চলুন, আমরা মিথ্যা ও কপালের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।
মানুষের মাথার খুলির সম্মুখভাগ Cerebrum (মস্তিষ্কের যে ভাগ স্বেচ্ছাচালিত পেশীর আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করে)-এর সম্মুখপূর্ব অঞ্চল নিয়ে গঠিত। ব্যবচ্ছেদ বিদ্যা বিশারদ ও শরিয়ততত্ত্ববিদরা বলেন, পরিকল্পনার প্ররোচনা ও দূরদৃষ্টি এবং প্রাথমিক আলোড়নের ঘটনা সংঘটিত হয় সম্মুখপূর্ব Cerebrum -এর সম্মুখস্ত (ওপরের অংশের) লবের পেছনের অংশে।
এ বিষয়ে ডা. শিলি রড তার Essentials of Anatomy and Physiology (Mosby Year book inc,p,112.st Louis 1966) নামক গ্রন্থে লিখেন, পরিকল্পনার প্ররোচনা ও দূরদৃষ্টি এবং প্রাথমিক গতি সঞ্চারিত হয় সম্মুখস্ত লবের পেছনের অংশে, সম্মুখপূর্ব অঞ্চলে। প্ররোচনার ক্ষেত্রে জড়িত থাকার কারণে সম্মুখপূর্ব অঞ্চলকে আগ্রাসনের কার্যকরী কেন্দ্র বলেও বিবেচনা করা হয়।
এ থেকে প্রতীয়মান হয়, যখন একজন লোক সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে তখন কপালকে মিথ্যাবাদী ও পাপিষ্ঠ বলে আখ্যায়িত করা অধিক উপযুক্ত। পবিত্র কোরআনে কারিমে এটাকে নির্দেশ করে মিথ্যাবাদী, পাপিষ্ঠ ‘নাসিয়া’ বলে।
প্রফেসর কিথ মুর-এর মতে, বিজ্ঞানীরা কেবল বিগত ষাট বছরেই এ বিষয়টি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে এই দৃষ্টান্তের বর্ণনা দিয়ে বিশ্বাবাসী সতর্ক করেছেন শত শত বছর পূর্বে।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমে আরও বলেন, ‘আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তোমরা মানুষ হয়ে এখানে-সেখানে ছড়িয়ে পড়েছে। আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মাঝে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে, কওমের জন্য যারা চিন্তা করে। আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও তোমাদের বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য। আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে রাতে ও দিনে তোমাদের নিদ্রা ও তার অনুগ্রহ থেকে তোমাদের (জীবিকা) অন্বেষণ। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা শোনে। আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদেরকে ভয় ও ভরসাস্বরূপ বিদ্যুৎ দেখান, আর আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর তা দ্বারা জমিনকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে সে কওমের জন্য যারা অনুধাবন করে। -সূরা রুম: ২০-২৪
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৫
এমএ/