এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি মনেপ্রাণে, বিশ্বাসের সঙ্গে একবার কালেমা পাঠ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ’ বস্তুত একজন মানুষের জন্য চিরস্থায়ী জীবনে অনন্তকালের জন্য জান্নাত লাভের চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না।
মুসলমান হওয়া মানে দুনিয়াতে সফলতা, কবরে শান্তি, আখেরাতে মুক্তি এবং সবশেষে চিরশান্তির ঠিকানা জান্নাতের নিশ্চয়তা। একজন মুমিনের দাম এ দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে সবকিছু থেকেই বেশি। একজন মুমিন যত দিন এ দুনিয়াতে বেঁচে থাকবে তত দিন এ পৃথিবী সব ব্যবস্থাপনা ঠিক থাকবে। পৃথিবী টিকে থাকবে, ধ্বংস হবে না।
ঈমানের প্রথম অংশ হলো- ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, কোনো মাবুদ নেই। তিনি একক, অদ্বিতীয়। তার কোনো অংশীদার নেই। তিনি সব পারেন, সব করেন। সব ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একমাত্র তারই অধীন। তিনি সব ধরনের দুর্বলতা, ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও পবিত্র। সামান্য থেকে সামান্যতম বিষয়েও কেউ তার অমুখাপেক্ষী নয়, আর তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন- এ বিশ্বাস ও ধারণা মনেপ্রাণে স্থাপন করা।
ঈমানের দ্বিতীয় অংশ ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’। হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। তিনি সর্বশেষ নবী। মানুষের হেদায়েতের জন্য মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ পয়গম্বর। তার পর আর কোনো নবী অথবা রাসূল আসবেন না- এ কথাও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা এবং মেনে নেয়া। কেউ যদি এ কথা অবিশ্বাস করে, অস্বীকার করে- সে ঈমানদার থাকবে না; মুসলমান থাকবে না।
মুসলমানের কাছে ঈমানের ধন আছে, কালেমার সম্পদ আছে। তাই এ সম্পদ নষ্ট এবং ধ্বংস করার জন্য চারদিকে চেষ্টা ও প্রচেষ্টার কমতি নেই। অভিশপ্ত শয়তান সর্বদা মানুষকে বিপদগামী করতে চেষ্টা করে। শয়তানের প্ররোচণায় মুসলমানের ঈমান ধ্বংস করার জন্য চারদিকে নানা দল-উপদলে, ফেতনা-ফাসাদের জন্ম হয়েছে। তাই খুবই সতর্ক থাকতে হবে। পবিত্র কোরআনে কারিমের ভাষায় ‘মানুষ ও জিন উভয় ধরনের শত্রু থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। ’
অভিজ্ঞ আলেমদের অভিমত হলো, ঈমান রক্ষার জন্য সর্বাগ্রে ঈমান কাকে বলে, তা জানতে হবে। জানতে হবে কোন বিষয়গুলো ঈমানবিধ্বংসী। কী কী কাজ করলে ঈমান হারিয়ে যায় এবং ঈমান চলে যায়। আর কোন কাজের মাধ্যমে ঈমান থাকে এবং আরও মজবুত হয়।
এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইহুদি সম্প্রদায় ৭১ দলে বিভক্ত হয়েছিল। নাসারা সম্প্রদায় ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর শিগগিরই আমার উম্মত হবে ৭৩ দলে বিভক্ত। একটি দল মাত্র নাজাত পাবে, আর বাকি সবাই জাহান্নামে যাবে। জিজ্ঞেস করা হলো, নাজাতপ্রাপ্ত সেই একটি দল কারা হবে- ইয়া রাসূলুল্লাহ! হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি এবং আমার সাহাবারা যে পথে আছি সেই পথের যারা অনুসারী হবে, সেই পথকে যারা অনুসরণ করবে, তারাই হবে মুক্তিপ্রাপ্ত সেই জামাত। ’ –সুনানে তিরমিজি ও ইবনে মাজা
সুতরাং আল্লাহর রাসূল (সা.) এবং তার সাহাবার রেখে যাওয়া পথই এ উম্মতের একমাত্র মুক্তির পথ। এ ছাড়া যত মত-পথের উদ্ভব হবে, আবির্ভাব ঘটবে, সবকিছুকেই মিলিয়ে দেখতে হবে এ মাপদন্ডের সঙ্গে। সেই সঙ্গে সর্বদা কোরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে থেকে অনুসরণ করতে হবে সাহাবাদের। তাহলেই কেবল বাঁচা যাবে বিভ্রান্তি থেকে।
শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের সতর্ক করে গেছেন এমন একটি যুগ সম্পর্কে, যে যুগে এমন বিভক্তি দেখা দেবে। ফেতনা-ফ্যাসাদ প্রবল হবে। দাঙ্গাহাঙ্গামা বেড়ে যাবে। অশ্লীলতা, নির্লজ্জ বেহায়াপনা ব্যাপক আকার ধারণ করবে। সবকিছুই এখন আমাদের সমাজে দৃশ্যমান। সবকিছুই অক্ষরে অক্ষরে আমরা আমাদের সমাজে প্রতিফলিত হতে দেখছি। অশ্লীলতা সমাজে ব্যাপক আকারে ছড়িয়েছে গেছে। চারদিকে অন্যায়-অশ্লীলতার যেন কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এমতাবস্থায় ঈমানের ওপর টিকে থাকা একজন মুমিনের জন্য বেশ কঠিন। তাই এখনই অধিকতর সতর্ক না হলে, সাধবান না হলে ঈমান অক্ষত রেখে চলা ও বেঁচে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে। নানামুখী ফেতনা-ফ্যাসাদ ও বিভ্রান্তির কবলে পড়ে ঈমান হারানো কিংবা ঈমানের দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। বিদ্যমান বাস্তবতায় তাই আল্লাহর দরবারে প্রতিনিয়ত এ মর্মে দোয়া করা দরকার, আল্লাহ যেন আমাদের ঈমানের সৌভাগ্য থেকে মৃত্যু অবধি বঞ্চিত না করেন।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে ঈমানের ওপর অটল থাকার তওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৫
এমএ/