ঢাকা, রবিবার, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

একমাত্র ধর্মীয় অনুশাসনেই মুক্তি

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৫
একমাত্র ধর্মীয় অনুশাসনেই মুক্তি

মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) পালিত হচ্ছে বিশ্ব এইডস দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘এইচআইভি সংক্রমণ ও এইডস মৃত্যু নয় একটিও আর, বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়ব সবাই, এই আমাদের অঙ্গীকার।

’ এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব সম্প্রদায় ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্ব এইডস দিবস পালন করে আসছে। ইউএন এইডসের তথ্যমতে বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন মানুষ এইডসে আক্রান্ত।

চিকিৎসা দ্বারা এ রোগের আরোগ্য সম্ভব নয়। এখনও এই ঘাতক ব্যাধির প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। তাই রোগটি কিভাবে বিস্তার লাভ করে কিংবা রোগটি প্রতিরোধে কি কি করণীয় এ সম্পর্কে প্রতিটি মানুষের স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক।

তাই এইডস সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সচেতন জনগোষ্ঠী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন এমনকি দলমত-নির্বিশেষে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। এইডস প্রতিরোধে নৈতিকতার অনুশীলন ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার প্রচারণায় গণমাধ্যম সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এইডস থেকে বেঁচে থাকার জন্য যুবসমাজসহ ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সব পর্যায়ে ব্যাপক জনসচেতনতা ও সাবধানতা অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন।

বলা চলে, যুবসমাজ এইডস প্রতিরোধে অসাধারণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যুবকরা অবাধ ও অনিরাপদ যৌনাচার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি নিজেরা সচেতন হয় ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করে সমাজের মানুষকে ধর্মীয় অনুশাসন ও ইসলামের বিধিবিধান মেনে চলায় উদ্ধুব্ধ করে- তাহলেই কেবল এইডস প্রতিরোধ সম্ভব।

অবাধ যৌন মিলনের ফলে মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এইডসে। মানবতার ধর্ম ইসলামসহ কোনো ধর্মই একে সমর্থন করে না; এ ব্যাপারে ইসলাম সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বিভিন্ন জটিল রোগসহ উচ্ছৃঙ্খলতার জন্য দায়ী ব্যভিচার। তাই ইসলাম সব ধরনের অশ্লীলতা এবং ব্যভিচারের কদর্যতা ও নোংরামির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে; এ কাজকে হীন ও মন্দ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না, নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট আচরণ। ’ -সূরা বনি ইসরাঈল: ৩২

ইসলাম ব্যভিচারের পথ চিরতরে বন্ধ করে পৃথিবীতে নর-নারীদের সুস্থ-সুন্দর বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনযাপনে সমর্থ মানুষকে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে। স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের বাইরে কোনো দৈহিক মিলন ইসলাম অনুমোদন করে না। বৈধ স্ত্রী ব্যতীত অন্য নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের কারণেই এইডসের মতো প্রাণসংহারী ব্যাধির জন্ম হয়।

কেননা এইডসের ভাইরাস বহনকারী আক্রান্ত পুরুষের মাধ্যমে নিজেদের অজ্ঞতার কারণে নারীও এইচআইভি পজিটিভ হয়ে যায়। অথচ বিবাহিত নারী-পুরুষের মিলনে এইডসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই, যদি তাদের কেউ বিপথগামী না হয়। বৈবাহিক সম্পর্ক বহুগামিতার মূলে কুঠারাঘাত হেনেছে। ব্যভিচার প্রতিরোধ তথা সুস্থ জীবনযাপনের জন্য ইসলাম বিয়ের নির্দেশ দিয়েছে।

বিয়ে প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যুবকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে তারা যেন বিয়ে করে, কারণ বিয়ে পবিত্রতা রক্ষা এবং দৃষ্টিকে সংযত রাখতে সাহায্য করে। অপরদিকে যাদের সামর্থ্য নেই তারা যেন রোজা রাখে, কারণ রোজা যৌনক্ষুধা সংবরণে সহায়ক। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম

যুগে যুগে বিকৃত চিন্তা-চেতনার অনুসারী কিছুসংখ্যক লোক শয়তানের প্ররোচনায় নানা রকম অসামাজিক, অশ্লীল ও পাশবিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ইসলামে নৈতিকতাবিবর্জিত এমন মানুষকে পশু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়ে বলেছেন, ‘মানুষ ও পশুর মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হচ্ছে লজ্জা। ’

পক্ষান্তরে নৈতিকতায় উৎকর্ষ অর্জনকারী মানুষ আল্লাহর কাছে অত্যন্ত মর্যাদাবান। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘যৌনাঙ্গের হেফাজতকারী পুরুষ ও নারী আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, এদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান। ’ -সূরা আল আহজাব: ৩৫

বস্তুত সমাজ-সভ্যতাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার নিমিত্তে ইসলাম অশ্লীলতা ও অশালীনতা থেকে বেঁচে থাকা নির্দেশ দিয়েছে মানবজাতিকে। এর কারণ হলো, অশ্লীলতা ও অশালীন আচার-আচরণের মাধ্যমেই ভয়ংকর মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়ে ইরশাদ করেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা প্রকাশ্যভাবে চলতে থাকে, তখন তাদের মধ্যে প্লেগ এবং এমন অভিনব দুরারোগ্য ব্যাধি দেওয়া হয়, যা তাদের পূর্বপুরুষেরা কখনো শোনেনি। ’ –দায়লামি

হজরত নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, ‘যখনই কোনো জাতি বা সম্প্রদায় অশ্লীল ও ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মধ্যে এমন এক ভয়ংকর মহামারি দেখা দেয়, যা তারা অতীতে কখনো দেখেনি। ’ -ইবনে মাজা

হাল সময়ের এইডস তেমনই একটি প্রাণঘাতী রোগ। যা থেকে বাচাঁর একমাত্র পথ হলো ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে চলা ও ধর্মীয় অনুশাসনের অনুগামী হওয়া। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, এটাই এ রোগের একমাত্র সমাধান ও হাতিয়ার।



বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।