ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

পাগড়ি পরিধান ও ব্যবহার বিধি

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৫
পাগড়ি পরিধান ও ব্যবহার বিধি

মসজিদে নামাজের সময় অনেককেই দেখা যায় যে, শুধু ফরজ নামাজের সময় পাগড়ি পরিধান করেন। এক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য হলো, পাগড়ি বেঁধে নামাজ আদায় করলে ১ রাকাতে সত্তর রাকাতের সওয়াব পাওয়া যায়।

আবার অনেককে এটাও বলতে শোনা যায় যে, যদি ইমাম সাহেব পাগড়ি বেঁধে নামাজ পড়ান তাহলে ইমাম ও মুক্তাদিরা নামাজে সত্তর গুণ সওয়াব লাভ করবেন। বিষয়টি কী আসলে কী এটা নিয়ে এক ধরনের দ্বন্দ্ব কাজ করে অনেকের মনে।

বস্তুত পাগড়ি সুন্নত পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাধারণত যে সব পোশাক ব্যবহার করতেন পাগড়িও তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি বিভিন্ন সময় পাগড়ি ব্যবহার করেছেন। এটা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত আছে। সাহাবা ও তাবেয়িরাও নামাজে এবং নামাজের বাইরে ব্যাপকভাবে পাগড়ি পরতেন বলে বহু হাদিস ও বর্ণনা রয়েছে। তাদের নিকট পাগড়ি একটি অতি পছন্দনীয় পোশাক বিশেষ। তারা অন্যান্য পোশাকের ন্যায় তা ব্যবহার করতেন। খোলাফায়ে রাশেদিন, পরবর্তী খলিফা, ইসলামের ইমাম ও মনীষীরা প্রায় সবাই পাগড়ি পরিধান করতেন।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন সময় পাগড়ি ব্যবহার করেছেন বলে বহু হাদিসে এর বর্ণনা রয়েছে। যেমন হজরত জাবের (রা.) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) প্রবেশ করলেন। তখন তার মাথায় কালো পাগড়ি ছিল। -সহিহ মুসলিম

আরেক হাদিসে অাছে, হজরত মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) বলেন, একবার হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অজু করলেন এবং মাথার অগ্রভাগ ও পাগড়ির ওপর মাসেহ করলেন। -সহিহ মুসলিম

তাবেয়ি হজরত সোলাইমান ইবনে আবি আবদিল্লাহ (রহ.) বলেন, আমি মুহাজির সাহাবিদেরকে কালো, সাদা, হলুদ ও সবুজসহ বিভিন্ন রঙের পাগড়ি পরতে দেখেছি। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.), সাহাবায়ে কেরাম ও পূর্ববর্তী আলেম-উলামাদের অনুসরণে পাগড়ি ব্যবহার করলে অবশ্যই সওয়াব হবে। এটা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

মনে রাখতে হবে, পাগড়ি শুধুমাত্র নামাজের বিশেষ পোশাক নয়; বরং নামাজে এবং নামাজের বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই সমভাবে পরিধানযোগ্য একটি পোশাক। সাহাবা, তাবেয়ি ও পূর্ব যুগের আলেমরা পাগড়িকে শুধু নামাজের সঙ্গে সীমাবদ্ধ করতেন না। এই মূলনীতির আলোকে বলা চলে, শুধু নামাজের সময় পাগড়ি ব্যবহার করা, অন্য সময় ব্যবহার না করা পূর্ব আলেমদের রীতি পরিপন্থী কাজ।

পাগড়ি বেঁধে নামাজ আদায় করলে সত্তর রাকাতের সওয়াব পাওয়া যায় বলে যে কথা প্রচলিত আছে, এটা সহিহ নয়। এটি একটি ভিত্তিহীন কথা। অনেকে এটাকে হাদিসও বলে মনে করেন। ইসলামি শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই।

অনুরূপভাবে পাগড়ি পরিধান করে দুই রাকাত নামাজ পাগড়িহীন পঁচিশ রাকাতের সমান এবং পাগড়ি পরিধান করে এক জুমা পাগড়িবিহীন সত্তর জুমার সমান- বলে যেসব কথা হাদিসের নামে প্রচলিত আছে; এর কোনোটিই গ্রহণযোগ্য নয়। হাদিস বিশারদ আলেমরা এ সব বর্ণনাকে জাল বলেছেন। -লিসানুল মিজান: ৩/২৪৪

অতএব পাগড়ি পরিধান করে নামাজ আদায় করলে সত্তর গুণ, পঁচিশ গুণ সওয়াব বেশি পাওয়া সংক্রান্ত যে সব কথা প্রচলিত আছে সেগুলো হাদিসশাস্ত্রজ্ঞ ও বিজ্ঞ আলেমদের সুস্পষ্ট ভাষ্যমতে বাতিল। এ সব বর্ণনাকে ভিত্তি করে অধিক ফজিলত পাওয়ার আশায় পাগড়িকে শুধু নামাজের সময় ব্যবহার করা ঠিক নয়।

আর ইমাম পাগড়ি বেঁধে নামাজ পড়ালে ইমাম ও মুক্তাদি সকলেই সত্তর গুণ সওয়াব লাভ করবে, এ কথার সপক্ষেও কোনো বর্ণনা নেই। তাই ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- নির্ভরযোগ্য প্রমাণাদি ছাড়া এ ধরনের কথা বলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

উল্লেখ থাকে যে, পাগড়িকে নিয়মিত পোশাকের অংশ বানানো যে উত্তম কাজ তা লেখার শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। পাগড়ি মুসলমানদের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত পোশাক। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে পাগড়ি শুধু নামাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়।

পাগড়ি বাঁধার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। সেগুলো হলো-

ক. পূর্ণ পাগড়ি মাথার ওপর বাঁধা এবং এর কোনো লেজ বা ঝুল না রাখা।

খ.  পূর্ণ পাগড়ি মাথার ওপর বাঁধা এবং লেজ বা ঝুল পেছনে ঝুলিয়ে রাখা।

নবী করিম (সা.) থেকে উভয় পন্থার পাগড়ি বাঁধার কথা প্রমাণিত। তবে তিনি সাধারণতঃ দু’কাঁধের মাঝামাঝি স্থানে পেছন দিকে পাগড়ির লেজ ঝুলিয়ে রাখতেন।

ইমাম নববি (রহ.) বলেন, রাসূলুল্লাহর (সা.) পাগড়ি দুই ধরণের ছিল। ছোট পাগড়ি ছিল আনুমানিক তিন গজ কাপড়ের, আর বড় পাগড়ি ছিল সাত গজ কাপড়ের। -আপকি মাসায়েল আওর উনকা হল

পাগড়ি টুপির ওপর এবং টুপি ছাড়া উভয়ভাবে ব্যবহার করা যায়। তবে ভিন্ন ধর্মাবলম্বিদের সঙ্গে সাদৃশ্য হতে পারে বিধায় পাগড়ি টুপির ওপর বাঁধা উত্তম।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।