পরনিন্দা একটি জঘন্য বিষয়। যা মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
পরনিন্দা প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমের সূরা হিজরের ৮৮ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে আরাম-আয়েশ বা ভোগ বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, তার প্রতি কখনো তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না। ’ সূরা ত্বহার ১৩১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে সাংসারিক জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে যা তাদের পরীক্ষা করার জন্য দিয়েছি। তুমি তোমার চক্ষুদ্বয় কখনো তার প্রতি প্রসারিত করো না। ’ আর সূরা হুমাজার ১ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে। ’ সূরা হুজরাতের ১১ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা একে-অন্যের উপহাস করো না, কেননা যাকে উপহাস করা হয়, সে উপহাসকারী উপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর কোনো নারীকেও যেন উপহাস না করে, কেননা যে নারীকে উপহাস করা হয়- সে উপহাসকারীর চেয়ে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে-অন্যের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা পরস্পরকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম আরও মন্দ। ’
সূরা হুজরাতের ১২ নম্বর আয়াতে আরও বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনুমানভিত্তিক কথা থেকে দূরে থাক, কারণ বাস্তব জ্ঞান ছাড়া অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা পরস্পরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং অপরের পেছনে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে?’
পরনিন্দা বিষয়ে এরচেয়ে কঠোর বাণী আর কী হতে পারে? তার পরও মানুষ মাত্রই কমবেশি কুৎসা রচনায় অভ্যস্ত। মানুষ এটা ভাবে না যে, হিংসা ও পরনিন্দা পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি সৃষ্টি করে।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ মনোভাব পোষণ করো না, পরস্পরের বিরুদ্ধাচারণ করো না। তোমরা পরস্পরের ভাই ভাই হয়ে বসবাস করো। কোনো মুসলিমের জন্য তিনদিনের বেশি তার অন্য ভাইয়ের সঙ্গে কথা বন্ধ রাখা উচিত নয়। ’
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অনুমান থেকে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো না। কারণ অনুমান অনেকটা মিথ্যা ব্যাপার। আর কারো দোষ অনুসন্ধান করো না, পরস্পরকে ফাঁকি দিও না আর পরস্পরের প্রতি হিংসা করো না। ’
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের এমন সতর্কবাণী থাকার পরও প্রতিনিয়ত মানুষ একে অন্যের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করার চেষ্টায় তৎপর। অনেক সময় দেখা যায়, অফিস-আদালতে এমন কিছু লোক থাকেন, যারা নিজেকে অনেক বড় জ্ঞানী এবং নির্দোষ ভাবেন। তারা সহকর্মীদের কুৎসা ও গীবত করতে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সহকর্মীর সামনে ও পেছনে নিজের অযোগ্যতাকে আড়াল করতে গিয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিকট মিথ্যা অপপ্রচার চালান। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সত্যিকারের কোনো মুমিনের মাঝে এমন বদঅভ্যাস থাকতে পারে না। গোপনে ও প্রকাশ্যে কাউকে হয়রানি ও নাজেহাল করা আল্লাহতায়ালার কাছে ভীষণ অপছন্দনীয় কাজ। এমন কাজে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ খুব অসন্তুষ্ট হন।
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, সমাজ থেকে ঝগড়া-বিবাদ দূর এবং পরকালে মুক্তি পেতে হলে ব্যক্তিগতভাবে কিংবা গোষ্ঠীগতভাবে পরনিন্দা থেকে দূরে থাকতে হবে। আল্লাহতায়ালা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে হিংসা ও পরনিন্দার মতো খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য পবিত্র কোরআনে একাধিকবার তাগাদা ও নির্দেশ দিয়েছেন। শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদিসেও এমন অভ্যাসের অনুগামী হতে নিষেধ করে তা থেকে বেঁচে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।
তাই আসুন, সবাই হিংসা ও পরনিন্দার মতো পাপ কাজ পরিত্যাগ করে সুখময় সুন্দর ইসলামি সমাজ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হই।
সেই সঙ্গে দেশের সম্মানিত ইমাম-খতিবদের কাছে বিনীত আহবান, শুক্রবারের জুমার আলোচনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধর্মীয় সভা-সমাবেশ ও ওয়াজ মাহফিলে পরনিন্দা সম্পর্কে কোরআন-হাদিসভিত্তিক আলোচনা বেশি বেশি করুন। এ সম্পর্কে আলোচনা বেশি হলে মানুষের মাঝে সচেতনতা আসবে। মানুষের সচেতনতা ও আত্মসংশোধনই পারে পরনিন্দার কবল থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৫
এমএ/