শুরু হলো হিজরি বর্ষপঞ্জির তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম ও ওফাতের মাস হিসেবে রবিউল আউয়াল মুসলিম মানসে বিশেষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত।
নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এমন একটি প্রিয় নাম, যা প্রত্যেক মুসলিম তার অন্তরে গভীর ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করে থাকেন। আমলের দিক দিয়ে কারো মধ্যে যত কমতিই থাকুক, হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রতি ভালোবাসা সবার মধ্যে কমবেশি অবশ্যই আছে। আমলের দিক দিয়ে যে যত বেশি অগ্রসর এ ভালোবাসা তার অন্তরে তত গভীর। এ ভালোবাসার কোনো তুলনা নেই, পরিমাপ করে বুঝানোর উপায় নেই।
মুমিনের অন্তরে যে সব কারণে আল্লাহতায়ালার ভালোবাসা গভীর, সে সব কারণেই হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রতি ভালোবাসা গভীর হওয়া স্বাভাবিক। এটা ঈমানের দাবীও বটে।
প্রিয় নবীর (সা.) প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের পথ হলো- তার দেখানো রাস্তা ও রেখে যাওয়া আদর্শের অনুসরণ, অনুকরণ ও আনুগত্য। বস্তুত হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রতি ভালোবাসা কি পরিমাণ থাকা উচিত; সে কথা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেই স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ সত্যিকারের মুমিন হবে না, যে পর্যন্ত আমি তার কাছে তার পিতা, পুত্র ও সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় বলে গণ্য না হব। ’
সত্যিকারের মুমিনের অন্তরে রাসূলের প্রতি ভালোবাসার ঢেউ সর্বদা প্রবাহিত হয়; তবে রবিউল আউয়াল মাসে যেন বান ডাকে। ভালোবাসার এ জোয়ার এ মাসে সর্বত্রই টের পাওয়া যায়। সীরাতুন নবীর এত চর্চা আর কোনো মাসে হয় না। বড় বড় মাহফিলে, মসজিদে, অফিসে, বাড়িতে, সর্বত্র এ মাসে অনুষ্ঠানের ব্যাপক আয়োজন হয় এবং তাতে হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) জীবন থেকে শিক্ষণীয় বিষয় সম্পর্কে ইসলামি চিন্তাবিদ ও উলামায়ে কেরাম মূল্যবান আলোচনা পেশ করেন। আগ্রহীরা সেখান থেকে গ্রহণ করেন দিক নির্দেশনা।
এ সব অনুষ্ঠানে সমবেতভাবে হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রতি যে পরিমাণ দরূদ ও সালাম পেশ করা হয় বছরের আর কোনো মাসে এতটা হয় না। এ মাসটি এ ব্যাপারে এমন এক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যার কোনো তুলনা নেই। বিশেষ করে ১২ রবিউল আউয়াল যেভাবে মিলাদের অনুষ্ঠান করা হয়, এমনভাবে একদিনে আর কোনো সময় করতে দেখা যায় না। এসব বিষয় সত্যিই প্রশংসনীয়।
আমরা জানি, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বের জন্য শান্তির দূত হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি বিশ্ব নবী। সারা জীবন তিনি মানুষকে আত্মসংযমের দীক্ষা দিয়ে গেছেন। তার নীতি, আদর্শ ও চারিত্রিক মাধুর্যের কারণে বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত, কলহ-বিবাদপ্রিয়, সামাজিক ও নৈতিকভাবে অধঃপতিত বর্বর আরব জাতি একটি সুমহান জাতিতে পরিণত হয়। তিনি উৎপীড়িত ও অত্যাচারিত মানুষের প্রকৃত বন্ধু ছিলেন। মহানবীর (সা.) কারণে আরব জাহানে নবজীবন সঞ্চারিত হয়, নতুন সংস্কৃতির উন্মেষ ঘটে, নবীন সভ্যতার গোড়াপত্তন হয় এবং উদ্ভব ঘটে একটি নতুন জীবনব্যবস্থার; যা কালক্রমে বিভিন্ন দেশের জীবনধারাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, হাল সময়েও হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) জীবনাদর্শ অনুসরণ করেই সব ধরনের অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। জাতিতে জাতিতে মিলেমিশে বসবাস করা সম্ভব। গড়ে তোলা সম্ভব এক সুন্দর পৃথিবী। বিশ্বের বর্তমান বাস্তবতায় মহানবীর (সা.) পথ অনুসরণ করলে, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিজীবনে তার আদর্শের প্রয়োগ শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে পারে বলেই আমরা মনে করি।
আরেকটি কথা, বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থায় যারা সাধারণ মানুষের সারল্য ও ধর্মবিশ্বাসকে মূলধন করে তাদের ওপর ইসলামের নামে অন্ধত্ব-গোঁড়ামি চাপিয়ে দিতে উদ্যত, সত্য ধর্মের প্রকৃত অনুসারীদের তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। প্রচার করতে হবে মহানবীর (সা.) সত্যবাদিতা, ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার কথা। শুধু রবিউল আউয়াল মাসে নয়, ইসলামের সত্যস্বরূপ উদ্ভাসিত হোক সব মুসলমানের হৃদয়ে সর্বদা। প্রতিক্ষণে শত কোটি কণ্ঠে ধ্বনিত হোক- ইয়া নবী সালামু আলাইকা। ইয়া রাসূল সালামু আলাইকা।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৫
এমএ/