ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

পরিবেশ রক্ষায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পদক্ষেপ ও নির্দেশনা

মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
পরিবেশ রক্ষায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পদক্ষেপ ও নির্দেশনা

অনেক তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-পর্যালোচনার পর অবশেষে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে এক ঐতিহাসিক চুক্তি অনুমোদিত হলো। শনিবার (১২ নভেম্বর) প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে এ চুক্তি উত্থাপন করেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এর আগে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হন বিশ্বনেতারা।

বলা হচ্ছে, এমন একটি চুক্তির জন্য অপেক্ষায় ছিল গোটা বিশ্ব। তবে মানুষের প্রত্যাশা পুরোটা পূরণ না হলেও সবে যাত্রা শুরু হলো- এটা বলা যায়। পরিবেশ নিয়ে এমন ভাবনা নতুন কিছু নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও কর্ম উদ্যোগ অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। পরিবেশের ব্যাপারে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উদ্বেগ, করণীয়, পদক্ষেপ, পরিচর্যা, শিক্ষা ও নির্দেশনা এটাই প্রমাণ করে।

পরিবেশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ব্যাখ্য দেয়ার ক্ষেত্রে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তিনটি বিষয়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। ক. জগতের সব সৃষ্ট বস্তুই আল্লাহর বলে উপলব্ধি করা; খ. মানুষের সব কাজ সংশ্লিষ্ট সবার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও ন্যায়ভাবে সম্পন্ন করা; গ. সর্ববিধ অপচয়-আধিক্য পরিহার করা এবং প্রাকৃতিক ও অন্য যেকোনো ধরনের সম্পদের সঠিক ও পরিমিত ব্যবহার করা।

অতি সংক্ষেপে বলা চলে, এই হলো পরিবেশ রক্ষায় ইসলামের মূলনীতি। এবার বিস্তারিত বলা যেতে পারে। দেখুন, এই বিশ্বজগত আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। আজো হয়তো সৃষ্টি জগতের অনেক কিছুই অনাবিষ্কৃত। সেসবও সৃষ্টি করেছেন আল্লাহই। সৃষ্টিজগত তার শক্তি, ক্ষমতা ও কুদরতের নিদর্শন। এর কোনো কিছুই মানুষের তৈরি নয়। বরং আল্লাহ দয়া করে মানুষকে সবকিছু দিয়েছেন। তাই সৃষ্টিজগতের সবকিছুর মর্যাদা দিতে হবে এবং সব ক্ষেত্রেই অবলম্বন করতে হবে ন্যায়নীতি।

যদি এই উপলব্ধি আমাদের চিন্তাচেতনায়, দৃষ্টিভঙ্গিতে ও কাজকর্মে প্রোথিত হয়ে যায়, তাহলে আমরা আরো অগ্রসর হয়ে অনুধাবন করতে পারি সৃষ্টির মর্যাদা দিয়ে কীভাবে আমাদের সব কাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা যায়।

কোরআনে কারিমের নির্দেশ অনুসারে, মানুষ এই জগতে সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতিনিধি এবং পৃথিবীর উত্তরাধিকারী। এ বিষয়ে আল্লাহ বলছেন, ‘তিনিই তোমাদেরকে তার প্রতিনিধি, পৃথিবীর উত্তরাধিকারী বানিয়েছেন। ’ -সূরা আনআম: ১৬৫

একজন প্রতিনিধির ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব থাকে। একই সঙ্গে, তার দায়িত্ব আছে সব প্রাণীর প্রতি যাদের ওপর তাকে কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে। এটা এমন এক ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থা যাতে মানুষ ও প্রাণীর মধ্যকার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে বিবেকসম্মত আচরণ করবে এবং সংশ্লিষ্ট যেকোনো সাফল্য ও অর্জন হতে হবে টেকসই।

কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর আসমান, তিনি এটাকে উচ্চে তুলেছেন এবং তিনি সৃষ্টি করেছেন ভারসাম্য। ’ –সূরা আর রাহমান: ৭

হজরত রাসূলে কারিম (সা.) বলেছেন, এই পৃথিবী সুন্দর ও সবুজ এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে এখানে পাঠিয়েছেন প্রতিনিধিরূপে, যাতে তোমরা কেমন কাজ করো, তা তিনি দেখতে পারেন...। –সহিহ মুসলিম

অতএব, মানুষের দায়িত্বের সঙ্গে আছে তার পরীক্ষা। এটা এমন এক কর্তব্য, যা হলো যাবতীয় কাজকর্ম সুষ্ঠু-সঠিক ও প্রশংসনীয় হওয়ার বিষয় নিশ্চিত করা। এই কাঠামোর আওতায় অনুসন্ধান ও অনুধাবন করা যায় পরিবেশের যত্ন নেয়ার জন্য হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দর্শনকে।

জীবনধারণের উপায়-উপকরণগুলো সর্বশক্তিমান আল্লাহর দেয়া নিয়ামত। আমরা যে পানি পান করি আর যে বাতাসে শ্বাস নিই তা এর দৃষ্টান্ত। কারণ পানির স্বাদ তো তিক্তও হতে পারতো। আর বাতাস হতে পারতো বিষাক্ত ধোঁয়া যাতে শ্বাস নেয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতো।

এ সব প্রাকৃতিক সম্পদসমেত সবকিছু অবশ্যই পরিমিতভাবে ব্যবহার করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াগুলো হতে হবে টেকসই। তাহলে আমাদের উত্তরপুরুষের ব্যবহারের স্বার্থে পর্যাপ্ত সম্পদ রেখে যাওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে।

এ ছাড়া পরিবেশ রক্ষায় পশু-পাখি ও প্রাণীকূলের প্রতি সদাচরণ করতে হবে। কোনো পশুপাখি বা প্রাণীকে বিনা প্রয়োজনে হত্যা করা যাবে না। সংক্ষিপ্ত অালোচনার শেষে বৃক্ষের জন্য হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মমতার দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে।

এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ঈমানদারদের মধ্যে এমন কেউ নেই যিনি একটি গাছের চারা রোপণ করলেন, অথবা বপন করলেন একটি বীজ; তারপর কোনো পাখি, মানুষ কিংবা পশু সে গাছের ফল খেলো, আর তা দান হিসেবে গণ্য হলো না। -সহিহ বোখারি

এ ছাড়া হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যুদ্ধের সময়ে বৃক্ষসম্পদ ধ্বংস করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, ‘যদি তুমি একটি বৃক্ষ রোপণের কাজে ব্যস্ত থাকো, আর পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো মারাত্মক কোনো ঘটনা আপতিত হয়, তবুও তোমার সে কাজ চালিয়ে যাবে। ’

মানবতার নবী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পথ এটাই। সে পথে চলতে গেলে মানবজাতি অন্যান্য সৃষ্টিকে সম্মান করতে হবে, যাদের সঙ্গে একত্র হয়ে মিলেমিশে আমরা বসবাস করছি এই গ্রহে।

পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য ওপরের নির্দেশনাগুলোকে মূলনীতি ধরে ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণ করলেই তবে- আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা একটি নিরাপদ বিশ্ব রেখে যেতে পারব। না হলে, কিছু মানুষের বেপরোয়া ও কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজের জন্য চরম মূল্য দিতে হবে মানবজাতিকে।

মনে রাখবেন, মানুষের অতিলোভী মানসিকতা প্রাকৃতিক ব্যবস্থাগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বাতাস, পানি, এমনকি যে মাটিতে আমরা খাদ্য উৎপাদন করি সব জায়গাতেই দূষণ। বনগুলো হারিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। সুন্দর সুন্দর পাখিসহ প্রাণীগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পরিবেশ দূষিত ও বিপন্ন হওয়ার এমন তালিকা অনেক দীর্ঘ। বস্তুত এসবই মানুষের ভ্রান্তি ও স্বার্থপরতার খতিয়ান। এ সব আর বাড়তে দেয়া যাবে না। এখনই সাবধান হতে হবে। নইলে সম্মুখে ভীষণ বিপদ।



বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।