নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে তিন বার হজ ও চার বার উমরা পালন করেছেন। উমরার জন্য কোনো সময় নির্দিষ্ট করা নেই।
তিরমিজি শরিফের অন্য এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সামর্থ্যবান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হজ ও উমরা আদায় করে নাও। কেননা স্বর্ণকার ও কর্মকার যেমন স্বর্ণ ও রৌপ্য ও লৌহকে পুড়িয়ে-পিটিয়ে ময়লা ও ভেজাল থেকে মুক্ত করেন, ঠিক তেমনি হজ ও ওমরা মানুষের দারিদ্রতা ও গুনাহসমুহকে বিদূরিত করে দেয়। ’
দুঃখজনক বিষয় হলো, উমরার মতো একটি ইবাদত করার সুযোগ বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় ১ বছর বন্ধ থাকার পর পুনরায় উমরা ভিসা উন্মুক্ত করল সৌদি কর্তৃপক্ষ। গত ১৪ ডিসেম্বর সৌদি দূতাবাস থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশিদের উমরা ভিসার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার কথা অবহিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, উমরার অনুমতি মিললেও ভিসা ইস্যুতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। সে ক্ষেত্রে আগামী জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশ থেকে উমরা যাত্রী যাওয়া শুরু হতে পারে। সৌদি আরবের উমরা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের উমরা এজেন্সির দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পন্ন করতেই এই সময় লাগতে পারে।
কোটা হিসেবে এবার বাংলাদেশ থেকে ৫০ হাজার মানুষ উমরা পালনের জন্য ভিসা পাবেন।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ হজ ও উমরা করতে সৌদি আরব যান। কিন্তু কিছু সংখ্যক অসৎ ব্যক্তি ও দুর্নীতিবাজ হজ এজেন্সির মাধ্যমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উমরার নামে মানব পাচারের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশিদের জন্য উমরা ভিসা বন্ধ করে দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। কিছু সংখ্যক ধান্দাবাজ ব্যক্তির জন্য হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ গত বছর বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে উমরা পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। বিষয়টি অবশ্য অবশ্যই সুখকর নয়।
২০১৪ সালে উমরা ভিসায় সৌদি আরব গিয়ে ১১ হাজার ৪৮৫ জন ফেরত আসেনি বলে জানা যায়। ফেরত না আসা এসব উমরা যাত্রীর বেশিরভাগই সৌদি আরবে অবৈধভাবে কর্মসংস্থান অথবা অন্য কোনো দেশে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। হজ ও উমরা ভিসায় সৌদি আরব গিয়ে ফেরত না আসাসহ হজ ব্যবস্থাপনায় নানা অনিয়মের অভিযোগে ইতোপূর্বে সৌদি কর্তৃপক্ষ অনেক বাংলাদেশি হজ এজেন্সিকে নিষিদ্ধ ও কালো তালিকাভুক্ত করেছিল। বাংলাদেশ ধর্ম মন্ত্রণালয়ও মানব পাচারের অভিযোগে ৯৫টি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এদের মধ্যে ৬৯টি হজ এজেন্সির লাইসেন্স ও জামানত বাতিল ছাড়াও জরিমানা করা হয়েছে। বাকি ২৬টি এজেন্সির বিরুদ্ধে অনিয়মের শাস্তি হিসেবে শুধুমাত্র জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা যায়।
আমরা মনে করি, যে সব এজেন্সির বিরুদ্ধে মানব পাচারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হবে তাদেরকে অবশ্য অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এদের কারণে একদিকে যেমন দেশের হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান উমরা পালনের সুযোগ ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তেমনি বেশিরভাগ হজ এজেন্সি বিনাদোষে ব্যবসায় সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অনেক দেরিতে হলেও উমরা ভিসার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় সৌদি কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানাই। সেই সঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে শোকরিয়া জ্ঞাপন করি- আলহামদুলিল্লাহ।
হজ বা উমরা পালন করতে গিয়ে বিপুল সংখ্যক উমরা যাত্রীর ফেরত না আসার ঘটনা অনভিপ্রেত। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের বৃহত্তম বৈদেশিক শ্রমবাজার হিসেবে সৌদি আরবে কর্মসংস্থানের সুযোগ বন্ধ থাকায় দরিদ্র মানুষ বিকল্প পথ হিসেবে উমরা ভিসাকে ব্যবহার করছে। শুধু হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধেই নয়, ধর্মমন্ত্রণালয়ের অধীনে সম্পাদিত হজ ব্যবস্থাপনায়ও বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের অধিকার রক্ষা এবং হজের মত অত্যাবশ্যকীয় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার ঐতিহ্য ও পবিত্রতা সমুন্নত রাখতে সরকারি এবং বেসরকারি হজ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
অতীত রেকর্ড এবং যোগ্যতার মাপকাঠিতে হজ এজেন্সিগুলোর সমানুপাতিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বা অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে কোনো প্রকার বৈষম্য সৃষ্টি করা হলে তা সামগ্রিক হজ ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। হজ বা উমরা ভিসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা যেন আর কোনো নিষেধাজ্ঞা বা শর্তের জালে আটকে না পড়েন সে দিকে আগে থেকেই বিশেষ নজরদারি রাখতে হবে। উমরা ভিসার অপব্যবহার রোধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। অতীতে উমরা ভিসা বন্ধের ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাব-মর্যাদা যে ক্ষুন্ন ও ব্যাহত হয়েছে তার পুনরাবৃত্তি ঘটুক এটা আর চাই না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
এমএ/