ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

বাংলানিউজকে মাওলানা শফিউল আলম

নবীর ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়ুন, মনে শান্তি পাবেন

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
নবীর ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়ুন, মনে শান্তি পাবেন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চলছে রবিউল আউয়াল মাস। গোটা বিশ্বের মুসলমানদের আবেগ-অনুরাগ, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মিশেলে প্রাণ আকুল করা ঐতিহাসিক রবিউল আউয়াল মাস উপলক্ষে আমরা দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের দিকনির্দেশনামূলক মতামত জানতে চেয়েছি।

এরই ধারাবাহিকতায় আমরা হাজির হই চট্টগ্রামের প্রাচীন দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরে। মাদরাসার শিক্ষা পরিচালক ও বিশিষ্ট মুহাদ্দিস হজরত মাওলানা শফিউল আলম এর সঙ্গে কথা হয়। মাওলানা শফিউল আলম এলাকাবাসীর কাছে বাবাজান হুজুর নামে সমধিক পরিচিত। তার সঙ্গে কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক এর আলাপচারিতার চুম্বক অংশ পত্রস্থ হলো-

বাংলানিউজ: ১২ রবিউল আউয়ালের তাৎপর্য কী?
মাওলানা শফিউল: হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিনকে আমার মুসলমানরা উৎসবের দিন মনে করি। অথচ তার জীবনের শিক্ষা ছিল সার্বজনীন। সব ধর্মের, সব বর্ণের মানুষের জন্যই তিনি ছিলেন শিক্ষার আধার। যে আবু লাহাবকে কোরআনে কারিমে অভিশাপ দেয়া হয়েছিল সেই আবু লাহাবের কাছে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের খবর পৌঁছানো হলো- তখন তিনি এত খুশি হয়েছিলেন, যে দাসী এ খবর দিতে গিয়েছিলেন তাকে সঙ্গে সঙ্গেই মুক্ত করে দিয়েছিলেন। এ থেকে সহজেই অনুমেয় ১২ রবিউল আউয়ালের কী তাৎপর্য।

এ ব্যাপারে আমরা মেশকাত শরিফের দু’টি হাদিসের উদ্ধৃতি নিতে পারি। হজরত উবাই ইবনে কাব রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন আমি সব নবীর ইমাম ও খতিব হবো এবং আমি সবার সুপারিশকারী হবো। এ কথা আমি অহঙ্কার ছাড়াই বলছি।

অন্যত্র হজরত জাবের রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ করেন, আল্লাহতায়ালা আমাকে সচ্চরিত্র এবং ভালো কর্মগুলোর পূর্ণতা বিধানের জন্য পাঠিয়েছেন। অর্থাৎ মানুষ যেন সচ্চরিত্র ও ভালো কাজে পূর্ণতা অর্জন করতে পারে তার জন্যই আমার আগমন।
 
কিন্তু অতি পরিতাপের বিষয়, রবিউল আউয়াল মাস আসলে আমরা অনেক আনুষ্ঠানের আয়োজন করি। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী আর বিবৃতি প্রচার করি; কিন্তু ফরজ নামাজ নিয়মিত আদায় করি না, সুদ পরিত্যাগ করতে পারি না, ঘুষ ছাড়তে পারি না, মিথ্যা বর্জন করতে পারি না, লোভ-হিংসা মোহমুক্ত হতে পারি না। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বাংলানিউজ: এমন কেন হয়? তবে কি নবীপ্রেমের উপলব্ধিতে আমাদের কোনো ঘাটতি আছে?
মাওলানা শফিউল: আমাদের চিন্তা করতে হবে, আমরা যখন উৎসব করি তখন কী আমরা সে প্রকৃত ভালোবাসা ও আনুগত্যের কথা চিন্তা করি? না আমরা মিষ্টি খাওয়া বা একটা আনুষ্ঠানিক প্রথা পালন করি। হ্যাঁ, মিষ্টি খাওয়াও সুন্নত বটে!ৎ

তবে কথা হলো, আমরা বর্তমানে শুধু মিষ্টি জাতীয় সুন্নতগুলো পালনে অতিমাত্রায় যত্নশীল হয়ে পড়েছি। যেমন দুপুরে খাওয়ার পরে শোয়া, হাদিয়া গ্রহণ করা, দাওয়াত কবুল করা ইত্যাদি। কিন্তু কতগুলো সুন্নতের কথা আমরা একেবারেই ভুলতে বসেছি। যেমন- হাদিয়া দেয়া, দুস্থ ও আর্তের সেবা করা, গরিব-দুঃস্থদের দেখাশোনা করা, মানব কল্যাণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা।

উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়া আরও বহু বিষয় রয়েছে যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের করেছেন ও করতে বলেছেন; সেগুলো আমাদের জন্য সুন্নত এমকি অনেকগুলো ফরজও বটে। কিন্তু আমরা সে সম্পর্কে উদাসীন।

বাংলানিউজ: উম্মতের জন্য নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কী ধরনের চিন্তাধারা ছিল? তার জন্য আমরা কী করতে পারি?
মাওলানা শফিউল: একজন মোমিনের জন্য ইহকাল ও পরকালে মহানবীর চেয়ে বড় দরদি আর কেউ নেই। তার দয়া, অনুগ্রহ ও অনুদান থেকে কোনো মানব সন্তানই মুক্ত নয়। একজন মোমিন তো নয়ই। উম্মতের চিন্তায় তিনি সর্বদাই ব্যাকুল থাকেন; বড় দরদ নিয়ে ভাবতেন উম্মতের কথা। এ চিন্তা ও ব্যাকুলতা তুচ্ছ দুনিয়ার সামান্য ধনসম্পদের জন্য ছিল না। ছিল না পার্থিব কোনো বস্তুর অপ্রতুলতার কারণেও। এ চিন্তা ও ব্যাকুলতা ছিল হৃদয়ের গহিন থেকে উত্থিত এক পবিত্র চিন্তা। উম্মতের চিন্তা। উম্মতকে কীভাবে আল্লাহর প্রিয়ভাজন করা যায়, কীভাবে জাহান্নামের ভয়ঙ্কর আগুন থেকে রক্ষা করে জান্নাতের অনাবিল সুখ-শান্তিতে দাখিল করা যায় ফিকির ছিল শুধু এই একটাই। এত বড় দরদি যে নবী, উম্মতের ওপর যে নবীর এত অনুগ্রহ, সে নবীর নাম শুনে তার ওপর দরুদ পাঠ করে এই দয়া ও অনুগ্রহের কিঞ্চিৎ ঋণ পরিশোধ করা উম্মতের অবশ্য কতর্ব্য বলে মনে করি।

বাংলানিউজ: দরুদ পাঠের ফজিলত সম্পর্কে কিছু বলুন?
মাওলানা শফিউল: দরুদ পাঠকারীর জন্য রয়েছে ফজিলতের সুবিশাল ভান্ডার। কোরআন মজিদে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ নবীর প্রতি সালাত পাঠান এবং তার ফেরেশতারাও নবীর জন্য সালাত পাঠান। হে মোমিনরা, তোমরাও নবীর জন্য সালাত পাঠাও এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও। ’ -সূরা আহজাব: ৫৬

এখানে বর্ণিত সালাতের অর্থ হলো- রহমত। অর্থা‍ৎ আল্লাহতায়ালা নবীজির প্রতি অহরহ রহমত বর্ষণ করেন। ফেরেশতারা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর রহমত বর্ষণের জন্য দোয়া করেন। এই দোয়ার নাম দরুদ। হে মোমিনরা, তোমরাও নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ পড়।
 
নাসাঈ শরিফের এক হাদিসে এসেছে হজরত আবু তালহা রাজিয়াল্লাহু আনহু বলেন- একদিন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন। তখন তার চেহারায় আনন্দের আভা দেখা যাচ্ছিল। এসেই বললেন, হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আমার কাছে এসেছিলেন। বলে গেলেন- হে মুহাম্মদ! আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আপনি কি এতে সন্তুষ্ট হবেন না যে, আপনার উম্মতের কেউ আপনার ওপর একবার দরুদ পাঠ করলে আমি তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবো। কেউ একবার সালাম পেশ করলে তার প্রতি সালাম পেশ করবো ১০ বার। আল্লাহ আমাদেরকে বেশি বেশি দরুদ পাঠের তওফিক দিন। আমিন।



বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
এমএ/

** সিরাতে ইবনে হিশাম: অনবদ্য এক সিরাত গ্রন্থ
** সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুজেযা নিয়ে কিছু কথা
** ইতিহাসের প্রথম সিরাতগ্রন্থ
** মুসলমানদের স্বমহিমায় জেগে ওঠার দিন
** নবীর অনুসরণই তার প্রতি ভালোবাসার শ্রেষ্ঠতম প্রতিফলন
** শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ মুজেযা
** পূর্ণাঙ্গ সিরাতের চর্চা না থাকায় তরুণসমাজ সহজে বিভ্রান্ত হচ্ছে

** সিরাত কাকে বলে?
**  নবী মুহাম্মদ (সা.) শৈশব ও যৌবনে কেমন ছিলেন
**  ফেসবুকে মহানবীর মর্যাদা ও পরিচয় বিষয়ক ক্যাম্পেইন
**  নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ
** আল্লাহকে পেতে হলে সুন্নত পালন ও রাসূলকে ভালোবাসতে হবে
** পরিবেশ রক্ষায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পদক্ষেপ ও নির্দেশনা
** স্বাগতম রবিউল আউয়াল মাস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।