মহান আল্লাহতায়ালার অমোঘ বিধানে ঋতুর পরিবর্তন হয়। এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়- ধর্ম-বর্ণ গোত্র ভাষা নির্বিশেষে সমগ্র জাতির ওপর।
নতুন বছর আনন্দের হলেও পহেলা বৈশাখের আনন্দ সবার জীবনে আসে না। কিন্তু কেন আসে না- সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা মেলা ভার। তার পরও মানুষ নতুন নতুন আশা আকাঙ্ক্ষা আর চাওয়া পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে পথ চলা শুরু করবে- নতুন উদ্যমে। এটাই স্বাভাবিক।
দুনিয়ার রীতি অনুযায়ী পরিবারের ভাঙা গড়ার খেলা, আনন্দ হাসি আর সুখ-দুঃখের উপাখ্যান থাকবে । এরই মাঝে প্রত্যেকেই নিজের মতো করে নতুন বছরকে বরণ করে নেবে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এ জন্যই বোধহয় বলেছিলেন, ‘ঐ নতুনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখীর ঝড়, তোরা সব জয়ধ্বনি কর। ’ বৈশাখ এই নতুনের কেতন ওড়ার বারতা বয়ে নিয়ে আসে। এই জন্যই বৈশাখের এতো কদর। তার প্রতি সবার এতো আগ্রহ।
পৃথিবীর যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ অনেকটা উৎসব প্রিয়। কোনো ধর্মে আনন্দ-উৎসব পালনে বাঁধা নেই। তবে উৎসবগুলো শালীন হওয়া কাম্য। সব উৎসবেই ধর্মীয় সীমারেখা পরিপালন ও অনুসরণ জরুরি। উৎসবের নামে কোনো ধর্মের অবমাননা, নারী নিগ্রহ ও বিশৃঙ্খলা হওয়া উচিত নয়। এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আর মঙ্গল শোভাযাত্রায় নারীর ইজ্জত ভূলুণ্ঠিত হওয়ার মতো ঘটনা যেন না ঘটে- নতুন বছরের শুরুতে এই প্রত্যাশা রইল।
কারণ, এখন পহেলা বৈশাখ নিয়ে লিখতে গেলে বিপন্ন নারীর বাঁচাও বাঁচাও আর্তচিৎকারের অধ্যায়টুকু বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পহেলা বৈশাখের দিন নারীর প্রতি সহিংসতা ও চরম অবমাননার ঘটনাটি পাঠকেরা নিশ্চয় এখনও ভুলে যায়নি। হাজারও মানুষের সামনে নারীকে বিবস্ত্র ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। কেউ কেউ মোবাইল ফোনে ধারণও করেছে। প্রিন্ট ইলেকট্রনিক বা সামাজিক মিডিয়ায় সবিস্তারে ও সচিত্র বিবরণ প্রকাশিত হলেও অমানুষের শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি। চরম নৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের এহেন অবক্ষয় পৃথিবীর অন্য কোনো সভ্য দেশে দেখা না গেলেও বাংলাদেশে ঠিকই দেখা গেছে। এমন দৃশ্য বা ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা চাই না।
এ প্রত্যাশা খুব কঠিন কিছু নয়, অনেক বড় চাওয়াও নয়। এর জন্য দরকার শুধু সৎ ইচ্ছা। আমরা জানি, নিয়ত বা ইচ্ছাশক্তি যে কোনো লক্ষ্য অর্জনের প্রাথমিক কারণ। লক্ষ্য অর্জনে সফল হতে হলে প্রয়োজন দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের আলোকে ইচ্ছাশক্তিকে দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যয় করা। মানুষের যে কাজের সঙ্গে দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি জড়িত হয়; সে কাজে সে নিজের সমগ্র হৃদয়-মন ঢেলে দেয়, ব্যবহার করে বিভিন্ন রকম বৈষয়িক উপায়-উপাদান। তখন সে অবশ্য অবশ্যই সফল হয়। তার ইচ্ছাশক্তিই তাকে নিয়ে যায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে।
ইসলামি শরিয়তে নিয়ত ও ইচ্ছাশক্তির গুরুত্ব অনেক। ইসলামমতে নিয়তের বিশুদ্ধতার ওপর সব কাজের ফলাফল নির্ভর করে। একজন ব্যক্তি মন থেকে বিশুদ্ধভাবে যা চাইবে আল্লাহতায়ালা তাকে তাই দেবেন। কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে- ‘আর এ যে মানুষ তাই পায়, যা সে চেষ্টা করে। ’ -সূরা নাজম: ৩৯
নীতিগতভাবে যা সঠিক তাই নৈতিক। মানুষের চারিত্রিক উৎকর্ষতাই নৈতিকতা অর্থাৎ মানুষের চরিত্রে শ্রেষ্ঠ গুণাবলীর সমাহারের নাম নৈতিকতা; যেমন ইচ্ছাশক্তি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ শক্তি, প্রবল বাসনা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, নির্ভীক সাহস, সহিষ্ণুতা ও দৃঢ়তা, তিতিক্ষা, বীরত্ব, সহনশীলতা ও পরিশ্রমপ্রিয়তা, উদ্দেশ্যের প্রতি আকর্ষণ এবং সেজন্য সবকিছুই উৎসর্গ করার প্রবণতা, সতর্কতা, দূরদৃষ্টি ও অন্তরদৃষ্টি, বোধশক্তি ও বিচার ক্ষমতা, পরিস্থিতি যাচাই করা এবং সে অনুযায়ী নিজেকে ঢেলে গঠন করা ও অনুকূল কর্মনীতি গ্রহণ করার যোগ্যতা, স্বপ্নসাধ ও উত্তেজনার সংযমশক্তি, মানুষকে আকৃষ্ট করা তাদের হৃদয়মনে প্রভাব বিস্তার ও তাদের কাজে নিযুক্ত করার দুর্বার বিচক্ষণতা, আত্মসম্মান, জ্ঞান, বদান্যতা, দয়া-অনুগ্রহ, সহানুভূতি, সুবিচার, নিরপেক্ষতা, সত্যবাদিতা, সত্যপ্রিয়তা, বিশ্বাস পরায়ণতা, বুদ্ধিমত্তা, সভ্যতা-ভব্যতা, পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি। এই নৈতিকগুণগুলো মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি ও সফলতার চাবিকাঠি।
এই গুণগুলো যদি উৎকর্ষতায় পূর্ণ থাকে তাহলে তাকে সচ্চরিত্র বলা হয়। এর বিপরীতে তাকে দুশ্চরিত্র বলা হয়। মানুষ হিসেবে সবার উচিৎ ভালো গুণগুলো আত্মস্থ করা। মন্দগুলো বর্জন করা। মন্দ পরিহারই পারে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে। সমাজকে সুশৃঙ্খল রাখতে।
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৬
এমএ/