কালপরিক্রমায় আমাদের সামনে উপস্থিত নতুন আরেকটি বছর। স্বাগতম ১৪২৩ বঙ্গাব্দ।
এবার এমন এক সময়ে বাংলা নববর্ষের আগমন, যখন মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনার শীর্ষে। বিষয় যাই হোক, তবুও আশায় বুক বাঁধি, নতুন বছরের আলোয় দূর হবে সব কালো। বাংলা নববর্ষ বাঙালি মুসলমানদের মনে-প্রাণে নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। কারণ বাংলা সন হিজরি সালেরই ঔরসজাত। ইতিহাস বলছে, বাংলাদেশ ভূখণ্ডে মুসলিম শাসন কায়েম হয়েছে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বঙ্গ বিজয়কাল থেকে। পরে খাজনা আদায়সহ রাজকার্যের সুবিধার জন্য মোগল সম্রাট আকবর হিজরির পাশাপাশি বাংলা সন প্রবর্তন করেন এবং অগ্রহায়ণের পরিবর্তে বৈশাখ থেকে বর্ষ গণনা শুরু করেন। বাংলা মাস পায় রাজকীয় মর্যাদা। এর আগে এই ভূখণ্ডে মহাধুমধামের সঙ্গে ‘নওরোজ’ উৎসব পালিত হতো।
বাংলা সনের গণনা শুরু হয় ১৫৫৬ ঈসায়ি সালের ১১ এপ্রিল থেকে। তবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে সরকারিভাবে বাংলা সন-তারিখ ব্যবহার হয় না বললেই চলে। যদিও পহেলা বৈশাখ উদযাপন জাতীয় উৎসবের মর্যাদা পেয়েছে।
নতুন বছরে মানুষের মনে জাগে নতুন আশাবাদ। অতীতের ভুল-ভ্রান্তি, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে মানুষ নবপ্রেরণায় নতুন করে জীবনকে বিকশিত করতে চায়। এমন ইতিবাচক চেতনার কারণে নানা দুঃখ-বেদনা ও যন্ত্রণার মধ্যে এখনও টিকে আছে আমাদের সমাজ। তবে সমাজকে, জীবনকে প্রগতির কাঙ্ক্ষিত পথে এগিয়ে নিতে হলে অতীতের বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ ও সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
আসলে একটি বছরের বিদায় ও আগমনে প্রত্যেক বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কর্তব্য হলো, অতীত জীবন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা তথা আত্মসমালোচনা ও অনুশোচনার মাধ্যমে জীবনের হিসাব-নিকাশ পর্যালোচনা করা। তাই বছর শেষে আমাদের হিসাব করে দেখতে হবে, কেমন ছিল গত বছরে আমার আমলনামা। যদি যথেষ্ট পরিমাণ নেক আমল করে থাকি, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ; আল্লাহ তা কবুল করে নিন। ভবিষ্যতে তা অক্ষুন্ন রাখুন এবং আরও বেশি নেক আমল করার তওফিক দিন। আর যদি মনে হয়, অবস্থা তার উল্টো, গুনাহর পরিমাণ বেশি; তাহলে বছর শেষে আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে তওবা-ইস্তেগফারের পাশাপাশি পুরনো পথে ফিরে না যাওয়ার পরিকল্পনা করা উচিত। মানবজীবনে ভালো-মন্দের হিসাব গ্রহণ ও ভবিষ্যৎ জীবনের নতুন সংকল্প ভীষণ জরুরি। কারণ প্রত্যেকটি রাত-দিন, সপ্তাহ, মাস, বছরের আগমন ও প্রস্থান এ সম্পর্কে আমাদের সচেতন করে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা তাগিদ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, 'তিনি সেই সত্তা যিনি দিন ও রাতকে পরস্পরের অনুগামী করে সৃষ্টি করেছেন। (কিন্তু এসব বিষয় উপকারে আসে কেবল) সেই ব্যক্তির জন্য যে উপদেশ গ্রহণ করতে ইচ্ছা রাখে কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চায়। ’ -সূরা ফুরকান: ৬২
মুমিন মূলত দুটি আশঙ্কার মাঝে বসবাস করে। একটি আশঙ্কা হচ্ছে, গত জীবন সে জানে না, সেখানে আল্লাহ তার জন্য কী লিখে রেখেছেন। তাই প্রতিটি মানুষ নিজের জীবন থেকেই নিজের জন্য পাথেয় জোগাড় করুক। দুনিয়া থেকেই আখেরাতের সম্বল হাসিল করুক। বুড়ো হওয়ার আগে যৌবন ও সুস্বাস্থ্যকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুক। সর্বোপরি মৃত্যু আসার আগে জীবনের সদ্ব্যবহার করুক।
মানবজীবনের সময়গুলো অত্যন্ত মূল্যবান। প্রতিটি মুহূর্ত আখেরাতের বিশাল জিন্দেগির জন্য পাথেয় তৈরির এক অপূর্ব সুযোগ। হাদিসে আছে, ‘সে-ই বুদ্ধিমান যে নিজের হিসাব কষে ও পরকালের জন্য তৈরি হয়। ’ আর একজন সচেতন মুসলমানের গুণাবলির মাঝে রয়েছে, তার ধর্মীয় মূল্যবোধ, আখেরাতের প্রতি অবিচল বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালোবাসা, ঐক্য, জাতীয়তাবোধ, আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ ও দেশকে এগিয়ে নেওয়ায় প্রেরণা। আদর্শ নাগরিকের এ গুণগুলোকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তাই নতুন বছরের সূচনালগ্নে সবার কাছে প্রত্যাশা- আসুন, পুরনো বছরের হিংসা, বিদ্বেষ, শত্রুতা, হানাহানি ভুলে গিয়ে নতুন বছরে নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তুলি। পুরনো বছরের পাপগুলো হিসাব করে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। আর নতুন বছরে পুরনো পাপগুলো দ্বিতীয়বার না করার দৃঢ় সংকল্প করি।
মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৬
এমএ/