ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

ইসলামের অালোয় বদলে যাওয়া দশ ক্রিকেটার

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৬
ইসলামের অালোয় বদলে যাওয়া দশ ক্রিকেটার ছবি: শোয়েব মিথুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

বিভিন্ন পেশার মানুষ নিজের অবস্থানে থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছেন ইসলামের শান্তিবাদী ও প্রকৃত শিক্ষা পৃথিবীর মানুষের কাছে তুলে ধরতে। এমন মানুষদের নির্দিষ্ট কোনো পেশাগত পরিচয়ে আবদ্ধ করা ঠিক নয়।

সেই সঙ্গে এটাও বলে রাখা দরকার- খেলা খেলাই। এর সঙ্গে রাজনীতি বা ধর্মকে না মেশানোই ভালো। তাই তো আমাদের দেশের ক্রিকেট সমর্থকরা কোনো খেলোয়াড়ের ধর্মীয় পরিচয়কে বড় করে দেখেন না। তারা দেখেন মাঠের পারফরমেন্স।

তার পরও কিন্তু তারকা ক্রিকেটারদের জুমার নামাজ কিংবা ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ খবরের রসদ জোগায়। খেলার মাঠে নামাজ পড়াও নতুন কোনো দৃশ্য নয়। অনেক মুসলিম খেলোয়াড় ব্যক্তিগত কোনো অর্জনের পর ক্রিজে সেজদাবনত হয়েছেন- এমন ছবিও প্রকাশ পেয়েছে গণমাধ্যমে। ব্যক্তিগত জীবনে দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের নিজ নিজ ধর্মাচারের কথাও সর্বজনবিদিত।

অাবার কিছু কিছু ক্রিকেটার ধর্ম বদল করে এসেছেন আলোচনার প্রাদপ্রদীপে। এক্ষেত্রে পাকিস্তানের তারকা খেলোয়াড় ইউসুফ ইউহানা (মুহাম্মদ ইউসুফ) ও দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়েন পার্নেল (ওয়ালিদ পার্নেল)-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

টেস্ট খেলুড়ে দেশসমূহের মাঝে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাদে প্রায় প্রত্যেক দেশেই মুসলমান খেলোয়াড় রয়েছেন। তাদের ব্যক্তিগত পারফরমেন্সে ধর্ম কখনও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং তাদের স্বতন্ত্র জীবনাচার মিডিয়ায় বরাবরই আলোচিত বিষয়।

ক্রিকেট খেলা ছেড়ে অবসরের পর অনেককেই কঠোরভাবে ধর্ম পালন করতে দেখা যায়। মূলত তাবলিগের প্রভাবে ধর্মের সংশ্রবে এসে তাদের জীবন আমূল বদলে গেছে। তারা শুধু যে কঠোরভাবে ইসলাম মেনে চলেন তাই নয়- তারা ইসলাম প্রচারক হিসেবেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তেমন কিছু ক্রিকেটারদের কথা জানাবো, যাদেরকে মানুষ এক নামে চেনে।

১. সাইদ আনোয়ার : পাকিস্তানী সফল ব্যাটসম্যান ও বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের আইডল সাইদ আনোয়ার। তার মেয়ের মৃত্যুতে শোকাহত এই পাকিস্তানী ক্রিকেটার ধর্ম পালনের মধ্য শান্তি খুঁজে পান। বর্তমানে তিনি তাবলিগে জামাতের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার-প্রসারে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতি বছর নিয়ম করে টঙ্গীর বিশ্ব ইজমেতায় আসেন।

 

২. মুহাম্মদ ইউসুফ : পাকিস্তানী ক্রিকেটের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান মুহাম্মদ ইউসুফ। খিস্ট ধর্মাবলম্বী ইউসুফ ইউহানা ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ঠ সময় পার করে অবসর নিয়েছেন। তিনি তাবলিগ জামাতে সক্রিয় থেকে ধর্মপ্রচারে কাজ করে যাচ্ছেন।


 

৩. হাশিম আমলা : হালের ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা। তাকে বলা হয় দক্ষিণ আফ্রিকা দলের রানমেশিন। তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। কখনো রমজান মাসে খেলতে হলে রোজা রেখেই মাঠে নামেন তিনি।   শুধুমাত্র ধর্মীয় বিধি-নিষেধের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের প্রধান স্পন্সর ‘ক্যাসেল’ (মাদক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান) কোম্পানির লোগো গায়ে টি-শার্ট পরেন না। শোনা যায়, এই লোগো ব্যবহার না করার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ডকে নাকি কিছু অর্থও দণ্ড দিতে হয়।

 

৪. ইনজামাম-উল-হক : পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যানের নাম ইনজামাম-উল-হক। মুলতানের সুলতান খ্যাত পাকিস্তান ক্রিকেটের এই প্রভাবশালী ব্যক্তিটি এখন তাবলিগ জামাতের সক্রিয় সদস্য হিসেবে ইসলাম প্রচারে রত। এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। সম্প্রতি তিনি পাকিস্তান দলের প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পেয়েছেন। এশিয়া কাপের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুশীলনের সময় ওমান-আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের নিয়ে ইনজামামের নেতৃত্বে নামাজ আদায়ের চিত্র অনেকের মনেই দাগ কেটেছিল।

 

৫. মইন আলী : বর্তমান ইংলিশ দলের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার মইন আলীর পারফরমেন্স চোখে পড়ার মতো। সম্প্রতি ইসলাম ধর্মের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি আমার দাঁড়িকে ইসলামের পরিচয় হিসেবে দেখি, আর ধর্ম আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কোরআন আমার জীবনবিধান।

 

৬. সোহরাওয়ার্দী শুভ : বাংলাদেশ ক্রিকেটের অলরাউন্ডার সোহরাওয়ার্দী শুভ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করার পর দলের হয়ে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছেন। সম্প্রতি দলের জাতীয় দলে সুযোগ না পেলেও বিভিন্ন দলের হয়ে খেলে যাচ্ছেন। তিনি নিয়মিত কোরআনে কারিম তেলাওয়াত করেন ও নামাজ আদায় পড়েন। তাবলিগের কাজেও তিনি সক্রিয়।

 

৭. মুশতাক আহমেদ : পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম সেরা বোলার মুশতাক আহমেদ। ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর পেশা হিসেবে কোচিং ও ইসলামিক ধ্যান-ধারণায় মনোনিবেশ করেছেন। তার ধারণা ইসলাম এবং ক্রিকেট তার জীবনকে বদলে দিয়েছে। সুতরাং ইসলামের অনুসরণ ভীষণ জরুরি।

 

৮. সাকলাইন মুশতাক : আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর পাকিস্তানী এই গ্রেট তাবলিগের কাজে মনোনিবেশ করেছেন। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অফ স্পিনারের দাওয়াতে পাকিস্তানের উঠতি অনেক ক্রিকেটারের জীবন বদলে গেছে। তাদের মাঝে নৈতিকতাবোধ সৃষ্টিতে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখছেন।

 

৯. ইমরান তাহির : পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করা দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার ইমরান তাহির। দলের অন্যতম সেরা এ বোলারকে ধর্মাচারে উদ্ধুব্ধ করেছেন হাশিম আমলা। আমলার অনুপ্রেরণায় ইমরান তাহির নিজেকে ইসলাম সোপর্দ করেছেন ইসলামের ছায়াতলে। তার মতে, নিজেকে কঠোরভাবে ইসলাম ধর্মের দিকে মনোনিবেশ করার কারণে তার ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ হয়েছে।


 

১০. আদিল রাশিদ : পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত আদিল রাশিদ ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের হয়ে খেলছেন বেশ কিছুদিন ধরে। দলে স্থান লাভ ও অভিষেক হওয়ার পর তেমন কঠোর ইসলাম পালনকারী না হলেও সম্প্রতি ইসলামিক নিয়ম-কানুন মেনে নিজের জীবন পরিবর্তন করে নিয়েছেন। কোরআন তার জীবন পাল্টে দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

 


এছাড়া মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, তাসকিন আহমেদ, আরাফাত সানি, মোহাম্মদ আশরাফুল, রুবেল হোসেন ও ইমরুল কায়েসকে মনোযোগ দিয়ে গুলশান আজাদ মসজিদ কিংবা ধানমন্ডির বায়তুত তাকওয়া জামে মসজিদে বসে বয়ান শুনতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।