পবিত্র কোরআনে কারিম ও হাদিস শরিফে শ্রমিকদের প্রসঙ্গে অনেক বর্ণনা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে-
১. মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।
২. তোমাদের অধীন ব্যক্তিরা তোমাদের ভাই, আল্লাহ যে ভাইকে তোমার অধীন করে দিয়েছেন তাকে তাই খেতে দাও যা তুমি নিজে খাও, তাকে তাই পরিধান করতে দাও যা তুমি নিজে পরিধান কর। -সহিহ বোখারি
৩. অধীনস্ত চাকর-বাকরদের প্রতি খারাপ আচরণকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, আপনি কি বলেননি অন্যান্য জাতির তুলনায় এ জাতির মধ্যে এতিম ও গোলামের সংখ্যা বেশি হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতএব তোমরা তাদেরকে সন্তানের মতো আদর-যত্ন করবে এবং তোমরা যা খাবে তাদেরকে তা খাওয়াবে। হজরত আবু বকর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, অধীনস্তদের সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী বেহেশতে প্রবেশ না। -ইবনে মাজা
৪. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেউ তার অধীনস্তকে অন্যায়ভাবে এক দোররা মারলেও কিয়ামতের বিচারের দিনে তার থেকে এ বদলা নেয়া হবে। -তাবরানি
৫. হজরত ওমর (রা.) বলেন, যৌবনকালে যে ব্যক্তি শ্রম দিয়ে রাষ্ট্র ও জনগণের খেদমত করেছেন বৃদ্ধকালে সরকার তার হাতে ভিক্ষার ঝুলি দিতে পারে না। -ইবনে মাজা
৬. দাস-দাসীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার সৌভাগ্য, আর তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার দুর্ভাগ্য।
৭. মজুরকে তার কাজ হতে অংশ দান কর, কারণ আল্লাহর মজুরকে বঞ্চিত করা যায় না। -মুসনাদে আহমাদ
৮. তোমাদের খাদেম যদি তোমার খাদ্য প্রস্তুত করে এবং তা নিয়ে যদি তোমার কাছে আসে যা রান্না করার সময় আগুনের তাপ ও ধোঁয়া তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে তখন তাকে খাওয়াবে। খানা যদি অল্প হয় তবে তার হাতে এক মুঠো, দু’মুঠো অবশ্যই তুলে দিবে। -মুসলিম
৯. উমর ইবনে হুরাইস (রা.) হতে বর্ণিত নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের কর্মচারীদের থেকে যতটা হাল্কা কাজ নিবে। তোমাদের আমলনামায় ততটা পুরস্কার ও পুণ্য লেখা হবে।
১০. হজরত যুবাইর (রা.) বলেছেন, নবী করিম (সা.) চাকরের সঙ্গে একত্রে বসে খেতে বলেছেন।
১১. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল হে আল্লাহর রাসূল (সা.) চাকর-বাকরকে কতবার ক্ষমা করব? তিনি চুপ রইলেন। সে পুনরায় তাকে প্রশ্ন করলে এবারও তিনি চুপ রইলেন। সে পুনরায় তাকে প্রশ্ন করলে এবারও তিনি চুপ রইলেন। চতুর্থবার বলার পর তিনি বললেন দৈনিক সত্তর বার ক্ষমা করবে। -আবু দাউদ
১২. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন আমার দাস, আমার দাসী না বলে। কেননা আমরা সকলে আল্লাহর দাস-দাসী।
১৩. হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ তার পিঠে বহন করে কাঠের বোঝা এনে বিক্রি করা, কারো নিকট ভিক্ষা চাওয়ার চেয়ে উত্তম, চাই সে দিক বা না দিক। -বোখারি ও মুসলিম
১৪. যে ব্যক্তি মানুষের কাছে চায়, অথচ তার নিকট বেঁচে থাকার সম্বল আছে, নিশ্চয় সে অধিক জাহান্নামের আগুন সংগ্রহ করছে। -আবু দাউদ
১৫. দেহের যে অংশ হারাম খাদ্য দ্বারা গঠিত তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। হারাম খাদ্যের গঠিত শরীরের জন্য জাহান্নামের আগুনই উপযুক্ত। -আহমাদ
নবী-রাসূলরাও শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। তারা বিভিন্ন পেশায় শ্রম দান করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাদের কাছে শ্রমের মর্যাদা ছিল অনেক উচ্চে। নিজ হাতে কাজ করে শ্রমিক দিয়ে খাবার খাওয়ার মতো উত্তম খানা আর হতে পারে না।
১. হজরত আদম (আ.) কৃষক ছিলেন।
২. হজরত নূহ (আ.) সুতার (কাঠ মিস্ত্রি) ছিলেন।
৩. হজরত দাউদ (আ.) কর্মকার (কামার) ছিলেন।
৪. হজরত ইদরিস (আ.) দর্জি ছিলেন।
৫. হজরত জাকারিয়া (আ.) সুতার (কাঠ মিস্ত্রি) ছিলেন।
৬. হজরত ইবরাহিম (আ.) রাজমিস্ত্রি ছিলেন।
৭. হজরত ইসমাঈল (আ.) রাজমিস্ত্রির সহকারী (যোগাড়ী) ছিলেন।
৮. হজরত মূসা (আ.) ছাগলের রাখাল ছিলেন।
৯. আল্লাহর রাসূল হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছাগল চরিয়ে, ব্যবসা করে, কূপ থেকে পানি তুলে ও অন্যের বাগানে কাজ করে উপার্জন করেছেন।
এক ভাষণে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে মানব জাতি! আমি তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছি যে, গোলামের সঙ্গে ভালো আচরণ করবে এবং তাদের কোনো প্রকার কষ্ট দেবে না। তোমরা কি জান না যে, তাদেরও একটি অন্তর আছে, যা কষ্ট পেলে ব্যথা পায় এবং আরাম পেলে আনন্দিত হয়। তোমাদের কি হয়েছে? তোমরা তাদেরকে হীন মনে কর এবং তাদের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর না।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৬ ঘন্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৬
এমএ/