দুনিয়ায় আল্লাহর প্রতিনিধি মানুষের সব কাজের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন। এ বিষয়ে সব সময় মানুষকে সতর্ক থাকতে হয়।
এ হাদিস থেকে জানা যায়, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সচেতন তারা সব সময় নামাজের প্রথম সময় খেয়াল করেন, আর আজান হলেই মসজিদে জামাত ধরার জন্য চলে যান। আর যারা অলস তারা পরে পড়ে নেবো বলে নামাজে বিলম্ব করেন।
যেহেতু প্রত্যেক মানুষেরই আসল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন; তাই হাদিসে বর্ণিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিশ্চিত ও মজবুত উপায় নামাজের প্রথম সময়ে জামাতবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায় করে নিতে হবে। নামাজের ব্যাপারে কোনো ধরনের বিলম্বের কোনো সুযোগ নেই, করাও যাবে না।
দেখুন, সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের কঠিন দিনে তার আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। যখন আল্লাহতায়ালার আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। ওই ছায়াপ্রাপ্তদের মধ্যে একদল হলেন, যারা নামাজের কথা ভোলেন না, সব সময় নামাজের সময় খেয়ালে রাখেন। এক ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পর- অন্য ওয়াক্ত নামাজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এমন মানুষ আল্লাহর আরশের ছায়া পাবেন।
রান্না-বান্না, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, মিটিং-মিছিল বা কল-কারখানার যে কোনো কাজেই মানুষ জড়িত হোক না কেন, নামাজের সময় হলেই নামাজ আদায় করে নিতে হবে। নামাজ শেষে আবার ওই কাজে মনোনিবেশ করবে। পবিত্র কোরআনে কারিমের নির্দেশ এটাই।
এ বিষয়ে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তারপর যখন নামাজ শেষ হয়ে যায় তখন ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো এবং অধিকমাত্রায় আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকো? আশা করা যায়, তোমরা সফলকাম হবে। ’ -সূরা জুমা: ১০
এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আবু জর! কী অবস্থা হবে তোমার, যখন তোমার ওপর এমন শাসনকর্তা হবেন যারা নামাজের প্রতি অমনোযোগী হবে অথবা নামাজকে ওয়াক্তের পরে পড়বে? আমি বললাম, এ অবস্থায় আপনার নির্দেশ কী? তিনি বললেন, নামাজকে যথাসময়ে আদায় করবে, যদি তাদেরকে পুনরায় নামাজ পড়তে দেখ তাহলে তুমিও পুনরায় পড়বে, এটা তোমার জন্য নফল হিসেবে সাব্যস্ত হবে। -সহিহ মুসলিম
জুমার আজানের পরে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম যে কাজটি করতেন তা ছিল খুতবা। তিনি সবসময় খুতবার পরে নামাজ পড়াতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার ফেরেশতারা নামাজের জন্য আগমনকারী ব্যক্তির নাম তাদের আগমনের পরম্পরা অনুসারে লেখতে থাকে। অতঃপর ইমাম যখন খুতবার জন্য দাঁড়ায় তখন তারা নাম লেখা বন্ধ করে দেয় এবং জিকির (অর্থাৎ খুতবা) শুনতে মনোনিবেশ করে। ’
বর্ণিত আয়াতে প্রথমে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর জিকিরের দিকে ধাবিত হও। ’ পরে বলা হয়েছে, ‘তারপর নামাজ শেষ হয়ে গেলে ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ো। ’ এ থেকে জুমার দিনের কাজের যে পরম্পরা বোঝা যায় তা হচ্ছে প্রথম আল্লাহর জিকির এবং তারপর নামাজ, তারপর আবার কাজ।
সূরা জুমায় ‘কেনা-বেচা পরিত্যাগ করো’ কথাটার অর্থ শুধু কেনাবেচাই পরিত্যাগ করা নয়, বরং নামাজের জন্য যাওয়ার চিন্তা ও ব্যবস্থা ছাড়া অন্য আর সব ব্যস্ততা পরিত্যাগ করা। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা কেবল কেনাবেচা পর্যন্তই সীমিত নয়, অন্যান্য সব ব্যস্ততাও এর অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু আল্লাহতায়ালা পরিষ্কারভাবে ওইসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন তাই ইসলামি স্কলাররা এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, জুমার আজানের পর কেনাবেচা এবং অন্য সবরকমের কাজ কারবার হারাম।
বর্ণিত আয়াতের প্রথমাংশে যেমন জুমার আজান শোনার পর সব কাজ কর্ম পরিত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তেমনি আয়াতের পরের অংশে বলা হয়েছে, নামাজ শেষ হওয়ার পর ভূ-পৃষ্ঠে আল্লাহর অনুগ্রহ অর্থাৎ রিজিকের সন্ধানে বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এর পরের আয়াতাংশে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহকে বেশি করতে। ’ অর্থাৎ নিজেদের কাজ-কর্ম ও ব্যবসায়-বাণিজ্যে ব্যস্ত হয়েও আল্লাহর স্মরণ থেকে নিজেকে বিরত রাখা যাবে না। বরং সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণে রাখা এবং তাকেই স্মরণ করতে থাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৯ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৬
এমএ/জেডএম