মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়ের সওয়াব সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত একা পড়ার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি। ’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদিসে আরও বলেছেন, ‘একজন লোক ঘরে নামাজ পড়লে একটি নেকি পান, তিনি ওয়াক্তিয়া মসজিদে পড়লে ২৫ গুণ, জুমা মসজিদে পড়লে ৫০০ গুণ, মসজিদে আকসায় পড়লে ৫০ হাজার গুণ, আমার মসজিদে অর্থাৎ মসজিদে নববীতে পড়লে ৫০ হাজার গুণ এবং মসজিদুল হারাম বা কাবার ঘরে পড়লে এক লাখ গুণ সওয়াব পাবেন।
মসজিদে নামাজ আদায়ে শুধু যে বান্দার আত্মিক উন্নতি হয় তা-ই নয়; সামাজিক ক্ষেত্রেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। জামাতে নামাজ আদায় করায় মুসলমানরা দৈনিক পাঁচবার একত্রে মিলিত হওয়ার সুযোগ পান। ফলে তাদের মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। ফলে একতাবদ্ধ হয়ে সৎ কাজ করার শিক্ষা জামাতে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে অর্জন করা যায়।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নামাজের প্রথম সারি হলো ফেরেশতাদের সারির মতো। তোমরা যদি প্রথম সারির মর্যাদা সম্পর্কে জানতে, তবে তা পাওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তে। মনে রেখো, একা নামাজ পড়ার চেয়ে দুই ব্যক্তির একত্রে নামাজ পড়া উত্তম। আর দুই ব্যক্তির একত্রে নামাজ পড়ার চেয়ে তিন ব্যক্তির একত্রে নামাজ পড়া উত্তম। এভাবে যত বেশি লোকের জামাত হবে, তা আল্লাহর কাছে তত বেশি প্রিয় হবে। ’
জামাতে নামাজ আদায়ের বৈষয়িক উপকারিতাও রয়েছে। মসজিদে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে সবাই অজু করে পাক-পবিত্র হয় এবং নামাজের মধ্যে ওঠা-বসার মাধ্যমে শারীরিক পরিশ্রম হয়ে থাকে। এতে মুসল্লিদের দেহ সতেজ ও সবল হয় এবং মন প্রফুল্ল থাকে। কোনো কাজ করতে গেলে অলসতা আসে না। ফলে নামাজি ব্যক্তি উপার্জনক্ষম হয়। তার সংসারে উন্নতি ঘটে।
একবার এক অন্ধ সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার এমন কেউ নেই, যে আমাকে হাত ধরে মসজিদে আনবে। অতঃপর লোকটি মসজিদে উপস্থিত হওয়া থেকে অব্যাহতি চান এবং ঘরে নামাজ পড়ার অনুমতি চান। হজরত রাসূলুল্লাহ তাকে ঘরে নামাজ পড়ার অনুমতি দিয়ে দেন। লোকটি রওনা করলে রাসূলুল্লাহ তাকে পুনরায় ডেকে পাঠান। লোকটি ফিরে আসেন। রাসূলুল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি আজান শুনতে পাও? লোকটি বলল, হ্যাঁ, শুনতে পাই। রাসূলুল্লাহ বললেন, তাহলে তুমি মসজিদে উপস্থিত হবে। বললেন, ফজর ও এশার নামাজ মুনাফিকদের জন্য অন্যান্য নামাজের তুলনায় অধিকতর ভারী। তোমরা যদি জানতে এ দু’টি নামাজের মধ্যে কী পরিমাণ সওয়াব নিহিত আছে, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও নামাজে উপস্থিত হতে। ’
অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘এশা ও ফজরের নামাজ মুনাফিকদের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। যদি তাদের জানা থাকত যে এই জামাতের সওয়াব কত বেশি, তাহলে জমিনে হেঁচড়িয়ে হলেও এসে তারা শরিক হতো। ’ -তারগিব
জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় মুসল্লিদের দোয়া শিক্ষা দিয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে ঢুকবে, তখন এই দোয়া পড়বে- আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাগুলো খুলে দাও। যখন বের হবে, তখন এই দোয়া পড়বে- আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা। অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। ’ -সহিহ মুসলিম
মসজিদে যাওয়ার ও প্রবেশের পর করণীয় সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ঘর থেকে অজু করে ফরজ নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে যান, তিনি একজন ইহরামওয়ালা হজ সমাধাকারীর নেকি পান। ’ -আহমাদ, আবু দাউদ ও মিশকাত
আরেক হাদিসে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘যখন তোমরা কেউ মসজিদে ঢুকবে, তখন বসার আগে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নেবে। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
অন্য আরেক হাদিসে চমৎকার উদাহরণ দিয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা জান্নাতের বাগানে ঘোরাফেরা করবে, তখন কিছু ফলমূল খেয়ে নিয়ো। সাহাবিরা বললেন, জান্নাতের বাগান কোনটা? তিনি বললেন, মসজিদগুলো। তারা বললেন, এর ফল খাওয়া কেমন? তিনি বললেন, এই তাসবিহগুলো পড়া, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার। ’ –সুনানে তিরমিজি
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে যখন সব মুসল্লি সমবেত হন, তখন পারস্পরিক খোঁজখবর নিতে পারেন এবং তাদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান হয়। ফলে পরস্পরে গড়ে ওঠে ভ্রাতৃত্ববোধ, হৃদ্যতা ও সম্প্রীতি। এভাবে নামাজি ব্যক্তিরা সমাজের ধনী-গরিব একে অন্যের খোঁজখবর নিয়ে পরস্পরের সুখ-দুঃখের সম–অংশীদার হতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৮ ঘন্টা, মে ০৬, ২০১৬
এমএ/