পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও এবং যারা আমার সামনে অবনত হচ্ছে তাদের সঙ্গে তোমরাও অবনত হও। ’ -সূরা বাকারা : ৪৩
একটি সুন্দর ও শান্তিময় সমাজ গড়ার মাধ্যম নামাজ ও জাকাত ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত হয়ে এসেছে।
জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ে আগ্রহ ও উৎসাহ প্রদানে এবং ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সেই সঙ্গে জামাত বর্জন ও জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ে অবহেলাকারীর বিরুদ্ধে ও অবহেলার ক্ষেত্রে সতর্কবার্তা হিসেবে বর্ণিত হয়েছে প্রচুর হাদিস।
ইসলামে কিছু ইবাদত-বন্দেগি সম্মিলিতভাবে করার বিধান রয়েছে। বিষয়টি ইসলামের উত্তম বৈশিষ্ট্যসমূহের অন্যতম। যেমন, হজপালনকারীরা হজের সময় সম্মিলিতভাবে হজ পালন করেন, বছরে দু’বার ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় কোরবানি ঈদে মিলিত হন এবং প্রতিদিন পাঁচবার জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে একত্রিত হন।
তবে জামাতে নামাজের ক্ষেত্রে ফজরের নামাজের সময় মসজিদে উপস্থিত মুসল্লির হার খুবই হতাশাজনক। এমন উপস্থিতি মুসলমানদের জন্য লজ্জার বিষয়ই বটে। সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ।
এখানে ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায়ে সহায়ক কিছু পরামর্শ প্রদান করা হলো। যেগুলো পালন করলে ফজরের সময় ঘুম উঠা সহজ হবে। কৌশলগুলো হলো-
১. মনোবল দৃঢ় করা এই ভেবে যে, ‘আমি অবশ্যই ফজরের নামাজ আদায় করবো। ’
২. দেরি করে ঘুমাতে যাওয়া যাবে না। অনেক সময় জরুরি কাজ শেষ করে দেরিতে ঘুমানোর ফলে ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠা অসম্ভব হয়ে যায় কিংবা আর ঘুম থেকে ওঠা হয় না।
৩. দেরি করে না ঘুমালে ফজরের সময় উঠাটা সহজ হয়। দেরিতে ঘুমালে অনেক সময় অ্যালার্মটাও শুনা যায় না।
৪. যদি ফজরে উঠতে পারেন তবে দেখবেন কিছু জরুরি কাজ সবার আগেই করে শেষ করতে পারছেন।
৫. প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হবে। নামাজ আদায় করার পর খুব ঘুম পাবে। সে ক্ষেত্রে একটু ঘুমিয়ে নিলে মন্দ হয় না। আশা করা যায়, এক সপ্তাহের মাঝেই ঠিক হয়ে যাবে।
৬. তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গিয়েও ঘুম না এলে একটু শারীরিক পরিশ্রম করে নিতে পারেন। দেখা গেছে, যদি একটু কঠিন পরিশ্রমের কাজ করা যায় তবে ঘুমাতে গেলেই তাড়াতাড়ি ঘুম আসে।
৭. যদি অ্যালার্ম শুনতে পান তবে, ‘আর একটু ঘুমিয়ে নেই’ এটা ভেবে শুয়ে থাকবেন না। কারণ- ‘আরেকটু ঘুমিয়ে নেই’ এটা করতে যেয়ে ফজর নামাজ অনেকেই কাজা করে ফেলেন।
আরও পড়ুন: উন্নত জীবনবোধ সৃষ্টি হবে যেভাবে
৮. বাসার অন্য কেউ যদি নিয়মিত ফজরের নামাজ আদায় করে থাকেন, তবে তাকে বলতে পারেন ডেকে দেওয়ার জন্য। এটা খুবই সহজ পদ্ধতি।
৯. বিদ্যুৎ সঙ্কট চলছে এমন দেশে আপনি অযথা রাত জেগে বিদ্যুৎ অপচয় করছেন! অথচ রাত জেগে যে কাজ আপনি করছেন তা ভোরে ওঠে সূর্যের আলোতেও করতে পারতেন, যা চোখের জন্যও ভালো, শরীরের জন্যও ভালো।
১০. অযথা বিদ্যুৎ অপচয় করলে তার জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিও করতে হবে।
১১. ফজরের নামাজ অন্য নামাজগুলোর মতোই ফরজ এবং তা যথাসময়ে আদায় করাটাও ফরজ।
১২. জামাতে নামাজ আদায় করতে না পারলে, নিজে নিজে একটা শাস্তি ঠিক করুন। পরে সেই শাস্তি কার্যকর করুন। যেমন- একদিন নামাজ না পড়তে পারলে ২০ টাকা জরিমানা, পরের দিনও এমন হলে ৫০ টাকা। এবার জরিমানারটা নিজ দায়িত্বে আদায় করুন- দেখবেন ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠা সহজ হয়ে গেছে।
১৩. পরকাল বিশেষ করে কবরের শাস্তির কথা মনে করুন। নামাজে অবহেলাকারীর জন্যও কবরে যে শাস্তি দেওয়া হবে-
ক. কবর এমন সঙ্কীর্ণ হবে যে তার এক পাশের হাড্ডি অপর পাশের হাড্ডির সঙ্গে মিলিত হয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে।
খ. কবরে দিনরাত সবসময় ৯৯টি সাপ কামড় দেবে। যার বিষ এত বিষাক্ত যে দুনিয়াতে ওই সাপ শ্বাস ছাড়লে কিয়ামত পর্যন্ত কোনো গাছপালা আর দুনিয়ায় জন্মাতো না।
গ. আল্লাহ নামাজে অবহেলাকারীর কবরে একজন আজাবের ফেরেশতা নিযুক্ত করবেন। তার হাতে লোহার দণ্ড থাকবে। সে মৃত ব্যক্তিকে সবসময় লোহার দণ্ড দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। যে দণ্ড দিয়ে দুনিয়ায় পাহাড়ে আঘাত করলে পাহাড় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে।
বস্তুত একজন মুমিন কখনও নামাজকে নিজের অধীনে নিতে পারে না, বরং তাকেই নামাজের অধীন থাকতে হয়। নামাজকে সব কাজের ওপরে রাখতে হবে, নিজের ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত কোনো কাজকে নামাজের ওপর রাখা যাবে না- আগে নামাজ পরে কাজ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৬
এমএ/