ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

রোজার প্রস্তুতি শুরু হোক এখন থেকেই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৫ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৬
রোজার প্রস্তুতি শুরু হোক এখন থেকেই

রমজান মাস ইবাদতের বসন্তকাল। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগাতে ইবাদতে মশগুল থাকেন।

রমজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই সারা মাসের জন্য শয়তানকে বেড়িবদ্ধ করা হয়। সে কারণে রমজানের বরকতস্বরূপ দ্বীনি পরিবেশের সৌন্দর্য পরিলক্ষিত হয়। আর এ জন্যই রমজান মাস মানুষের মন ও আত্মাকে পরিশোধন করার শ্রেষ্ঠ সময়।

মানুষ তার পেট ও লজ্জাস্থানের চাহিদা মেটানোর তাড়নায় গুনাহ করে। তাই তাকওয়া অর্জনের নিমিত্তে এই দুই ধরনের গুনাহের উৎসকে দুর্বল করতে আল্লাহতায়ালা রোজার বিধান দিয়েছেন। রোজার দাবি তাকওয়া অর্জন। আর এ জন্য সব ধরনের গুনাহ থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। এতে আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটবে, চারিত্রিক গুণাবলি উন্নত হবে, নিজেকে রক্ষা করতে পারবে অশুভের বিরুদ্ধে। একজন রোজাদার রমজান মাসে তার প্রতিটি অঙ্গ- বিশেষ করে হাত, পা, চোখ, মুখ, উদরকে অবৈধ ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রেখে সংযমী হন। ইচ্ছাশক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে দৈহিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে পরিচালিত করার শিক্ষা পান।

রোজা ধৈর্য, সংযম ও নৈতিক উৎকর্ষের জন্ম দেয়। শিষ্টাচারের মাধ্যমে নৈতিক চরিত্র গঠন রমজানের সিয়াম সাধনার একটি মৌলিক শিক্ষা। রমজানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুমিনবান্দা হিংসা-বিদ্বেষ, কামনা-বাসনা, লোভ-লালসা প্রভৃতি অন্যায় আচরণ পরিহার করে থাকেন। ফলে কুপ্রবৃত্তির সব দেয়াল ভেঙে যায়। খারাপের ইচ্ছা নষ্ট হয়ে যায়। অন্তর নির্মল ও সুন্দর হয়।

রোজার মাসে আল্লাহতায়ালা জান্নাতের দরজা খুলে দেন, জাহান্নামের দরজা বন্ধ রাখেন এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে রাখেন। ফলে ইবাদত, জিকির-আজকার, কোরআন তেলাওয়াত, কৃচ্ছ্রতা সাধন ও আল্লাহর একনিষ্ঠ আনুগত্যের স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রোজার মাধ্যমে মানুষের আত্মিক, দৈহিক, নৈতিক ও সামাজিক পরিশুদ্ধি ঘটে। আসলে আল্লাহতে যার পূর্ণ ঈমান রয়েছে, যারা খোদাভীরু শুধু তারাই রোজা রাখতে সক্ষম হন। এভাবে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাসের কারণেই রোজাদার খাঁটি মুমিন বান্দায় পরিণত হন। তাই রমজানের বড় প্রাপ্তি তাকওয়া। একজন আল্লাহর প্রেমিকের সওম হয় সর্বপ্রকার পাপাচার থেকে মুক্ত। প্রকৃত রোজাদার পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি ছাড়াও শিরক, কুফর, বিদআত, হিংসা-লোভ, পরচর্চা ও পরনিন্দা থেকেও আত্মাকে পবিত্র রাখেন, আল্লাহর প্রেমরঙে হৃদয় রাঙান। কেবল তখনই একজন রোজাদার খুঁজে পান নিজেকে, নিজের সত্তা ও আত্মপরিচয়কে। রমজানে চরিত্র মাধুর্যমণ্ডিত করার সময়, আত্মাকে শানিত করার সময়, কুপ্রবৃত্তিকে দমন করার সময়, অন্তরকে ধুয়ে মুছে পূত-পবিত্র করে আধ্যাত্মিকতার নূর জ্বালানোর সর্বোত্তম সময়। এ মাসে আমাদের চলার পথ ও পদ্ধতি কোরআন ও সুন্নাহর ছাঁচে গড়ে তোলার এবং সালাফে সালেহিনদের নমুনায় ঢেলে সাজানোর মোক্ষম সময়। বস্তুত ‘মানুষের চরিত্র গঠনে রোজা খুবই ফলদায়ক ব্যবস্থা। ’

চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, ‘রোজা মানুষের মনের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। যেমন- কর্মে মনোযোগ আসে, পশুত্ব দূরীভূত হয়, সমাজ গঠনে সহায়তা করে। ’ আর ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, ‘সিয়াম মুসলমানদের কেবল পরকালের মুক্তির পথ দেখায় না, নৈতিক চরিত্র গঠনেও এর দারুণ ভূমিকা রয়েছে। ’

রোজা ভালো মনের মানুষ গঠনে অবিশ্বাস্য ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের সুস্থ সুন্দর দেহ-মন ও স্বাস্থ্য নিয়ে অতি সহজ ও শান্তিময় জীবন গড়ার ব্যবস্থা হিসেবে মহান আল্লাহতায়ালা রোজা ফরজ করেছেন। ‘তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যাতে তোমরা খোদাভীরু হতে পারো। ’ -সূরা বাকারা : ১৮৩

মূলত ভালো মনের ভালো মানের মানুষ গঠনে খোদাভীরুতার কোনো বিকল্প নেই। তাই আসুন পবিত্র মাহে রজমানে পুরো মাসের রোজা রাখার মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করি। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘন্টা, মে ২৮, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।