বেহেশতের মাঝে সবচেয়ে উত্তম বেহেশত হলো জান্নাতুল ফেরদাউস। জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী হতে হলে একজন মুমিনকে কি কি গুণের অধিকারী হতে হবে তা পবিত্র কোরআনে এভাবে বলা হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে (সেসব) ঈমানদার মানুষেরা মুক্তি পেয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাজে একান্ত বিনয়াবনত হয়, যারা অর্থহীন বিষয় থেকে বিমুখ থাকে, যারা (রীতিমতো) জাকাত প্রদান করে, যারা তাদের যৌন অঙ্গসমূহের হেফাজত করে, তবে নিজেদের স্বামী-স্ত্রী কিংবা (পুরুষদের বেলায়) নিজেদের অধিকারভুক্তদের ওপর (এ বিধান পযোজ্য) নয়, (এখানে হেফাজত না করার জন্যে) তারা কিছুতেই তিরস্কৃত হবে না, অতঃপর (বিধিবদ্ধ উপায়) ছাড়া যদি কেউ অন্য কোনো পন্থায় যৌন কামনা চরিতার্থ করতে চায়, তাহলে তারা সীমালঙ্ঘনকারী বলে বিবেচিত হবে।
কোরআনে কারিমের অন্যত্র আল্লাহতায়ালা অারও বলেন, ‘যারা আল্লাহতায়ালার ওপর ঈমান এনেছে এবং সে অনুযায়ী নেক আমল করেছে, তাদের মেহমানদারীর জন্যে জান্নাতুল ফেরদাউস সাজানো রয়েছে। সেখানে তারা চিরদিন থাকবে, সেদিন তারা সেখান থেকে অন্য কোথাও যেতে চাইবে না। ’ –সূরা কাহাফ: ১০৭-১০৮
জান্নাতিরা জান্নাতে ভাই ভাই হিসেবে থাকবেন
জান্নাতের মধ্যে কোনো প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ বা দলাদলি থাকবে না। জান্নাতী লোকেরা সেখানে পরস্পর ভাই ভাই হিসেবে বসবাস করবেন। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কথাটি এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘যারা আল্লাহতায়ালাকে ভয় করে তারা সেদিন অবশ্যই জান্নাত ও ঝর্ণাধারায় বহুমুখী নিয়ামতে অবস্থান করবে। এই বলে তাদের অভিবাদন জানানো হবে তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে সেখানে প্রবেশ করো। তাদের অন্তরে ঈর্ষা-বিদ্বেষ যাই থাক আমি সেদিন তা দূর করে দেবো, তারা একে অপরের ভাই হয়ে পরস্পরের মুখোমুখি সেখানে অবস্থান করবে। সেখানে তাদের কোনো রকম অবসাদ স্পর্শ করতে পারবে না, আর তাদের সেখান থেকে কোনো দিন বেরও করে দেওয়া হবে না। ’ -সূরা আল হিজর: ৪৫-৪৮
জান্নাতিদের মেহমানদারী
জান্নাতের মেহমানদারী কেমন হবে তা দুনিয়ার ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। সেখানে সুখের কোনো সীমা-পরিসীমা থাকবে না। জান্নাতী লোকেরা যখন যা চাইবে তখন তাই প্রদান করা হবে। মনে যা আকাঙ্খা করবে তাই তাদের সামনে এসে হাজির হবে। জান্নাতি লোকদের মেহমানদারীর কিছু বর্ণনা পবিত্র কোরআন শরিফে নিম্নোক্তভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘জান্নাতি লোকেরা থাকবে স্বর্ণখচিত আসনের ওপর, তার ওপর তারা একে অপরের মুখোমুখি আসনে হেলান দিয়ে বসবে। তাদের চারপাশে তাদের সেবার জন্য চির কিশোরদের একটি দল ঘুরতে থাকবে, পানপাত্র ও সূরাভর্তি পেয়ালা নিয়ে এরা প্রস্তুত থাকবে, সেই সূরা পান করার কারণে তাদের কোনো শিরপীড়া হবে না, তারা কোনো রকম নেশাগ্রস্তও হবে না, সেখানে আরও থাকবে তাদের নিজ নিজ পছন্দমতো ফলমূল, থাকবে তাদের মনের চাহিদা মোতাবেক রকমারী পাখির গোশত; সেবার জন্যে মজুদ থাকবে সুন্দর চক্ষুধারী হুরগণ, তারা হবে সুন্দর-সুশ্রী, লুকিয়ে রাখা মুক্তার মতো। এর সব কিছুই হচ্ছে তাদের সে সব কাজের পুরস্কার, যা তারা দুনিয়াতে করে এসেছে। সেখানে তারা কোনো অর্থহীন প্রলাপ বা কথাবার্তা শুনতে পাবে না, সেখানে বরং বলা হবে শুধু শান্তি, নিরবচ্ছিন্ন শান্তি। অতঃপর আসবে ডান পার্শ্বের লোক, আর কারা এ ডান পার্শ্বের লোক, তারা অবস্থান করবে এমন এক উদ্যানে যেখানে থাকবে শুধু কাঁটাবিহীন বরই গাছ, থাকবে কাঁদি কাঁদি কলা, শান্তিদায়িনী ছায়া দূর-দূরান্ত পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে, আর থাকবে প্রবাহমান ঝর্ণাধারার পানি, পর্যাপ্ত পরিমাণ ফলমূল, এমন সব ফল যার সরবরাহ কখনও শেষ হবে না এবং যার ব্যবহার কখনও নিষিদ্ধ করা হবে না, আর থাকবে উঁচু উঁচু বিছানা; আমি তাদের সাথী হুরদের বানিয়েছি বানানোর মতো করেই, তাদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমি তাদের চিরকুমারী করে রেখেছি, তাদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা হবে সমবয়সের প্রেম সোহাগিনী, এগুলো হচ্ছে প্রথম দলের সব ডানপার্শ্বের লোকদের জন্যে। ’ -সূরা ওয়াকিয়া: ১৫-৩৮
জাহান্নামের চিত্র
জান্নাতি লোকেরা বেহেশতে পাবে অতীব আরামদায়ক ও পরম সুখের আতিথেয়তা। অপরপক্ষে জাহান্নামিরা সেখানে পাবে অতিকষ্টদায়ক ও অত্যন্ত পীড়াদায়ক আতিথেয়তা। পবিত্র কোরআনে জাহান্নামি লোকদের আতিথেয়তার কিছু নমুনা নিম্নোক্তভাবে দেওয়া হয়েছে, ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, অবশ্যই আগের ও পরের সব লোককেই একটি নির্দিষ্ট দিনে একটা নির্দিষ্ট সময়ে জড়ো করা হবে। অতঃপর কাফেরদেরকে বলা হবে ওহে পথভ্রষ্ট ও এ দিনের আগমন মিথ্যা প্রতিপন্নকারী ব্যক্তিরা, দুনিয়ায় যা অর্জন করেছ তার বিনিময়ে আজ তোমরা ভক্ষণ করবে ঝাক্কুম নামক একটি গাছের অংশ, অতঃপর তা দিয়েই তোমরা তোমাদের পেট ভর্তি করবে, তার ওপর তোমরা পান করবে জাহান্নামের ফুটন্ত পানি, তাও আবার পান করতে থাকবে মরুভূমির তৃষ্ণার্ত উটের মতো করে, এ হবে কিয়ামতে তাদের যথার্থ মেহমানদারী। ’ -সূরা ওয়াকিয়া: ৪৯-৫৬
কোরআনে কারিমের অন্যত্র আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তার একটু পেছনেই রয়েছে জাহান্নাম, (সেখানে) গলিত পুঁজ জাতীয় পানি পান করানো হবে, সে অতি কষ্টে তা গলাধঃকরণ করতে চাইবে, কিস্তু গলাধঃকরণ করা তার পক্ষে কোনো মতেই সম্ভব হবে না, (উপরন্তু) চারদিক থেকেই তার মৃত্যু আসবে, কিন্তু সে কোনোমতেই মরবে না, বরং তার পেছনে থাকবে (আরো) কঠোর আজাব। ’ -সূরা ইবরাহিম: ১৬-১৭
কিয়ামতের সেই ভয়াবহ দিনে মানুষ পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করবে; কিন্তু এ দোষারোপ কোনো কাজে আসবে না। দুনিয়ায় তারা যাদের আনুগত্য করেছিল, যাদের কারণে তারা আজ জাহান্নামে যাচ্ছে, তখন আফসোস করে বলতে থাকবে, যদি আমাদেরকে আরেকবার সুযোগ দেওয়া হতো, তা হলে তারা ওইসব লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেখিয়ে দিতো। কিন্তু তাদের সেদিনের আফসোসের আর কোনো মূল্য থাকবে না। জাহান্নামের আজাব থেকে বের হওয়ার তাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।
পবিত্র কোরআনে একথাগুলো এভাবে বলা হয়েছে, ‘সেদিন ভয়াবহ শাস্তি দেখে হতভাগ্য লোকেরা দুনিয়ায় যাদের তারা মেনে চলতো, তাদের অনুসারীদের সম্পর্কচ্ছেদের কথা বলবে বলবে, আমরা তো এদের চিনিই না, এদের সঙ্গে তাদের সব সম্পর্ক সেদিন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। যারা তাদের অনুসরণ করেছে তারা সেদিন বলবে, আবার যদি একবার আমাদের জন্যে পৃথিবীতে ফিরে যাবার সুযোগ থাকতো, তাহলে আজ যেমনি করে তারা আমাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে, আমরা সেখানে গিয়ে তাদের সাথে যাবতীয় সম্পর্কচ্ছেদ করে আসতাম, এভাবেই আল্লাহতায়ালা তাদের কর্মকান্ডগুলো তাদের ওপর একরাশ লজ্জা ও আক্ষেপ হিসেবে দেখাবেন; এরা কখনও সেই জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। ’ -সূরা বাকারা: ১৬৬-১৬৭
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘন্টা, মে ৩১, ২০১৬
এমএ/