দোয়া হলো কোনো কিছুর জন্য প্রার্থনা করা। অর্থাৎ কোনো অভাব বা প্রয়োজন পূরণের জন্য আবেদন করা।
দোয়া করা ও তাসবিহ পাঠের উত্তম সময় হলো ওয়াক্তিয়া নামাজের পরের সময়। তাসবিহ পাঠের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ করার পাশাপাশি ইবাদতকারী আল্লাহতায়ালার শান ও মান বর্ণনা করেন। আর দোয়ার মাধ্যমে বান্দার চূড়ান্ত বিনয়, আকুতি ও অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়।
নামাজ শেষে তাসবিহ পাঠের জন্য কোরআনে কারিমে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘এরপর যখন নামাজ শেষ করবে, তখন দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে ৷ যখন তোমরা নিরাপদ হবে, তখন যথাযথভাবে নামাজ আদায় করবে৷ নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা মুসলমানদের জন্য ফরজ। ’ সূরা নিসা: ১০৩
কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ হয়েছে, আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে প্রশ্ন করে, তখন বলে দিন আমি তো কাছেই রয়েছি। আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে, আমি তার আহবানে সাড়া দেই। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমাতে বিশ্বাস স্থাপন করুক যাতে তারা ঠিক পথে চলতে পারে, আর পূর্ণতা লাভ করে। ’ -সূরা বাকারা: ১৮৬
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জোবায়ের (রা.) থেকে বর্ণিত হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজের সালাম ফেরাতেন, উচ্চঃস্বরে বলতেন- ‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই; তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই, রাজত্ব তারই এবং তারই সব প্রশংসা। তিনি সর্বশক্তিমান। আল্লাহর ব্যতীত আমাদের কোনো সাহায্যকারী নেই, কোনো উপায় ও শক্তি নেই। আল্লাহ ব্যতীত মাবুদ নেই। আমরা তাকে ব্যতীত আর কাউকে সেজদা করি না। তারই নেয়ামত, তারই অনুগ্রহ, তারই জন্য উত্তম প্রশংসা। আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। ’ -সহিহ মুসলিম শরিফ
নামাজ শেষ করার পর তাসবিহ পাঠ করলে বিপদাপদ দূর হয়। অন্তরের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। তাসবিহ পাঠকারীর মনের প্রশান্তি ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। হাদিসে হজরত কাব ইবনে উজরা (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে পাঠ করার জন্য কতিপয় উত্তম বাক্য রয়েছে, সেগুলো যারা পাঠ করবে তারা কখনও নিরাশ হবে না। ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার। ’ –সহিহ মুসলিম
তাসবিহ হলো গোনাহ মাফের দাওয়া। নামাজ শেষে তাসবিহ পাঠ করলে গোনাহ মাফ হয়। তাসবিহ পাঠের ফলে আল্লাহতায়ালা খুশি হয়ে বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে আল্লাহ তার সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন, যদিও গোনাহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। ’ –সহিহ মুসলিম
নামাজ শেষে তাসবিহ পাঠ করলে সওয়াবও বেশি পাওয়া যায়। হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়েছে, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর জিকির করেছে, তারপর দু’রাকাত নামাজ পড়েছে, তার জন্য হজ ও উমরার সওয়াবের ন্যায় সওয়াব রয়েছে।
দোয়া কবুলের জন্যে যে কয়েকটি মুহূর্ত রয়েছে তন্মধ্যে নামাজের পরের সময়কে দোয়া কবুলের জন্য একটি উত্তম সময় বলে অভিহিত করা হয়েছে। নামাজের সালাম ফিরিয়ে দোয়া করা হলে, ওই দোয়া কবুল হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে। হজরত আবু বাহেলি (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন সময় দোয়া কবুল হয়? তিনি বললেন, ‘শেষ রাতে এবং ফরজ নামাজের পর। ’ –সুনানে তিরমিজি
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘন্টা, জুন ০১, ২০১৬
এমএ/